তিন লক্ষ টাকায় তিন বছরের ভাগ্নিকে বিক্রি

টাকাটাকার বিনিময়ে ৩ বছরের ভাগ্নিকে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিয়ামতি ইউনিয়নের সত্তার ফরাজীর মেয়ে মুন্নি আক্তারের সাথে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের সেকান্দার খার ছেলে জিয়া খার সাথে কয়েক বছর পূর্বে বিবাহ হয়। তাদের ঘরে দু’টি সন্তান জন্ম লাভ করে। দুই বছর যেতে না যেতেই তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ দেখা দেয়। স্বামী ভরন পোষন না দেয়ায় মুন্নি তার স্বামীর নামে বরিশাল আদালতে মামলা দায়ের করেন। এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং মুন্নির সাথে আলাপকালে সে জানায়, মুন্নি গরীব পরিবারের সন্তান বিধায় এবং স্বামী ভরন পোষন না দেয়ায় ক্ষুধার তাগিদে সে তার ৩ বছরের শিশু কন্যা আয়শাকে বরিশালে এক খ্রীষ্ট্রান পরিবারের নিকট মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। এর কিছু দিন পরে তার সৎ ভাই শাহজাহান ফরাজী উক্ত টাকা ফেরত দিয়ে ঐ খ্রীষ্ট্রান পরিবারের নিকট থেকে তার ভাগ্নি আয়শাকে নিয়ে আসে। মুন্নি জানায়, চলতি বছরের গত ৩০ জানুয়ারি ছিল মামলার ধার্য্য তারিখ। ঐ দিন সে তার দু’টি বাচ্চাসহ তার সৎ ভাই শাহজাহান ও আরো দু’জন লোক নিয়ে বরিশালে যায়। স্বামীর সাথে দফারফা হয় মুন্নি যদি মামলা তুলে নেয় তবে সে বাচ্চা দু’টির উপর তার দাবি রাখবে না। সে মোতাবেক মুন্নি মামলাও তুলে নেয়। সুচতুর শাহজাহান এই সুযোগে মুন্নির কাছ থেকে তার ছবিতে স্বাক্ষর নেয় তালাক দেয়ার কথা বলে। বরিশাল থেকে ফেরার পথে মুন্নির বড় মেয়ে আয়শাকে শাহজাহান নিয়ে যায়। তিন দিন অতিবাহিত হলেও শাহজাহান মুন্নির কাছে তার বাচ্চাকে ফেরত দেয়নি। বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, ধান্দাবাজ শাহজাহান তার সৎ বোন মুন্নির তিন বছরের মেয়ে আয়শাকে ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ শিশু পাচারকারী চক্রের কাছে। একটি কালো গাড়ীতে আয়শাকে নিয়ে বরিশাল থেকে ঐ চক্র চলে গেছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সবার মুখে একই কথা সৎ মামা শাহজাহান কি করে মাত্র ৩ লক্ষ টাকায় তার ভাগ্নিকে বিক্রি করে দিল। এ বিষয়ে মুন্নির কাছে জানতে চাইলে সে ভয়ে ভয়ে জানায়, তার সৎ ভাই শাহজাহান তার ভাগ্নিকে কোথায় নিয়ে গেছে সে জানেনা। সে কেন তার মেয়েকে ফেরত চাইছেনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সে বলে তাহলে তার সৎ ভাই শাহজাহান তাকে মেরে ফেলবে। এমনকি তার আপন ভাই দিন মজুর হোসেনকেও এলাকা থেকে বিতাড়িত করবে। সে বলে আপনারা আমার বাড়ীতে এসেছেন এটি আমার সৎ ভাই শাহজাহান জানতে পারলে আজ রাতেই হয়তবা কিছু একটা করতে পারে। তার সাথে কথা বলার সময় তাকে ভীত সন্ত্রস্ত দেখা গেছে। তার কথাগুলো শুনে মনে হয়েছে শাহজাহান তাকে হুমকি দিয়েছে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানায়, ধান্দাবাজ শাহজাহান ফরাজী নিয়ামতি সিএন্ডবি ডিগ্রী কলেজে হিসাব রক্ষক পদে চাকুরীর পাশাপাশি ভালো মানুষের মুখোশের অন্তরালে সে দীর্ঘদিন ধরে শিশু পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত। তা না হলে সে কেন খ্রীষ্ট্রান পরিবারের নিকট থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে তার ভাগ্নিকে ফেরত এনে আবার বিক্রি করে দিবে। এ ব্যাপারে শাহজাহানের সাথে আলাপকালে প্রথমে সে জানায়, তার ভাগ্নি আয়শাকে তার বাবা নিয়ে গেছে। এর সত্যতা কতটুকু জানতে চাইলে পরক্ষনে সে জানায়, সে কিছুই জানেনা। আবার কিছুক্ষন পরে সে নোটারি পাবলিকের একটি কাগজ দেখায় যে কাগজে মুন্নিকে ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল। কাগজটি পড়তে চাইলে শাহজাহান লুকিয়ে ফেলে এবং বলে আপনারা নোটারি পাবলিকে গিয়ে পড়–ন। বিশ্বস্ত অপর একটি সূত্র জানায়, শিশু পাচারকারী শাহজাহানের গডফাদার হলো নিয়ামতি ব্রীজের উত্তর পাশে তেলের ব্যবসায়ী ও নিয়ামতি পুলিশ ফাড়ির চিহ্নিত দালাল অদুদ ফরাজী। তার সহযোগীতায় শাহজাহান এসব অপকর্ম করে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানায়। এলাকাবাসী র‌্যাব ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি তদন্তপূর্বক ৩ বছরের শিশু আয়শাকে উদ্ধার ও শিশু পাচারকারী শাহজাহান ফরাজীসহ তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।