বোম্বের পতিতাপল্লীতে দেশের শতাধিক কিশোরী

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নানা প্রলোভেন আর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এসব তরুণীদের কৌশলে পাচার করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছে। পতিতা পল্লীগুলোতে দেহ ব্যবসার জন্য তরুণীদের শারীরিক নির্যাতন সহ নানা প্রকার নির্যাতন চালানো হয়।

চার মাস ওই অভিশপ্ত জায়গা আর প্রায় চার বছর কারাজীবন শেষে শুক্রবার দেশে ফিরে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে পাচার হওয়া এক তরুণী।

 

তার নাম তানিয়া আকতার (২০)। ২০০৬ সালে ১৬ বছর বয়সে তাকে ভারতে পাচার করা হয়েছিল। শনিবার দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় বসে ভারতে অবস্থানকালীন সেই নির্মম ও বিভীষিকাময় লৌমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয় তানিয়া।

তানিয়া পুলিশকে জানিয়েছে, তার চাচাতো বোন বকুল সহ আরো অনেক হতভাগ্য মেয়ে বোম্বে পতিতালয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ফতুল্লা থানার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

দেশে ফিরে এসে তানিয়া এলাকাবাসীকে পুরো ঘটনাটি জানালে শনিবার সকালে বিক্ষুব্ধ জনতা নারী পাচারের অভিযোগে ফতুল্লা থানার পঞ্চবটি এলাকার আলমাস আলীর ছেলে রুবেলের বাড়ি ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে তাকে গণধোলাই দেয় জনতা।

খবর পেয়ে পুলিশ রুবেলকে উদ্ধার করে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে পুত্র গ্রেপ্তারের খবরে বিকালে রুবেলের বাবা আলমাস আলী স্টোক করে মারা গেছে বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহার ও তানিয়ার প্রদত্ত বক্তব্য থেকে জানা গেছে, তানিয়ার বাবার নাম রাজিউদ্দিন। ফতুল্লা থানার পঞ্চবটি এলাকার গুলশান রোডের সুমন মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকে তারা। একই এলাকাতে বসবাস করেন তানিয়ার চাচা মোসলেমউদ্দিন। তানিয়া ও তার চাচাতো বোন বকুল একটি রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো।

২০০৬ সালের শুরুর দিকে বকুলের সঙ্গে একই এলাকার আলমাস আলীর পুত্র রুবেলের সঙ্গে প্রেম করে। এক পর্যায়ে রুবেল বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রেজিষ্ট্রির কথা বলে বকুলকে সাতীরা এলাকায় নিয়ে যায়। ওই সময়ে বকুলের সঙ্গে যায় তানিয়াও। রুবেল তাদের নিয়ে সাতীরা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় নিয়ে যায়। সেখানে ইলিয়াস নামে এক লোকের বাড়িতে যায় তানিয়া, রুবেল ও বকুল। একদিন দুপুর বেলায় তানিয়া ও বকুল খাবার খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফিরে তারা দেখতে তারা দেখতে পায় একটি বাড়িতে অবস্থান করছে। পরে তারা জানতে পারে ওই বাড়িটি ভারতের বোম্বে এলাকার একটি প্রসিদ্ধ পতিতালয়।

তখন থেকে তারা আর রুবেলের হদিস পায়নি। পরে তারা জানতে পারে রুবেল ১ লাখ টাকায় দুইজনকে ইলিয়াসের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।

তানিয়া জানান, পতিতাপল্লীর বাড়িতে অবস্থানকালীন দেহ ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য তানিয়া ও বকুলকে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। গায়ে গরম পানি ঢেলে, বে­ড দিয়ে জখম সহ ওই ত স্থানে লবন দিয়ে নির্যাতন করা হত। ওই পতিতা পল্লীতেই ৬০-৬৫ জন বাংলাদেশী কিশোরীদের সঙ্গে তানিয়ার পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে ফতুল্লা ও এর আশপাশ এলাকার ১০-১২ জনও রয়েছে। তবে তাদের নাম পরিচয় বলতে পারেনি তানিয়া।

এসব কিশোরীদের বেশীরভাগই নানা কাজের কথা বলে পাচার করা হয়েছিল। তাদের বেশীরভাগের বয়স ১৮-২৫ এর মধ্যে। ৪ মাস পতিতালয়ে অবস্থানের পর তানিয়া পালিয়ে পতিতালয় থেকে বেরিয়ে যায়। পথিমধ্যে সে ভারতের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।

৪ বছর বোম্বে কারাগারে জেল খাটার পর গত মঙ্গলবার সে মুক্ত হয়। জেল থেকে বের হবার পর তাকে পুলিশ হেফাজতে কলকাতা পুলিশের কাছে পৌছে দেয়া হয়। কলকাতা পুলিশ তানিয়াকে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। শুক্রবার সকালে বিএসএফ পুশব্যাকের মাধ্যমে তানিয়াকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) জীবন কান্তি সরকার জানান, তানিয়া বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছে। মামলার প্রেক্ষিতে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাচারকারী চক্রের বাকী সদস্যের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।