বরিশালে রণক্ষেত্র

আদালত পরিচালনাকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুরো টার্মিনাল এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। সং ঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক ও শ্রমিকসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের একটি পিকআপ ভাংচুর করেছে। আহতদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য রহমান হোসেন (২৫), রফিকুজ্জামান টুকু (৩০), মিজানুর রহমান (৪০) ও নান্নু মিয়াকে (৩৫) আশংকাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিন বিকেলে বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় প্রেরন করা হয়। গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান ও ডিএসবি সদস্য নান্নু মিয়ার অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনায় পুলিশ চিকিৎসাধীন ১০ জন আহত শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে।

বরিশাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও শ্রমিকলীগ নেতা আফতাব হোসেন জনকন্ঠকে জানান, নির্বার্হী ম্যাজিষ্টেট কামরুজ্জামান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে এগারোটার দিকে নতুল্লাবাদ বাসষ্ট্যান্ডে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যানবাহন আটক করে জরিমানা আদায় করতে ছিলো। এ সময় জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক শাহ আলম ফকির জরিমানা কম করার জন্য ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কতিপয় পুলিশ সদস্যরা শ্রমিক নেতা শাহ আলমকে বেদম মারধর করে। এ ঘটনায় শ্রমিক-পুলিশ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে পুরো বাসটার্মিনাল এলাকা রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। সংঘর্ষে শ্রমিক, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত শ্রমিক নেতা শাহ আলম ফকির, ইসলামিক টেলিভিশনের বরিশাল প্রতিনিধি ফিরোজ মোস্তফা, শ্রমিক ওয়াসিম মালী, রানা আকন, মোঃ সাদেক আলী, গোবিন্দ কর্মকার, মনির শিকদার, পরিমল হাজরা, হযরত আলী, আতিকুর রহমান, মিরাজসহ অন্যান্য আহতদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল ও নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে র‌্যাব-৮’র হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসে। অপরদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ হামলার ঘটনায় শ্রমিক ওয়াসিম মালী, রানা আকন, মোঃ সাদেক আলী, গোবিন্দ কর্মকার, মনির শিকদার, পরিমল হাজরা, হযরত আলী, আতিকুর রহমান, মিরাজসহ ১০জনকে গ্রেফতার করেছে। এরা সকলেই আহত হয়ে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গ্রেফতারকৃতদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দেয়া না হলে শ্রমিকরা অনিদৃষ্টকালের জন্য বরিশাল থেকে ছেড়ে যাওয়া সকল রুটের যানবাহন চলাচল অনিদৃষ্টকালের জন্য বন্ধের হুশিয়ারী দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ডাঃ আব্দুর রহিম Gournadi.com কে জানান, শ্রমিক পক্ষের মধ্যে এখনো চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে বাস টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। হামলা ও পুলিশের পিকআপ ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত পুরো টার্মিনাল এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

 

রিপোর্ট করছেন : শুভব্রত দত্ত / এম.মিরাজ হোসেন / আহম্মেদ জালাল ও খোকন আহম্মেদ হীরা