বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রন নিতে মরিয়া বিসিসি মেয়র হিরন

সেখানে শ্রমিক পুলিশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের পরই সাবেক চীফ হুইফ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র ঘনিষ্ঠজন জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আফতাব হোসেনের বাস টার্মিনালের কর্তৃত্ব ভেস্তে দিতে কলকাঠি নাড়েন মেয়র হিরন।

মেয়র হিরনএদিকে বুধবার সকাল থেকেই মেয়র হিরন সমর্থকরা টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে আফতাব বিরোধী মিছিল সমাবেশ করে আসছে। তারা আফতাব মুক্ত টার্মিনালের দাবি তোলেন। এরআগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরতলীর কাশিপুরের সাধারন জনগন শ্রমিক নেতা আফতাবের ফাঁসির দাবীতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। মিছিলটি কাশিপুর বাজার থেকে শুরু করে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এসে সমাবেশে মিলিত হয়েছে। আফতাবের বিচারের দাবিতে মিছিল বের করার সঙ্গে একাত্নতা ঘোষনা করেছে মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।

শ্রমিক নেতা আফতাব হোসেন মোবাইল ফোনে এ প্রতিনিধির কাছে বলেন, মেয়র শওকত হোসেন হিরনই নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলেছেন। তিনি বলেন অবৈধ পন্থায় মেয়র হিরন টার্মিনাল দখলে নিতে পারবে না। শ্রমিক নেতা আফতাব বলেন তিনি আ’লীগের মধ্যে গ্রুপিং রাজনীতির সৃষ্টি করে সংগঠনকে বিতর্কিত করে চলছেন। তিনি আরো বলেন মেয়র হিরন বলেছেন আমি নাকি র‌্যাবের ক্রসফায়ারের তালিকাভুক্ত। তিনি এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন রেখে বলেন আমি র‌্যাবের ক্রসফায়ারের লিস্টেট হলাম এ বিষয়টি মেয়র হিরন জানল কিভাবে? তাহলে মেয়রই ক্রসফায়ারের তালিকায় আমার নাম দিয়েছে।

বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন বলেন, মহানগরীতে একের পর অপ্রতিকর ঘটনা ঘটিয়ে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে আসছে আফতাব হোসেন। তিনি বলেন এই আফতাব কর্পোরেশনের ম্যাজিষ্টেট’র গায়ে হাত তুলেছে। তিনি কি বরিশালের কুতব। মেয়র আরো বলেন, যারা সত্যিকারের শ্রমিক ও বাস মালিক তারাই টার্মিনাল নিয়ন্ত্রন করবে। এর বাইরে কোন কুতুবের স্থান টার্মিনালে ঠাঁই হবে না। মেয়র হিরন আরো বলেন, আফতাব যে অন্যায় অপকর্ম করে আসছে তাতে সে ক্রসফায়ারের লিস্টেট হতে পারে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে নির্বার্হী ম্যাজিষ্টেট কামরুজ্জামান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল ইসলাম নথুল্ল­াবাদ বাস টার্মিনালে ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যানবাহন আটকিয়ে জরিমানা আদায় করতে ছিল। ওই সময়ে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক শাহ আলম ফকির জরিমানা কম করার জন্য অনুরোধ করে। এতে তেলে বেগুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ভ্রাম্যমান আদালত। এরপরই পুলিশ শ্রমিক নেতা শাহ আলমকে বেদম মারধর করে। এ ঘটনায় শ্রমিক-পুলিশ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকবার উভয় গ্রুপ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ৩ পুলিশ সদস্য, ৫ জন সাংবাদিক ও শ্রমিকসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন। আহতদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য রফিকুজ্জামান টুকু, মিজানুর রহমান ও নান্নু মিয়াকে আশংকাজনক অবস্থায় বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় প্রেরন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই শ্রমিক এবং সংর্ঘষে আহত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে ওয়াসিম মালী, রানা আকন, মোঃ সাদেক আলী, গোবিন্দ কর্মকার, মনির শিকদার, পরিমল হাজরা, হযরত আলী, আতিকুর রহমান ও মিরাজ। নথুল্ল­াবাদ বাসটার্মিনালে শ্রমিক-পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের পরই কথা উঠে পুলিশের ওপর হামলা চালাতে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আফতাব হোসেন প্রকাশ্য ইন্ধন দিয়েছেন। তিনি শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে তোলায় এরকম রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। সংর্ঘষের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। এরমধ্যে একটি দ্রুত বিচার আইন ও অপরটি পুলিশ আক্রান্ত আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দুটিতে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারন সম্পাদকসহ ৫’শ জনকে আসামি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন ও শ্রমিক নেতা আফতাব হোসেনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লড়াই চলে আসছে।