ক্রসফায়ারের আগে

RAB  Cross Fire

পর তাকে ‘ক্রসফায়ার’-এর নামে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার আগে এই একটি বাক্যের মাধ্যমেই অনুমতি নেওয়া হয় শীর্ষ র‌্যাব কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। আর এর মাধ্যমেই গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং সংবিধান ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার সুপারিশ করেন সামরিক বাহিনী থেকে প্রেষণে আসা লে. কর্নেল পদমর্যাদার ব্যাটালিয়ন প্রধানরা (কমান্ডিং অফিসার বা সিও)।

কোনো অপরাধীর বিচার করা হয় তার অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে। অথচ এই প্যারায় তাকে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করা হলে রাজনৈতিক কোনো উত্তেজনা বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে কি না, এ ধরনের রাজনৈতিক মতামতও ব্যক্ত করছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। এই সুপারিশে র‌্যাবের সর্বোচ্চ কর্তা স্বাক্ষর করলেই ক্রসফায়ারের নামে রাতের গভীরে নির্জন স্থানে হাত-পা বেঁধে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর ক্রসফায়ারের পর উদ্ধার করা হয় বুলেটপ্রুফ পোশাক পরা লাশ। অথচ যার বুকে বিদ্ধ থাকে একাধিক ঘাতক বুলেট।

র‌্যাব কর্তৃপক্ষের প্রস্তুত করা হাইপ্রোফাইলে সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারের আগে কী ধরনের ‘তদন্ত প্রতিবেদন’ তৈরি করা হয়_এ রকমই একটি প্রতিবেদনের কপি বিডিনিউজ সংগ্রহ করেছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে কিভাবে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হচ্ছে অপরাধীদের।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, ভয়ংকর অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পর নিয়ম অনুযায়ী ক্রসফায়ার করার আগে তার (সন্ত্রাসীর) ক্রাইম প্রোফাইল সংশ্লিষ্ট বাহিনীর মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয় চূড়ান্ত অনুমতির জন্য। প্রোফাইলের শেষে মন্তব্যের জায়গায় লেখা থাকে_’সর্বোচ্চ শাস্তি গ্রহণের সুপারিশ করা হলো’। সর্বোচ্চ শাস্তির অর্থ কী? এই প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এক শীর্ষ কর্মকর্তা অপকটে বললেন, ‘ক্রসফায়ার’।

এই চূড়ান্ত অনুমোদনের শীর্ষে রয়েছেন র‌্যাবের বর্তমান ডিজি আজিজ সরকার। অনুমোদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্রসফায়ারের নামে খুন করা হয় হাত-পা বাঁধা অপরাধীকে।

র‌্যাবের উপমহাপরিচালক কর্নেল মাহবুবুল আলম মোল্লাকে ফোন করলে তিনি এ ধরনের প্রোফাইল তৈরির কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, সাধারণত কোনো অপরাধীর প্রোফাইল তৈরি করেন সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়ন প্রধানরা। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার অপরাধের ধরন বোঝানোর জন্যই ‘সুপারিশ’-এর প্যারায় তার (গ্রেপ্তারকৃতের) বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত_সে বিষয়ে মন্তব্য করেন সিওরা। সব ধরনের অপরাধীর ক্ষেত্রেই এই সুপারিশ প্যারা সংযুক্ত থাকে বলে কর্নেল মোল্লা জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো…’ এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে সাধারণত গ্রেপ্তারকৃত অপরাধীর অপরাধের ধরন সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা দেন সিওরা।

‘আমি এমন আসামি দেখেছি, যারা ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার আগে গুনগুন করে গান গেয়েছে। অনেককে বলতে শুনেছি, স্যার সিগারেট দেন। মরার আগে শেষ টান দিই।’ র‌্যাবের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এভাবেই বর্ণনা করলেন ক্রসফায়ারের আগে দেখা তাঁর কয়েকটি অভিজ্ঞতা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এলিমিনেট করার আগে আসামিকে আমরা গোসল করিয়ে নিই। যেমন করা হয় ফাঁসির আসামিকে।’ ‘ওজু করান বা হুজুর ডেকে তওবা করান?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না। শুধু গোসল করিয়ে অপারেশনে বের হই।’

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, ক্রসফায়ারের ঘটনা কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন এমন অনেকেই মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সামরিক বাহিনীতে ফিরে অনেকে এই অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত হচ্ছেন বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।

Source : Abu Sufian