বরিশালে বাস ধর্মঘট অব্যাহত

বাস ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে । ছাত্রলীগ, যুবলীগের মহড়া শ্রমিক নেতাদের বাসায় তল্লাশি, ছাত্রলীগ কর্মীরা টিকেট বিক্রেতা কাউন্টার পাহাড়াদার। গত মঙ্গলবার অবৈধ যানবাহন ও কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ির বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকে কেন্দ্র করে পুলিশ-শ্রমিকদের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষের সুযোগে পুলিশ প্রোটেকশনে বরিশাল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস-টার্মিনাল দখল করে নিয়েছে একটি গ্রপ। বাস টার্মিনালটি হাসানাতের আশির্বাদ পুষ্ট আফতাবের নিয়ন্ত্রনে ছিল । শ্রমিক পুলিশ সংঘর্ষের সুযোগে সিটি মেয়র হিরনের অনুসারি ক্যাডাররা শতাধিক মোটর সাইকেলে মহড়াসহ পুলিশ প্রহরার বাস-টার্মিনাল দখল করে নেন। বাস-টার্মিনাল দখলে নেতৃত্ব দেন টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কামাল সরদার ওরফে ফাসি কামাল সাবেক ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আউয়াল মোল্লা, গড়িয়ার পাড়ের শ্রমিকলীগ নেতা কামাল মোল্লা, লিটন মোল্লা, জলিল, জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মনির ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ ভূইয়া,, যুবলীগের শাহিন, মোঃ উল্লাহ, যুবলীগ নেতা অরুনের ভাই লাল হাওলাদার, ছাত্রদলের ফিসারী শাহিন, যুবলীগ নেতা মোস্তফা জিহাদ, টেম্পু শ্রমিক নেতা খলিল, ছাত্রলীগের ২০নং ওয়ার্ড নেতা জসিমসহ প্রায় দুই শতাধিক ক্যাডার। এদিকে প্রশাসন-শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে গতকাল এরা বাস-টার্মিনাল দখল করে নেয়।

টার্মিনাল দখল করে বিভিন্ন কাউন্টার দোকানপাট, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করে। এদিকে মাইক্রোবাস টার্মিনালের দখল নিয়েছে কাশিপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী টিটু। সূত্র জানা যায়, শ্রমিকদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আহূত ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে ছাত্রলীগ যুবলীগ ক্যাডারেরা বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারের তালা ভেঙ্গে দখল করে নিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন কাউন্টারের শ্রমিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোর করে বাসা থেকে তুলে এনে কাউন্টারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। লোকাল বাসের মাত্র ভুরঘাটা রুটে টেম্পুর চালক দিয়ে একটি গাড়ি ছাড়া হয়েছে দুরপাল্লার পরিবহনে নথুল্লাবাদ থেকে কোন প্রকার যাত্রী উঠানামা করতে দেয়া যায়না। ছাত্রলীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বিএম কলেজ শাখার একাংশের কর্মীরা টার্মিনালের বিভিন্ন স্পটে পাহাড়া দিচ্ছে। তাছাড়া দলীয় নেতা পালাক্রমে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে। বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরার ক্যাডারেরা পছন্দ মাফিক খাবার নিয়ে যাচ্ছে। তোলা শুরু চাঁদা। অন্যদিকে বিভিন্ন কাউন্টার দোকান পাটের ভাল বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া গেছে। এদিকে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্যাডে কামাল সরদার নামে জনৈক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। শ্রমিকেরা কাজে যোগদান করেছে। বাস-টার্মিনালে স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করেছে।

এদিকে কামাল সরদার বরিশাল জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের প্যাড ব্যবহার করতে পারে কিনা এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন কামাল আওয়ামী লীগের কেউ নয়। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মোঃ ইউনুছ এমপি জানান, আমি এই মাত্র সংসদ অধিবেশন থেকে বের হয়েছি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে আমরা জানাতে পারব। এদিকে গতকাল রাতে মহানগর শ্রমিক লীগের আহবায়ক ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ আফতাব হোসেন জানান পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত আছে। কোন শ্রমিক কাজে যোগদান করেন। এবং কোন রুটে বাড়ি চলাচল করেনি। আমাদের অনেক শ্রমিককে ক্যাডারেরা ধরে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। তিনি আরও জানান, পুলিশের অত্যাচারে ইউসুফ গাজী নামে এক শ্রমিক মারা গেছে। অনেক শ্রমিকের হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান দখলকারী নেতা কালাম মোল্লা জানিয়েছেন, আফতাবের কবল থেকে বাস-টার্মিনাল ও শ্রমিকদের মুক্ত করতে আমরা দখল নিয়েছি। এখন এখানে কোন চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হবেনা। প্রকৃত শ্রমিকেরা বাস-টার্মিন॥লে থাকবে। অন্যদিকে আফতাব হোসেনকে প্রধান আসামী করে অজ্ঞাত ৫শ’ ব্যক্তির নামে বিমান বন্দর থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাঁধা দান জনজীবনে বিশৃঙ্খলা। সম্পত্তির ক্ষতিসাধন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে গতকাল র‌্যাব, শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস থেকে বেশ কিছু লাঠি উদ্ধার করেছে। বাস-টার্মিনাল দখল প্রসঙ্গে বরিশাল সিটি মেয়র এ্যাড. শওকত হোসেন হিরনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকৃত শ্রমিক ছাড়া কেউ বাস-টার্মিনালে যেতে পারবেনা। শ্রমিক ছাড়া কেউ বাস-টার্মিনালে গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাস-টার্মিনাল দখল করার জন্য কাউকে নির্দেশ দেয়া হয়না। জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের প্যাডে ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, কামাল সরদার আওয়ামী লীগের কেউ নয়। সে অবৈধ ভাবে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্যাড ব্যবহার করছে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।