এনজিও ব্রিজের বিরুদ্ধে মাঠকর্মীদের বিক্ষোভ

কর্মচারীদের বেতন না দেয়া ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সংস্থার সহায়ক-সহায়িকারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এনজিও ব্রিজের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে আগৈলঝাড়া ৩৪টি কেন্দ্রের ৮১জন কর্মচারী। বুধবার সকালে ব্রিজ এনজিওর নিগৃহীত কর্মচারীরা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ করে প্রশাসনের কাছে এনজিওর বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্যর প্রতিকার চেয়ে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের আবেদন করেছেন ৮১ জন মাঠ কর্মকর্তা-কর্মচারী। সরকারের প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে ‘মানব উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতাত্তোর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প-২’ (পিএলসিইএইচডি-২) বাস্তবায়নকারী বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ রুরাল ইন্টিং গ্রেটেড ডেভেলমেন্ট ফর গ্রারাবস্ট্রিট ইকোনামি (ব্রিজ) নামের সংস্থা লুটপাট করে খাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। ওই প্রকল্পের উপজেলা সভাপতি আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ ও নিগৃহীত কর্মীরা জানান, শুধুমাত্র আগৈলঝাড়া উপজেলায় ৩৪ টি কেন্দ্রে ১৩৬ জন সহায়ক-সহায়িকা ও প্রশিক্ষক কাজ করলেও ২০১০ সালের জুলাই, আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বেতন বাবদ ৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্রিজ কর্তৃপক্ষ না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে। ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করলেও ২৪ হাজার টাকা করে প্রতিটি কেন্দ্র ঘর নির্মাণের বরাদ্দ হিসেবে ৩৪ টি কেন্দ্রের জন্য ৮ লাখ ১৬ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮ হাজার টাকা করে ২ লাখ ৭২ হাজার  টাকা দেয়া হয়। বাকী ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে ব্রিজ কর্তৃপক্ষ। কোথাও পুর্ণাঙ্গ কেন্দ্র ঘর নির্মাণ না করে অনেকের বারান্দায় চলছে নামকাওয়াস্তে কেন্দ্রের কাজ। অভিযোগে আরও বলা হয় সার্ভে জরিপের ফরম প্রতি ৫ টাকা হিসেবে ৩৪ টি কেন্দ্রের ৬০টি সার্ভে ফরমের ১০ হাজার ২শ টাকা না দিয়ে আত্মসাৎ করে ব্রিজ। ইস্যুভিত্তিক আলোচনার জন্য ৩৪টি কেন্দ্রে ৩শ টাকা করে না দিয়ে ১০ হাজার ২শ টাকা ও সিএমসির মিটিং খরচ বাবদ বছরে ৬ হাজার টাকা সহ ২৬ হাজার ৪ শ টাকা আত্মসাৎ করে এনজিও ব্রিজ। প্রতিটি কেন্দ্রে ২টি জাতীয়, একটি স্থানীয়, একটি সাপ্তাহিক ও একটি পাক্ষিক পত্রিকা দেয়ার কথা থাকলেও কোথাও তা দেয়া হয় না। মাঝে মধ্যে দু’একটি কেন্দ্রে  একটি করে জাতীয় দৈনিক, দেয়া হয়। সংবাদ পত্র বিল বাবদ মাসে ২২ হাজার ১শ টাকা কমপক্ষে বরাদ্দ থাকলেও ৮ হাজার ১ শ টাকা খরচ করে ১৩ হাজার ৯শ ৪০ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে ব্রিজ। আসবাবপত্র ও উপকরণ সরবরাহের নামে ব্রিজ কর্তৃপক্ষ করেছে পুকুর চুরি। কর্মকর্তাদের জ্বালানী বাবদ মাসে ২শ টাকা করে ২ মাসের ১৩ হাজার ৬শ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। এই জোচ্চোর সংস্থাটি চলতি বছরে প্রকল্পের অধিনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগপত্র নবায়ন না করেই তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে আসছে। পূর্বের নিয়োগপত্রের উল্লেখিত সুবিধা সমূহও কর্মচারীদের দেয়নি ব্রিজ কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সময় তাদের অনিয়মের প্রতিবাদ করতে চাইলে চাকুরী থেকে ব্রিজ তাদের বরখাস্ত করার হুমকীতে  ভীত সন্ত্রস্ত ছিল অসহায় কর্মীরা। যার অনুলিপি আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও দেয়া হয়েছে। এব্যপারে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উপজেলা সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় তার পক্ষে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন সরদার। জসিম সরদার চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে বলেন, অভিযোগের তদন্ত করে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমান পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য বাঁধাগ্রস্থ করা কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এব্যাপারে অভিযুক্ত ব্রিজ এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক জহিরুল হক বালীর মোবাইলে (০১৭১১৮০৭৭৪) যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকার প্রকল্পের অর্থ ছাড় দেয়নি বিধায় কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি বকেয়া রয়েছে। অর্থ বরাদ্ধ পাওয়া মাত্র নিয়োগপত্রের সকল সুবিধা তাদের দেয়া হবে। চলতি বছর কর্মীদের নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি তিনি তা জানেন না  জানিয়ে  বলেন জেলা সমন্বয়কারীর সাথে তিনি  কথা বলে নিয়োগপত্রের ব্যবস্থা করবেন। খাতওয়ারী প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে লাইনটি কেটে দেন। উল্লেখ্য, ব্রিজ এনজিওটি বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলাসহ ১০ টি উপজেলায় সরকারের এই শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে।