তসলিমা নাসরিন (পোস্টমর্টেম ২য়-৩য় পর্ব)

তস্লিমা খুবি শ্লেষাত্নক ভাবে তার গালে পাউডার দেয়া, লিপিস্টিক দেয়া,কিভাবে শাড়ি পড়ছেন ভাবে এই আম্বিয়া বেগমের সম্পর্কে মন্তব্য করছে । আগের পর্বে তস্লিমার নিজের লেখা এই কথাগুলো তার বই থেকে উদ্ধৃত করার পরেও কিছু প্রশ্ন এসেছে।

প্রশ্ন গুলো এমনঃ

“আম্বিয়া খাতুন কি নিজের ইচ্ছায় বসের ঘরে যেতেন বলে মনে করেছেন? এ দেশে পুরুষ কর্মচারীরা নারী সহকর্মীদেরকে কিভাবে কি কি করতে বাধ্য করে, এসবের কিছুই কি আপনি জানেন না? পত্রপত্রিকাও পড়েন না নাকি? আম্বিয়া খাতুনদের এসব কাজে বাধ্য করে পরে কিছু সুযোগসুবিধা দেয়া হয়, তাদের অনিচ্ছাসত্তেও তাদের বেশ্যা বানানো হয়”

Taslima Nasrinপ্রথমত তস্লিমা বা তস্লিমার ভক্তকূল আমাকে উত্তর দেয় নি। পালটা আমাকে উপরের প্রশ্নটি করেছেন। আমার খুব সোজা প্রশ্ন, তস্লিমা নারী বা পুরুষ এই হিসাব বাদ। একজন মানুষ হিসেবেও কি তস্লিমা বলতে পারেন অন্য একজন মানুষকে এই ধরনের ইংগিত করে? আম্বিয়া স্নো-পাউডার দিয়ে বসে থাক, লিপিস্টিক দিয়ে সেজে থাকে, তস্লিমার এত পোড়ে কেন? তস্লিমা না যৌন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী? এখন অন্য আরেকজন যৌনতা করলে তার এত লাগে কোণ দুঃখে?

দেখুন, এই বইয়ের ১১০ পৃষ্ঠায় তস্লিমা আবার এই আম্বিয়া আর মুজিবর সম্পর্কে বাঁকা করে বলছে,

“টিনের ঘরে আম্বিয়া আর মুজিবর রহমান কপোত-কপোতির মত সময় কাটাচ্ছেন”

পাঠক দেখুন, তস্লিমা নিজে কিন্তু এর সাথে শুচ্ছেন, ওর সাথে শুচ্ছেন (এই পোস্টে ও পুরো সিরিজে অনেক উদাহরণ পাবেন) কিন্তু অন্য আরেক মহিলা অন্য পুরুষের সাথে শুলেই যত দোষ!!

আবার ভক্তরা ওদিক থেকে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন এই বলে যে আপনি জানেন না, এ দেশে পুরুষ কর্মচারীরা নারী সহকর্মীদেরকে কিভাবে কি কি করতে বাধ্য করে? পরে কিছু সুযোগ সুবিধা দেয়।

উপরের লাইনগুলোতে একটি বাক্য এসেছে যে, পরে কিছু সুযোগ সুবিধা পায়। ঠিক এমন একটি কথা তস্লিমাও তার বইয়ের ১৪ নাম্বার পৃষ্ঠাতে বলেছেন এমন করে,

এইখানে একটা কথা হলো, এই সরকারী কাজে ১০-৫ টা অফিসে থাকা। এর জন্য কিন্তু তস্লিমা মাস শেষে টাকা পান। কাজ থাকলেও অফিসে থাকতে হবে না থাকলেও থাকতে হবে। এটাই নিয়ম আর কথা বলেই কিন্তু চুক্তি হয়েছে চাকুরীর শুরুতে। কিন্তু দেখেন এই ব্যাপারটিই কি অভিযোগের সুরে তিনি বলছেন। আবার আম্বিয়া আগে চলে যাচ্ছে, বা অন্য কেউ আগে চলে যাচ্ছে। এই ব্যাপারটি নিয়ে কি তিনি স্বাস্থকেন্দ্র রেগুলেশন অফিসে অভিযোগ করেছেন? বইয়ের কোথাও বলা নেই করেছেন। তিনি কি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অভিযোগ করেছেন যে অফিসের সময় আম্বিয়া আর বড় কর্তা যৌন সম্পর্ক করেন? উত্তর হচ্ছে করেন নি।

কোনো প্রতিবাদ কি করেছেন? না, তাও করেন নি। অথচ আজ এত বছর পরে বিদেশের মাটিতে বসে বসে আমাদের ন্যায় নীতি শেখাচ্ছেন। আপনার সামনে এত অপরাধ ঘটে যায়, আপনি তখন চুপ ছিলেন কেন? তাহলে কি আপ্নিও অপরাধী নন? আপনি এত বড় বড় কথা লেখেন, এত মানুষের কথা লেখেন, এত প্রতিবাদ করেন, আর সামান্য প্রতিবাদটুকু করতে পারলেন না মুজিবর রহমানের সামনে? বরংচ আপনাকে মুজিবর রহমান ডেকে নিয়ে গিয়ে আপনার সাথে খারাপ ইঙ্গিত করলেও আপনি চুপ মেরে বসে থাকেন। আর ঘরে এসে দোষ দেন পুরুষের। অথচ আপনি চিন্তা করে দেখেন না, মুজিবরের মত চরিত্রের একজন মহিলা ওখানে থাকলে তার উল্টোটাই কিন্তু ঘটত। আসলে সিস্টেমকে,আইনের অকার্যকরতাকে দোষ না দিয়ে এখানে দোষ দেয়া হচ্ছে পুরুষের!!!!

আবার এখানে আম্বিয়ার কথা বলি। আম্বিয়াকে বড় কর্তা কিভাবে ব্যাবহার করেছেন? কারন তাকে কিছু উপড়ি সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় বলে। তাইতো?

আমার প্রশ্ন হলো, এই আম্বিয়া খাতুন যদি সেই সুযোগ আর সুবিধাগুলো না নিতেন তবে কি কেউ তার সাথে এই যৌণ সম্পর্ক করতে পারত? সবচাইতে বড় ব্যাপার হলো, আম্বিয়া নিজের থেকেই দুঃখিত ছিলো না এই সম্পর্কে বা তাকে জোর করেও কিছু করানো হয়নি। এই ধরনের কোনো কথাই আমরা তস্লিমার লেখায় পাই না।

আবার আসি তস্লিমার বান্ধবী শিপ্রার কথায়। আগের পর্বে বলেছি, শিপ্রা বিবাহিত থাকা সত্বেও প্রেম করে অন্য একজন ডাক্তার মানুর সঙ্গে। এইদিকে মানুও বিবাহিত। মানু অবশ্য প্রেম করে ২ জনের সঙ্গে। এই ক্ষেত্রে তস্লিমা তার বান্ধবী শিপ্রার কোনো দোষ দেখেন না। দেখেন শুধু ডাক্তার মানুর। এইগুলা কালকেই আলোচনা করেছি বিস্তারিত। আজ আর নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তস্লিমার ভক্তরা প্রশ্ন উঠালো কয়েকটা,

১) শিপ্রা কি তার স্বামীর প্রোপার্টি? তার যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে শুতে পারবে।

২) শিপ্রা ভালোবেসেছিলো মানুকে। এইখানে প্রতারণা নাই। কিন্তু মানু প্রতারণা করেছে। কেননা মানু তার স্ত্রীর সাথেও শোয় আবার আরেক ডাক্তার আনুর সাথেও শোয়।

আমার কথা হলো, বিয়ে মানে এক ধরনের কমিটমেন্ট। একজনের প্রতি আরেকজনের বিশ্বাস। এই বিয়ে মানেই এই নয় যে আজীবন একজন আরেকজনের সাথে থাকতেই হবে। যদি মন না চায় তবে একজন আরেকজনের সাথে থাকবেন না। ডিভোর্স দিবেন। ব্যাস। মামলা ডিসমিস। কিন্তু এই ক্ষেত্রে দেখা গেলো তনার বান্ধবী শিপ্রা স্বামীকে রেখে মানুর সাথে যৌন মিলনে ব্যাস্ত। এখন কথা হলো এইটাতো চিটিং তার স্বামীর প্রতি। আবার ঐদিকে মানুও চিটিং করছে। তস্লিমার কি উচিত ছিলো না এই চিটিং বা অন্যায়ের কথা শিপ্রার স্বামী ও মানুর স্ত্রীকে জানানো? এখানে তো মানুর স্ত্রী শিরিনের প্রতি অন্যায় হচ্ছে। তবে নারীবাদী তস্লিমা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেন না কেন? উপরন্তু, তস্লিমা কি ভাবে মানুর স্ত্রীকে সম্ভোধন করছেন দেখুন,

“শিপ্রা কি বোঝেনি এসব! বোঝেনা যে মানু তাকে ধোঁকা দিচ্ছে? আসলে সে কোনদিনই ঐ গর্দভ বউটিকে তালাক দিবে না”

(পৃষ্ঠা ২২)

হায়!!! একটি নিরীহ মেয়ে। যার চিটিংবাজ স্বামী যেখানে তার সাথে প্রতারণা করছে সেখানে সেই মহিলাকে সব কিছু জানাবার বদলে তাকে বলছেন “গর্দভ মহিলা”। (এই অংশটুকু একটু মনে রাখেন। একটু সামনেই বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আপনাদের প্রমাণ করে দেখাবো)

আবার নিজের বান্ধবীর প্রতি তার একপক্ষীয় আচরণ লক্ষ্য করুন,

তস্লিমা তার “ক” বইয়ের ২১ নাম্বার পৃষ্ঠায় বলছেন,

“শিপ্রাকে আমি বলেছি, ‘দেখ এত উন্মাদ হয়ো না’, মানু শুধু তোমাকে ভোগ করতে চায়, তোমাকে সে ভালবাসে না।’
‘কিন্তু মানু তো আমাকে বলেছে যে সে আমাকে ভালবাসে।’
‘মিথ্যে বলেছে।’
শিপ্রা মিথ্যে বলে না, তাই সে ভেবেছে অন্যরাও বুঝি মিথ্যে বলে না”

অথচ দেখেন, এই একই বইয়ের ২২ নাম্বার পাতায় শিপ্রা তস্লিমার কাছে তার আসল খায়েশ প্রকাশ করে এইভাবে,

“জীবনে আমি অন্তত একবার অর্গাজমের স্বাদ পেতে চাই”

শিপ্রা আরো বলে,

কি বুঝলেন পাঠক? শিপ্রা কি আসলেই মানুকে ভালোবাসে না অর্গাজমের স্বাদ পাওয়াটা আর যৌনতাই এখানে মুখ্য? এই ব্যাপারটিকে আমি ছোট করে দেখিনা। হতে পারে যৌনতা একটি খুবই ইম্পর্টেন্ট ব্যাপার।ফাইন। তাহলে এই পুরো অংশটিতে শুধু মানুর ধূর্ততা আর তার স্ত্রীর গর্দভগিরির গল্পই শুনলাম। কিন্তু শিপ্রা যে আসলে ভালোবাসা নয় শুধু মানুর কাছে যৌন সুখ চেয়েছে এই ব্যাপারটি নিয়ে তস্লিমার কোনো উচ্চ বাচ্য নেই। তিনি প্রমাণ করতেই ব্যাস্ত যে শিপ্রা মন দিয়েছে কিন্তু মানু প্রতারণা করেছে। কারন মানু একজন পুরুষ।

এই বইয়ে আবার ডাক্তার আনুকে বলা হয়েছে রক্ষিতা হিসেবে। তস্লিমা নিজেই কিন্তু বলছে যে মানু আসলে কাউকেই ভালোবাসে না। ভালোবাসে শুধু নিজেকে। তাহলে এক্ষেত্রে আনুকে আলাদা করে রক্ষিতা ডাকা কেন? আনুর কাছে এই সত্য তস্লিমা কেন বলেন না? কেন বাঁচান না তিনি আনুকে? কেনই বা অন্য কারো কাছে শুনে নারীদের প্রতি সবচাইতে অবমাননাকর শব্দটি তস্লিমা ব্যাবহার করেন?

কার কথার উপর ভিত্তি করে তস্লিমা আনুকে রক্ষিতা বলছেন? আসুন দেখে নেই-

তস্লিমা শুনেছে তার বোন ইয়াসমীন থেকে।

ইয়াসমীন শুনেছে আবার মিলনের কাছ থেকে।

মিলন হচ্ছে আবার ইয়াস্মীনের ক্লাস মেট ও মানুর ভাই।

তার মানে হচ্ছে আমি যদি এখন গিয়ে তস্লিমাকে বলি (ধরা যাক আমি তস্লিমার ভাই) “তস্লিমা আপু, অমুক হচ্ছেন একজন মাগী” তবে কি তিনি তাই বিশ্বাস করে বইয়ে লিখে দিবেন? ওই মানুষটির কথা কি একবারও চিন্তা করবেন না?

এইবার আপনাদের একটা মজার জিনিস দেখাই। তস্লিমার এক ভক্ত সেদিন বলছিলেন, তস্লিমা নাকি হার্ভার্ডে প্রফেসরি করান। দেশ ঘুরেছেন, বিদেশ ঘুরেছেন। অথচ দেখেন, তার ল’ইয়ার সারা হোসেনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন

সারা নিজে ব্যারিস্টার,অক্সফোর্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে তাঁর বিখ্যাত আইনজ্ঞ বাবার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন, অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে সারা। সাদা সাদা সেলোয়ার কামিজ পরেন। শরীরে একতিল মেদের চিহ্ন নেই”

আমার প্রশ্ন হলো-

১)অক্সফোর্ড থেকে ব্যারিস্টারি এই পৃথিবীর আজ পর্যন্ত ইতিহাসে কবে হয়েছে কেউ প্রমাণ করতে পারলে আমি আমার কান কেটে কুত্তার গলায় ঝোলাবো। অক্সফোর্ড থেকে গ্র্যাড করা যায়, মাস্টার্স করা যায়, পি এইচ ডি বা অন্যান্য আরো ডিগ্রী করা যায়, ব্যারিস্টারী কোর্স করা যায় না হে হার্ভার্ডের প্রফেসর!!! আসলে উনার এই যে “অক্সফোর্ডের ব্যারিস্টার” টাইপ জ্ঞান, তাতে করে তার ভক্তকূল তো বল্বেই যে উনি হার্ভার্ডের প্রফেসর।

২) পাঠক লক্ষ্য করেছেন কি, সারার বর্ণনা দেয়ার সময় কিভাবে বর্ণনা দিয়েছেন তস্লিমা? বলেছেন তিনি সুন্দরী, গায়ে একতিল মেদ নেই। সেই একই ব্যাপার। তার কাছে মানুষের সৌন্দর্য মানেই হচ্ছে শারিরীক বর্ণনা।

যেমন আরেকটি উদাহরণ দেই,

তস্লিমার প্রাক্তন স্বামী নাইমকে প্রথম দেখে তস্লিমা সেই একই ভাবে তার মানসিকতার পুরো ব্যাবহার করে নাইমের শারিরীক বর্ণনা দিয়েছিলেন এইভাবে পাঠকদের-

অথচ তার কথাতেই আমরা জানতে পারি নাইম কেমন মানুষ ছিলেন-

এই কথা আবার কিভাবে সারকাস্টিক টোনে বলেছেন ৫৭ পৃষ্ঠায় দেখুন-

“গুন আছে বটে বিচ্ছিরি দেখতে ছেলেটির”

আমার প্রশ্ন হলো, একটা মানুষ কেমন, তা না জেনে এমন বাজে ভাবে একটি মানুষের শারীরিক গঠন কেন ব্যখ্যা করেন তস্লিমা? তিনি না বলে বেড়ান তিনি মানবতাবাদী,নারীবাদী,মানুষের সাম্যবাদ চান!! তবে মানুষের শারিরীক এই গঠন বর্ণনা করা তার কাছে সব সময় এত গুরুত্বপূর্ণ হয় কেন? তাও এত বাজে ভাবে?

এই বইয়ের ৫৭ পৃষ্ঠায় এক জায়গায় তিনি আবার একজন কবিকে ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে,

“শহরের ছোটখাটো চশমা পরা আঁতেল আবৃত্তিকার দোলন”

আবার কবি ফরিদ কবির ( উনি সম্ভবত একজন প্রকাশকও) সম্পর্কে তিনি প্রথম দেখাতেই বলেন- পৃষ্ঠা ৬০ এ

“বরং শব্দ খুঁজে পাই সেওড়াগাছের ভূতের মত দেখতে ফরিদ কবির নামের যে কবিকে হারুন সঙ্গে এনেছিলো,তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে”

হায়!! মেদহীন শরীর,সেওড়া গাছের ভূতের মত, ছোটোখাটো চশমাপরা আঁতেল,বিচ্ছিরি,উঁচু দাঁত,উঁচু কপাল,হারসর্বস্ব শরীর,চুলের ছিরিছাদ নেই,পাকা চুল- এই শব্দগুলোই আমাদের নারীবাদী তস্লিমা,মানবতাবাদী তস্লিমা মানুষের পরিচিতি দেবার জন্য বইয়ে লিখেন।

অথচ এই বইয়ের ৫৭ পাতায়( অন্য ভুবন নামে লেখাটির একটি অংশে) তিনি লিখেছেন,

বৈষম্যহীন সমাজ,সমতা আর সাম্যের স্বপ্ন ঝংকৃত হয় প্রতিটি কন্ঠে

মানুষের প্রতি ওইসব নোংরা শব্দ ব্যাবহার করে আপনি বৈষম্যমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন তস্লিমা????????

“ক” বইয়ের ৪০৮ ও ৪০৯ নাম্বার পাতায় তস্লিমা লিখেছেন-

“হাবিবুল্লাহ সুখে থাক বউ বাচ্চা নিয়ে। বিবাহিত পুরুষেরা স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত হলে আমার ভালো লাগে”

উল্লেখ্য যে, এই হাবিবুল্লাহ ছিলো তস্লিমার এক সময়ের প্রেমিক। এখন বিয়ে করে সংসার নিয়ে সুখে আছে। কিন্তু উপরের ডায়লগ দেয়া তস্লিমা কি বলছে শোনেন-

হাবিবুল্লাহ কিছু একটা বলবে তস্লিমাকে। তস্লিমা সেটা জানতে চায়। এই সময়ে তার লেখার কিছুর উদ্ধৃতি আমি দেই-

“কি কথা আগে তো শুনি। হৃদয় আমার চঞ্চল হয়ে উঠে। শান্ত প্রকৃতিতে দোল লেগেছে। জলে ঢেউ এর কাঁপন উঠেছে।”

“হাবিবুল্লার সঙ্গে আমি দেখা করতে চেয়েছি তার ওয়াইফের গল্প শোনার জন্য নয়।আমার ইচ্ছেগুলো কাউকে আমি বলিনি”

পরে অবশ্য বোঝা যায় হাবিবুল্লাহ এসেছিলো তস্লিমার কাছে যে তাকে কি তস্লিমা আমেরিকাতে পাঠাতে পারবে কিনা সেই সাহায্য চাইতে। সেই সময় তস্লিমার অনুভুতি কি ছিলো দেখেন-

“মুহুর্তে সব কাঁপন থেমে যায়। থেমে যায় সব আলোড়ন”

বিবাহিত হাবিবুল্লাহ ঐ মহুর্তে কি করলে আপনার কাঁপন থামত না তস্লিমা?

কেন জানেন নাকি পাঠক?

কারন ৪০৮ পাতায় লেখা আছে,

“তার বুকের ভেতর আমার জন্য ধুকপুকানি এখোনো যে আছে সে কথাই বলবে বোধ হয়”

আমি ধরে নিলাম যে তস্লিমা শেষ পর্যন্ত সত্যি সত্যিই চান যে স্বামী যেন তার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকুক। তবে নীচের এই কথাগুলো পড়লে আপনাকে একজন ভন্ড ছাড়া একজন সুস্থ মানুষের আর কি-ই বা মনে হবে? বলতে পারেন? পাঠক এই বিচারের ভার আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম।

আপ্নি লিখেছেন-


“কায়সারকে বলেওছি কয়েকদিন, তুই আর আসিস না আমার কাছে,হেনুকে নিয়ে সুখে থাক।অন্য কোনো মেয়ের কাছে যাওয়ার তো দরকার নেই। কায়সার তবুও আসে । সপ্তাহে একদিন হলেও আসে, এক ঘন্টার জন্য হলেও আসে। অবশ্য মাঝে মাঝে সপ্তাহ দুসপ্তাহ পার হয়ে যায়,এমনকি মাসও পার হয়ে যায়,মন হয় কায়সার বুঝি আর আসবে না। কিন্তু ঠিকি উদয় হয়”

“একদিন কায়সারের বউ হেনু আমাকে ফোন করে বলেছে, “কি করে আমার স্বামীর সঙ্গে আপনি সম্পর্ক করেন?আপনার লজ্জা হয়না?আপনি না মেয়েদের কথা লিখেন? তবে আরেক মেয়ের সর্বনাশ করেন কেন?”

“আমি ক্ষণকাল বাক্যহারা হয়েছিলাম। এরপর শুকনো গলায় বলেছি,”আপ্নার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন, তাকে ফেরান। তাকে বলেন যেন আমার কাছে আর না আসে”

বড় অপরাধী লাগে নিজেকে’ কিন্তু কি করে ফেরাবো আমাকে। এই সংগীহীন প্রেমহীন জীবনে কায়সার যদি কোনো কোনোওদিন আমাকে সামান্য সংগ দেয়,আমি কি করে বাঁধা দেব নিজেকে সেটি গ্রহণ না করার জন্য? আমাকে সন্যাসী হতে হবে যে! এত পিপাশা রেখে কি করেই বা জল ছোব না! আমি তো মানুষ দেবী নই!অবিবাহিত কোনোও পুরুষ প্রেমিক যদি পেতাম অপরাধবোধটি হয়ত যেত”

এই ব্যাপারটি শেষ নয়। এই বইয়ের ৭৭ পাতায় বিবাহিত ইমদাদুল হক মিলনের সাথেও তার যৌন সম্পর্ক হয় বলে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তার সাথে কাশ্মীর গিয়েছেন। মিলনের, তার স্ত্রীর সাথে এই চিটিংবাজী তস্লিমার ভেতর কোনো ইচ্ছা যাগায় না যে সে তা গিয়ে মিলনের বিবাহিত স্ত্রীকে গিয়ে বলে। কি ভাবে বলবে? এই চিটিং এ তো সেই সাহায্যই করছে।

যখন তস্লিমা বুঝতে পারলো মিলন তার প্রতি কোনো ভালবাসা অনুভব করেনা শুধু তার শরীরটাই চায়, তারপরেও একদিন মৌচাকের মোড়ে মিলনের সাথে দেখা হয়। এবং সেখান থেকে বাসায় এসে তারা আবার যৌন মিলন করে। তস্লিমার ভাষায়,

“শরীরে মধু যেটুকু ছিলো সেটুকুই শুষে নিয়ে চলে গেলো মিলন”

এই তস্লিমাই কিন্তু আবার বলে অত্যাচারিত নারীর কথা। যেমন- এই “ক” বইয়ের ৪১০ পাতায় তস্লিমা বলেন,

“খসরুকে বললে তিনি মিনাকে তাঁর আপিসেই সেক্রেটারির একটি চাকরি দেন। স্বামীর অত্যাচারের প্রতিবাদ করে বেরিয়ে এসে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়, এরকম মেয়ের সংখ্যা অনেক। অনেক অনেক মেয়ে কেবল সুযোগ নেই বলে পড়ে থাকে ভালোবাসাহীন সংসারে”

আমার প্রশ্ন হলো,

স্বামীদের এই ধরনের চিটিং তো নারীদের উপর একটা অত্যাচার। ঠিক না? তাহলে তস্লিমা, আপনি কিভাবে নারীদের উপর এই অত্যাচার হচ্ছে যেনেও সেই অত্যাচারী স্বামীদের সাথে যৌন সম্পর্ক করে বেড়াচ্ছেন? কেন তাদের কামনা করছেন? কেন তাদেরকে আপনার যৌন দ্বার তাদের জন্য খুলে দিচ্ছেন? কেন? আপনাকে কায়সারের বউ হেনু ফোন করে এত অনুনয় করে বলল, আপনাকে লজ্জা দিলো, আপনি অপরাধ করছেন এইটা বইয়ে স্বীকারও করলেন। তারপরেও কিভাবে আপনি কায়সারকে কামনা করতেন। প্রশ্রয় দিতেন?

আপনার মায়ের ভাষায় বলি। আপনি আপনার “ক” বইটির ১৩৭ পাতায় আপনার মায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন-

“মেয়েদের কথা এত লেখস,ব্যাডাইনগর বদনাম এত লেখস,ব্যাদাইন ছাড়া বাছস না ক্যান?”

আপনি আবার এই মা-বাবা সম্পর্কে বলেছেন এই ভাবে-

“মা’কে লেলিয়ে দিলাম” “তাঁর(সৈয়দ শামসুল হক) সাথে যেনো জানোয়ারী না করেন”

অথচ এই আপনার এই পুরুষ বাবাই আপনাকে পেলে পুষে এত বড় করে আপ্নাকে ডাক্তারি পড়িয়েছেন।আপনার পুরুষের ওই তন্ত্রে থেকে তখন প্রশ্ন জাগতো না তস্লিমা আপু?

এইগুলা কি আপনার ভন্ডামী প্রমাণের জন্য যথেষ্ঠ নয় তস্লিমা আপু? আপনি না নারীদের অধিকার আদায় করেন? আপনি না তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান? আপনি না বলেন পুরুষরাই খারাপ? আপনার ভক্তরাও তো এসব বলে।

অথচ আপনি একজন বিবাহিত নারীর স্বামীর সাথে শুচ্ছেন। সেই স্বামী অসভ্যটির প্রতারণাকে আপনার শারীরিক সম্পর্কের সময় মেনে নিচ্ছেন।

আর কি বলব আপনাকে বলেন? যা বলার পাঠকরাই বলবে আজ। আপনাকে কিছুই আর বলতে ইচ্ছা করছে না। এত বড় একজন হিপোক্রেট,একজন খারাপ মনের মানুষ, একজন খারাপ চরিত্রের অধিকারী হয়ে আপনি নারীবাদ শেখান? আপনি নারীবাদ কপচান? ধিক আপনাকে?

 

—————

৩য় পর্ব

—————

আমি আমার নিজের কথা বলে কিছু প্রমাণ করবার চেষ্টা করিনি এমনকি নিজের ভাবনা দিয়েও নয়। তসলিমা নাসরিন (তনা) এর নিজের লেখা দিয়েই আমি বুঝিয়েছি যে এক লাইনে তনা নারীবাদী আবার অন্য প্যারায় গিয়ে তনা আবার নিজেই হয়ে যান একজন নারীর সর্বনাশকারী নির্যাতনকারী।

২০০৭ সালের নভেম্বরে প্রথম প্রকাশিত হয় তনার একটি বই “তুই নিষিদ্ধ, তুই কথা কইস না” গ্রন্থের ৩৯তম পৃষ্ঠায় তনা কি লিখেছে দেখুন-

কলকাতাকে এখন আমার আর মাসি বলে মনে হয় না,মা বলে মনে হয়।

অথচ দেখুন, তনা তার আরেকটি গ্রন্থ “ক” এর “আনন্দধারা” প্রবন্ধটিতে কি লিখেছেন-

উপরের উদাহরণগুলো আমার বানানো নয়। যেই কোলকাতাকে নিয়ে তনার এত উচ্ছাস, যেই কোলকাতাকে তনা “মা” এর সমান মর্যাদা দিয়েছে। সেই তনাই দেখুন এই কলকাতাবাসীকে ঘটি বলে সম্ভোধন করছেন। আমরা তো সকলেই জানি যে এই “ঘটি” কথাটি অনেকে স্ল্যাং হিসেবে ব্যাবহার করে। আমরা এও জানি ঘটি শব্দটি একটি অত্যন্ত নোংরা শব্দ যা সম্মানিত কলকাতাবাসীদের সম্মানহানি-ই কেবল হয়। অথচ কি নির্দ্বিধায় তনা কোলকাতার দাদা ও দিদিদের ঘটি বলে বার বার বলছেন।

আবার দেখুন কলকাতার কি ব্যাপার গুলোতে তনার আগ্রহ-বেলাল চৌধুরী তনাকে কি কথা বলে মজা দিচ্ছেন আর তনা কি থেকে মজা পাচ্ছেন। হ্যাঁ এটা ঠিক তনা কলকাতার অন্য অনেক কিছুই পছন্দ করেন কিন্তু তার চূড়ান্ত আগ্রহ গুলো কি একটু দেখুন নীচের লেখাতে-

অথচ এই তনা-ই আবার জাত-পাত নিয়ে কি লেকচার তার “ক” বইতেই দিচ্ছে লক্ষ্য করুন।

জাত-পাত নিয়ে “তুই নিষিদ্ধ,তুই কথা কইস না” বইয়ের ৫৪ নাম্বার পাতায়, “পুজো কি,পুজো কেন” এই রচনাটির শুরুতে বলেছেন,

“আমি ধর্মহীন মানুষ। যুক্তিবাদে,মুক্তিবাদে বিশ্বাসী। বিশ্বাসী লৌকিকে,ইহলৌকিকে,সাম্যবাদে,মনুষ্যবাদে,বিবাদ-বিতন্ডায়, বৈষম্যের প্রতিবাদে”

এখন আমার প্রশ্ন হলো, কলকাতার সম্মানিত জনগণকে “ঘটি” বলা কোন ধরনের বৈষম্যহীন আচরণ তনা আপু? এটা আপনার কি রকম মনুষ্যবাদে বিশ্বাস প্রমাণ করে? আপ্নি-ই বলুন প্লিজ।

উতসব,আচার, অর্থকড়ি অপচয় এসব বিষয় নিয়ে তনা আপার কয়েকটা কথা আর তার নিজের কথারই বিভক্তি আমাকে ভাবালো খুব। “তুই নিষিদ্ধ, তুই কথা কইস না” গ্রন্থের ৫৮ নং পৃষ্ঠায় তনা বলেছেন,

“ এরকম কি কেউ কখনো বলে যে, এবারের পুজোয় খরচের টাকাটা উন্মুল উদ্বাস্তু মানুষের জন্য ব্যয় করব। অথবা খরচ হতে যাচ্ছে যে কয়েক হাজার কোটি টাকা, সেই টাকা দুভাগ কি তিন ভাগ খরচ হবে অন্য খাতে। ইশকুলে পড়তে না পারা বালক-বালিকাদের লেখাপড়ায়! এবছর বাজি পোড়ানোর খাতে যে টাকা বরাদ্দ ছিলো, সে টাকাটা ছাই করে না দিয়ে বরং অন্য কিছু হোক”

এর যদি সরল মানে খুঁজতে যান, একজন স্বাভাবিক মানুষ কি ভাবতে পারেন। আমার ধারনা, তনার উপরের কথাটি সুন্দর একটি কথা হিসেবেই ভাববেন। উপরের কথা শুনে এমনটাই প্রতীয়মান হয় যে, কোনো উতসবে অহেতুক টাকা-পয়সা খরচ না করে বরং তা দরিদ্রদের মধ্যে বা এমন ভাবে দান করা উচিত যেন মানুষ এই টাকা সেসব উতসবে নষ্ট না হয়ে একটা গঠন-মূলক কাজে লাগে।

কিন্তু দেখেন,

এই তনা আবার তার উক্ত বক্তব্য লেখার আগের প্যারাতেই কি লিখেছেন-(page 58,তুই নিষিদ্ধ,তুই কথা কইস না)

“উতসবের যদি প্রয়োজনই হয়, তবে কি পয়লা বৈশাখ,বর্ষবরণ,নবান্ন-উতসবের উপলক্ষে হতে পারে না? শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নানারকম উতসব চালু করেছেন,সে সব এখন মহাসমারোহে উদযাপিত হয়”

কি কন্ট্রাডিকশন নিজের চিন্তাতেই। একদিকে বলছেন উতসবের অপ্রোজনীয়তার কথা। একদিকে বলছেন দরিদ্রদের সাহায্য করবার কথা। আবার অন্যদিকে বলছেন উতসবের কথা। শুধু ধর্মীয় উতসব হলেই কি অর্থ অপচয় হয় তাহলে? উপরে উল্লেখিত উতসব এরেঞ্জম্যান্টের টাকা কি আকাশ থেকে পড়ে? দরিদ্রদের বাঁচানো ,তাদের সাহায্য করা,পড়াশোনার খরচের কথা কি তবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা শুনলেই তনার মাথায় চাগাড় দেয়? এটলিস্ট, তস্লিমার উপরের মন্তব্য আর পরের মন্তব্যের ভেতর যে কত বড় ফাঁরাক, আপ্নারা কি তা বুঝতে পারছেন? তিনি যা বলেন, তা কি বিশ্বাস করেন?
আবার শুধু তা-ই নয়। এই টাকা বাঁচানোওয়ালী, দরিদ্রদের দুঃখে হতাশ হওনেআলী কলকাতায় এসে পাঁচতলার ফ্ল্যাটে থাকে। (সূত্রঃ তুই নিষিদ্ধ বইয়ের ৫৬ পৃষ্ঠা)।

আবার “তুই নিষিদ্ধ, তুই কথা কইস না” গ্রন্থের প্রথম রচনা “বন্দী আমি” তে আমরা দেখতে পাই, কলকাতা যাওয়ার আনন্দে তস্লিমা টানা ১ সপ্তাহ ধরে প্রিয় প্রিয় মানুষের জন্য শপিং করেছেন,
কি কিনেছেন তিনি? আসুন দেখি-

১) জামদানি শাড়ি
২) আদ্দির পাঞ্জাবী
৩)বই
৪)শুটকি মাছ
৫)মুক্তা গাছার মন্ডা
৬)নকশি কাঁথা
৭) আমের আচার

অথচ তনার বই খুল্লেই খালি বলে বৈষম্যহীনতার কথা, মানুষের কথা। তিনি তার উপরে উল্লেখিত বক্তব্যে কি বড় বড় লেকচারটাই না দিলেন উতসবে কেন মানুষ এত অর্থ নষ্ট করে , এই কথা বলে, কিন্তু দেখেন, কিছু কিনতে যাবার সময় আবার তনা আপা তালে ঠিক। কিনছেন তাদের জন্য যাদের আছে অন্ততঃ পক্ষে কিছুটা হলেও।

সব কিছু বাদ দিলাম, একটা জামদানী শাড়ী বা নকশী কাঁথা’র দাম কত হতে পারে? এই টাকা দিয়ে একজন দরিদ্র শিশু কি একবেলা খেতে বা একটি জামা পেতে পারত না? শুধু বইয়ের পাতাতেই বড় বড় লেকচার। শুধু এখানে এসেই তনা কেবল “নারীবাদী” বলে তার মাইক ছাড়েন।

তিনি বলেন-

আবার এই তসলিমা নাসরিন-ই নিচের কথাগুলো বলেন-

উপরে যদিও তনা এক পর্যায়ে এসে স্বীকার করেছেন তার এই ভন্ডামীর কথা। একেবারে নিজের মুখে। অনেকেই বলতে পারেন, সত্য বলার সৎ সাহস তনার আছে তাই সে বলেছে। আমি তাদের পালটা প্রশ্ন করি, সত্য বলার সৎ সাহস একজন খুনীরও হতে পারে। এমন নজির ইতিহাসে রয়েছে শত শত। তাই বলে কি সেই খুনীর খুন করাটা মাফ হয়ে যায়? যেই তনা এক বইয়ে লেখা বৈষম্যহীনতার কথা, মনুষ্যত্বের কথা সেই, তনাই, বাসার কাজ করছে এমন দরিদ্র একটি মেয়েকে চড় কষিয়ে দিচ্ছে। একটি দেড় বছরের বাচ্চা মেয়েকে মারছে চতুর হাসি হেসেছে বলে। আপনারাই বলুন, একজন দেড় বয়সী মাসুম বাচ্চা, কিভাবে চতুর হাসি হাসে? সে কি চতুর হাসির মানে বোঝে?

তনার “ক” বইটির “পেষন” নামক রচনায় লিখেছেন (পৃষ্ঠাঃ১৮৯)

লক্ষ্য করে দেখুন তো, হুমায়ুন আজাদ যেসব কথা বলছেন, তাকে তাচ্ছিল্য করেই কি বলা হচ্ছে কথাগুলো? তনা বহু আগেই এসব কথা বলে গেছেন এই বলে কি বোঝাতে চাইলেন তিনি? নির্মলেন্দু গুন ( যে কিনা সরকারী টাকা দিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করে ও রাত দিন জুয়া খেলে এসে দরিদ্রদের নিয়ে লিখেন) যখন বললেন, হুমায়ুন আজাদ তনার লেখা নকল করে লিখছেন, তখন কি তনা কোনো প্রতিবাদ করেছিলেন গুনের কথার? একই রকম চিন্তার লেখা আর একই কথা বলা কি নকল? যদি ধরেও নেই আজাদ নকল করেছেন তনার লেখা, তবে আসুন আপনাদের কিছুটা চমক দেই।

আনন্দ পুরষ্কার পাওয়া তনা, যে লেখা বা বইটির জন্য মানে নির্বাচিত কলামের জন্য পরষ্কার পেলেন, সেই লেখাটির কয়েকটি মন্তব্য ও লেখা যে “সুকুমারী” থেকে নকলকৃত তা তনার জবানবন্দীতেই শুনুন-

অথচ তনার অনেক অন্ধ ভক্তরা কিছু হলেই এক লাফ মেরে হুমায়ুন আজাদ যে নকল করেছেন সেই প্রমাণ নিয়ে আসেন। অথচ কি অবলীলায় সে ভন্ডরা চেপে যায় তনার নিজের স্বীকারোক্তি। তনা নিজের মুখে স্বীকার করেছে তার চুরির কথা, লোভের কথা। আবার এই চুরি করা লেখা ও পুরষ্কার পাওয়া নিয়ে তার কি অহংকার দেখুন-এইখানে নিজের লোভ সংবরণ করতে না পারার কথাও বর্ণিত হয়েছে।

একজন মানবতাবাদী,সাম্যবাদী,বৈষম্যের বিরুদ্ধ চারণ করা মানুষ কেন চুরি করে লেখা লিখবেন? চুরি করে লেখা লিখে আবার কেনই বা পুরষ্কার আনতে যাবেন? হ্যাঁ এটা ঠিক যে তনা পুরষ্কার কমিটিকে জানিয়েছেন তার চুরির কথা। এতে করে কি তার চুরি-চামারির ব্যাপারটা ঠিক হয়ে যায়? চুরি করা লেখা লিখে কলকাতায় দামী হোটেলে থেকে,আরামে থেকে আমাদের তনা লিখে দরিদ্রের কথা? হাহ্!!! যেখানে তনা নিজেই কাজের মেয়েকে মারধর করে( উপরে ছবি দিয়েছি)।

আগের পর্বে দেখিয়েছি যে তনা কি একজন মানুষকে প্রথম দেখাতেই তাকে বর্ণনা করেন-

কয়েকটি নমুনা দেখুন-

উপরের উদাহরণে লেনা মেয়েটির কি দোষ? কেন তাকে এভাবে বর্ণিত হতে হবে? দাঁত উচু,স্তনহীন, এই ধরনের উপমা দেয়া কতটা মনুষ্যবাদীতার উদাহরণ???

কার পেচ্ছাবের অসুখ, কে মোটা, এইগুলা কি একটা মানুষের বর্ণনার জন্য শোভন? এইগুলো কি একটি মানুষের নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে?

এই বইয়ের ৫৭ পৃষ্ঠায় এক জায়গায় তিনি আবার একজন কবিকে ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে,

“শহরের ছোটখাটো চশমা পরা আঁতেল আবৃত্তিকার দোলন”

আবার কবি ফরিদ কবির ( উনি সম্ভবত একজন প্রকাশকও) সম্পর্কে তিনি প্রথম দেখাতেই বলেন- পৃষ্ঠা ৬০ এ

“বরং শব্দ খুঁজে পাই সেওড়াগাছের ভূতের মত দেখতে ফরিদ কবির নামের যে কবিকে হারুন সঙ্গে এনেছিলো,তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে”

হায়!! মেদহীন শরীর,সেওড়া গাছের ভূতের মত, ছোটোখাটো চশমাপরা আঁতেল,বিচ্ছিরি,উঁচু দাঁত,উঁচু কপাল,হারসর্বস্ব শরীর,চুলের ছিরিছাদ নেই,পাকা চুল- এই শব্দগুলোই আমাদের নারীবাদী তস্লিমা,মানবতাবাদী তস্লিমা মানুষের পরিচিতি দেবার জন্য বইয়ে লিখেন।

অথচ এই বইয়ের ৫৭ পাতায়( অন্য ভুবন নামে লেখাটির একটি অংশে) তিনি লিখেছেন,

বৈষম্যহীন সমাজ,সমতা আর সাম্যের স্বপ্ন ঝংকৃত হয় প্রতিটি কন্ঠে

উপরে দেখুন কিভাবে কায়সারের স্ত্রীকে তস্লিমা বর্ণিত করেছেন। বেঁটে বলে। কেন? এই কায়সারের সাথেই তনার শারীরিক সম্পর্ক ছিলো। অথচ তনার কাছে হেনু ফোন করে রিকোয়েস্ট পর্যন্ত করেছেন।

এইভাবে-


“কায়সারকে বলেওছি কয়েকদিন, তুই আর আসিস না আমার কাছে,হেনুকে নিয়ে সুখে থাক।অন্য কোনো মেয়ের কাছে যাওয়ার তো দরকার নেই। কায়সার তবুও আসে । সপ্তাহে একদিন হলেও আসে, এক ঘন্টার জন্য হলেও আসে। অবশ্য মাঝে মাঝে সপ্তাহ দুসপ্তাহ পার হয়ে যায়,এমনকি মাসও পার হয়ে যায়,মন হয় কায়সার বুঝি আর আসবে না। কিন্তু ঠিকি উদয় হয়”

“একদিন কায়সারের বউ হেনু আমাকে ফোন করে বলেছে, “কি করে আমার স্বামীর সঙ্গে আপনি সম্পর্ক করেন?আপনার লজ্জা হয়না?আপনি না মেয়েদের কথা লিখেন? তবে আরেক মেয়ের সর্বনাশ করেন কেন?”

“আমি ক্ষণকাল বাক্যহারা হয়েছিলাম। এরপর শুকনো গলায় বলেছি,”আপ্নার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন, তাকে ফেরান। তাকে বলেন যেন আমার কাছে আর না আসে”

বড় অপরাধী লাগে নিজেকে’ কিন্তু কি করে ফেরাবো আমাকে। এই সংগীহীন প্রেমহীন জীবনে কায়সার যদি কোনো কোনোওদিন আমাকে সামান্য সংগ দেয়,আমি কি করে বাঁধা দেব নিজেকে সেটি গ্রহণ না করার জন্য? আমাকে সন্যাসী হতে হবে যে! এত পিপাশা রেখে কি করেই বা জল ছোব না! আমি তো মানুষ দেবী নই!অবিবাহিত কোনোও পুরুষ প্রেমিক যদি পেতাম অপরাধবোধটি হয়ত যেত”

তনা হেনুকে সাহায্য তো করলেন-ই না, বরং হেনুকে বেঁটে বলে “ক” বইতে বর্ণনা করলেন।

একজন নারীবাদী মানুষ কিভাবে একজন নারীকে বা কোনো মানুষকে এইভাবে বর্ণনা করতে পারেন? একটি মানুষের নিজের চেহারা বা শরীরের উপর কি তার নিজের কোনো হাত আছে? মানুষ তো নিজেকে নিজে তৈরী করেনি। এটি প্রকৃতিপ্রদত্ত। তাহলে কেন তনা একমুখে মনুষ্যবাদের কথা বলেন? কেউ কি জবাব দেবেন?

স্বামীদের এই ধরনের চিটিং তো নারীদের উপর একটা অত্যাচার। ঠিক না? তাহলে তস্লিমা, আপনি কিভাবে নারীদের উপর এই অত্যাচার হচ্ছে যেনেও সেই অত্যাচারী স্বামীদের সাথে যৌন সম্পর্ক করে বেড়াচ্ছেন? কেন তাদের কামনা করছেন? কেন তাদেরকে আপনার যৌন দ্বার তাদের জন্য খুলে দিচ্ছেন? কেন? আপনাকে কায়সারের বউ হেনু ফোন করে এত অনুনয় করে বলল, আপনাকে লজ্জা দিলো, আপনি অপরাধ করছেন এইটা বইয়ে স্বীকারও করলেন। তারপরেও কিভাবে আপনি কায়সারকে কামনা করতেন। প্রশ্রয় দিতেন?

তনা তার “ক” বইতে নাইমুল হাসান খানকে কিভাবে উপস্থাপন করেছেন তা তনার একটি রচনা “বাহিরে-অন্তরে” এর ১১৬ পৃষ্ঠা থেকে ১২০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়লেই জানতে পারবেন। আমি কিছু উদাহরণ দিচ্ছি-

অথচ এই এত খারাপ ও রাজাকারের সন্তান নাঈমকে তনা তার শরীর দিয়েছেন নির্দ্বিধায়। যদিও তখন নাইমের নতুন বউ ছিলো। দেখুন-

নাইমের নতুন বিবাহিত স্ত্রী থাকার পরেও নাঈমের সাথে শারিরীক সম্পর্ক কি রকজন নারীর উপর অত্যচার বা নিপীড়নকেই সাহায্য করা নয়? অথচ ঠিক এই একি ব্যাপার তস্লিমা করেছে কায়সারের সাথে,নাইমের সাথে,ইমদাদুল হক মিলনের সাথে।

এই যে তনা বলছেন যে, শারিরীক ক্ষুদা মেটানোর অন্য কোনো রাস্তা থাকলে তিনি তাই করতেন। এই কথাটি কি হাস্যকর নয়? কারন যদি শারিরীক ক্ষুদা মেটানোই প্রধান ব্যাপার হবে তবে ভাড়া করা কিছু লোক বা যে সেক্সুয়াল ইন্সট্রুমেন্ট পাওয়া যায়, তা দিয়েই তো করলে পারতেন তনা? এমনকি হস্ত মৈথুনের কথা তো এই “ক” বইতেই উল্লেখ আছে। সবচাইতে বড় কথা, একজন নারীবাদী হয়ে বার বার কেন নারীদের সাথেই এই প্রতারণার সহযোগী হচ্ছে তনা? কেন এই প্রতারকদে স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের কাছে ধরিয়ে না দিয়ে নিজেই এই প্রতারণার অংশ হয়েছেন?

কোথায় তার নীতিবোধ? কোথায় তার মনুষ্যত্ব, কোথায় তার সব বড় বড় কথা?

আমার কথা হলো, এই যে একজন বিবাহিত লোক যে চিটিং করছে তনার সাথে এই চিটিং টা কি অন্য একজন নারীর সাথে প্রতারণা বা নির্যাতন নয়? ঠিক একই কাজ তনা কায়সার নামে তার একজন বন্ধুর সাথে করেছে। সেখানেও কায়সার ছিলো বিবাহিত। আবার ইমদাদুল হক মিলনের সাথেও যৌন সম্পর্কে মিলিত হয়েছে তনা। মিলনেরও ঘরে বউ ছিলো। এই যে চিটিংবাজী করছে এই পশুজাতীয় লোকেরা তাদের সবার বউ-ই তো নির্যাতিত বা প্রতারণার স্বীকার। তনা কি এই লোকগুলোর বউকে গিয়ে তাদের এমন যৌনাচারের কথা বলেছে?

না বলেনি। বরং তাদের এই চিটিংবাজীতে অর্ধেক ভূমিকাই রেখেছে এই তস্লিমা। ধরা যাক, কেউ একজন যুক্তি দিলো, তনার কি আতো দায় পড়েছে। যার দরকার সে আসবে। কিন্তু তাতেও যুক্তি টেকেনা। কারন কায়সার নামে যে লোকটি তনার দেহের লোভে আসত তার স্ত্রী তনাকে টেলিফোনে কি বলেছে তা তো আপ্নাদেরকে পোস্টের শুরুতেই বলেছি। তনা সেই কথার প্রেক্ষিতে কি বলেছে?
বলেছে, “আপনি কায়সারকে বলুন,আমার কাছে যাতে না আসে”
এই “ক” বইয়ের ২৪৮ পৃষ্ঠাতেই কায়সার আর তনার যৌন সঙ্গমের বর্ণণা আছে।

আবার দেখুন, কিভাবে তনা একমুখে বলছেন যে, তিনি প্রতিশোধ পরায়ন নন, তিনি খুব ক্ষমাশীল,তিনি তার মায়ের মত হয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

আবার এই তনাই তার অন্য আরেক লেখায় দেখিয়েছেন যে, কিভাবে তিনি প্রতিশোধ নিয়ে থাকেন। কিভাবে মানুষকে মানসিক শাস্তি দিয়ে থাকেন প্রতিশোধপ্রবণতা থেকে। নীচে দেখুন-

আপ্নারাই বলুন তো, যেখানে তস্লিমা নাস্রিন তার নিজের লেখাতেই তার ভন্ডামীর কথা প্রকাশ করেন। তার নিজের করা নারী নির্যাতনের কথা স্পষ্ট ভাবে জানান দেন, সেখানে কিভাবে তিনি নিজেকে নারীবাদী নারীবাদী বলে চাউর করে বেড়ান? কিভাবে তার ভক্তরা এসব দেখেও অন্ধের মত দৌড়াতে থাকেন? চোখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি, তারপরেও কি টনক নড়েনা কারো?

Source : http://www.nagorikblog.com/blog/536