অপুর অ্যাকাউন্ট জব্দ

এনবিআর আরও জানায়, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অপু বিশ্বাস অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, কে বা কারা এনবিআরের কাছে তার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ করেছে। পুরো ব্যাপারটি ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই নয়।

অপু বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করলেও এনবিআর জানায়, তিনি বিরাট অঙ্কের আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। ৩০ জানুয়ারি এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলে তাকে ডেকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি এটা তার অনিচ্ছামূলক ভুল বলে জানিয়ে শীঘ্রই অপরিশোধিত কর পরিশোধের অঙ্গীকার করেন। এনবিআর জানায়, অপুর ৫ বছরের ব্যাংক হিসাব তলব করে যাচাই করা হয়। এতে বড় ধরনের গরমিল এবং আয়কর রিটার্নে তার উল্লেখিত প্রতি মাসের আয় ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির যে হিসাব উল্লেখ করেছেন, তার সঙ্গে বাস্তব আয় ও সম্পদের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। চলচ্চিত্রে অভিনয় হিসেবে যে পারশ্রমিক পান তার প্রকৃত অঙ্কও তিনি গোপন করেন এবং কর ফাঁকি দেন। যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সূত্র জানায়, অপুর একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেও তা তিনি আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেননি। তিনি জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয় বাবদ যে মূল্য প্রদর্শন করেছেন প্রকৃত অর্থে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে পরিশোধের অর্থের অংশ অনেক বেশি। কর ফাঁকি ছাড়াও অপু বিশ্বাস রেজিস্ট্রেশন ফি আত্মসাৎ করেছেন। ব্যাংকে তার নামে কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। এনবিআরের তথ্য মতে, গত ৩ বছরে অপু ৪০ লক্ষাধিক টাকার কর ফাঁকি দিয়েছেন। সার্বিক বিষয় তদন্তে অবগত হয়ে ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের উপ-পরিচালক শারমিন নাজ এনবিআর চেয়ারম্যানের অনুমোদন সাপেক্ষে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১১৭(৪) ধারা মোতাবেক ব্র্যাক ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের শাখা ব্যবস্থাপক বরাবরে জরুরি চিঠি প্রেরণ করে অপু বিশ্বাসের সব হিসাব বন্ধের অনুরোধ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক অপুর সঞ্চয়ী হিসাব নং ১৫০১১০০৬৯০৩৪১০০১সহ ৪টি মেয়াদি হিসাব এবং ৩টি ঋণ হিসাব জব্দ করে। এনবিআরের মতে এক্ষেত্রে আরও তদন্ত এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে এ বিষয়ে অপু বিশ্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টিকে তার বিরুদ্ধে কোনো মহলের ষড়যন্ত্র এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে কর অপরিশোধের ঘটনা বলে জানান। এছাড়া আর কিছু বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।

অপু বিশ্বাস

অপু বিশ্বাস বোরকা পরে এনবিআরে

জনপ্রিয় নায়িকা অপু বিশ্বাস গতকাল রবিবার কর গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হলেন বোরকা পরে।

কর-সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাঁকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলে (সিআইসি) তলব করা হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, কালো বোরকা পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এনবিআরে আসেন অপু বিশ্বাস। তাঁর মুখ এবং মাথাও কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল। শুধু চোখ খোলা ছিল। সিআইসি থেকে বের হয়ে অপু বিশ্বাস তড়িঘড়ি করে নিচে নামেন। এরপর নিজের গাড়িতে চড়ে বোরকা খুলে নিজেই ড্রাইভ করে এনবিআর এলাকা ত্যাগ করেন।

জানা যায়, সিআইসি মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের দপ্তরে নায়িকা অপু বিশ্বাসকে কর-সংক্রান্ত নানা বিষয় প্রশ্ন করা হয়। সেখানে অপু বিশ্বাস প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করেন। অপুর আয়কর রিটার্নের সঙ্গে বাস্তব জীবনযাপনের গড়মিল বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা নানা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইসির একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে অপুর কোনো কর ফাঁকি আছে কি না বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি নাÑএসব বিষয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সিআইসির মহাপরিচালকসহ কোনো কর্মকর্তা। তবে তদন্ত কার্যক্রম চলবে এবং ধারাবাহিকভাবে শোবিজের আরো অনেক তারকাকে কর ফাঁকির সন্দেহে তলব করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। এসব বিষয়ে নায়িকা অপু বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তাঁর মতামত জানা সম্ভব হয়নি।

কর-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গত ২৫ জানুয়ারি নায়ক শাকিব খানকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে কর ফাঁকির সন্দেহে গত বছরের ৭ এপ্রিল সিআইসির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের নির্দেশে নায়ক শাকিব খান ও নায়িকা অপু বিশ্বাসের সম্পদ ও আয়ের যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখার দায়িত্ব নেন সংস্থার উপমহাপরিচালক শারমিন নাজ। তিনি সব ব্যাংককে এ ব্যাপারে তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দেন। এ সময় শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের নিজ বা যৌথ নামে পরিচালিত চলতি, সঞ্চয়ী ও মেয়াদি আমানত অ্যাকাউন্ট, ঋণ অ্যাকাউন্ট, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্ট, ভল্ট, লকার, সঞ্চয়পত্রসহ যেকোনো উপায়ে অর্জিত অর্থ-সম্পদের তথ্য সরবরাহ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সিআইসির তথ্য মতে, নায়ক শাকিব খানের গুলশান-২-এর ২৯ নম্বর বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট এবং উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে একটি বাড়ি রয়েছে। তিনি একেকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন। অপু বিশ্বাসের গুলশানের নিকেতনে একটি ফ্ল্যাট ও মিরপুর মাজার লেনের প্রথম কলোনিতে একটি বাড়ি রয়েছে। তিনি প্রতি ছবিতে অভিনয়ের জন্য অন্তত আট থেকে ১০ লাখ টাকা সম্মানী নেন বলে জানা গেছে।

এনবিআরের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এনবিআরে আসার বিষয়টি লুকাতেই অপু বিশ্বাস বোরকা পরে এনবিআরে আসেন।

Source : Priyo.com