ব্যাখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী – কেন নতুন বিমানবন্দর

হযরত শাহজালাল (রা.) বিমানবন্দরের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ষাটের দশকে। তখন ঢাকা ছিল প্রাদেশিক রাজধানী এবং লোক ছিল সাত কোটি।

“এখন ঢাকা একটি স্বাধীন দেশের রাজধানী। গত ৫০ বছরে লোকসংখ্যা, ব্যবসা বাণিজ্য বেড়েছে।”

“বোয়িং-৭৭৭ এবং এয়ারবাস এ-৩৮০-এর মতো সুপরিসর বিমানের আর্বিভাব ঘটেনি,” জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান অবস্থায় এসব বিমানের অবতরণের কোনো সুযোগ নেই এই [শাহজালাল আন্তর্জাতিক] বিমানবন্দরে।”

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য পাঠ এবং প্রশ্নের জবাব দেওয়া মিলিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা বক্তব্য দেন।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দরের বিরোধিতা করে গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকা-মাওয়া সড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষে মতিউর রহমান নামে পুলিশের এক উপপরিদর্শক নিহত হন। ব্যাপক সংঘর্ষে আহত হয় অর্ধশত।

শ্রীনগরে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে তিনটি মামলা করে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান বাদি হয়ে আদালতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। চারটি মামলায় মোট ২১ হাজার জনকে আসামি করা হয়।

খালেদাকে আসামি করার প্রতিবাদ এবং আরো কয়েকটি দাবিতে আগামী ৭ ফেব্র”য়ারি সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি।

‘শাহজালাল বিমানবন্দরে দুটো রানওয়ে সম্ভব নয়’

প্রধানমন্ত্রী জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরে নিয়োজিত ডেনিশ উপদেষ্টা (কনসালটেন্ট) র‌্যামবল ২০০৬ সালে বিমানবন্দর বিষয়ক মাস্টারপ্ল্যান দেয়।

“ওই পরিকল্পনায় ঢাকার অদূরে এমন জায়গায় নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের সুপারিশ করা হয় যেখানে অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাব পড়বে না।”

শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন একটি রানওয়ে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটি রানওয়ে দিয়ে এখন আর চলে না। আবার দুটো রানওয়ে এখানে বানানো সম্ভব নয়। আগামী ২০ বছরে বিমান চলাচল সবচাইতে বাড়বে পাবে এশিয়াতে।” ২০১০ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা করেছে ৩০ হাজার তিনশ ৩৮টি- এ তথ্য জানিয়ে প্রধনামন্ত্রী বলেন, “২০২৯ সালে তা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। শাহজালাল বিমানবন্দরের বর্তমান অবকাঠামো ও একটা রানওয়ে দিয়ে তা সম্ভব নয়।”

“বর্তমানে প্রতি বছরে ৩০ শতাংশ যাত্রী বাড়ছে। যদিও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছে কিন্তু থেমে নেই মানুষের চলাচল। আগামী চার বছরে ১২ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন হবে শাহজালাল বিমানবন্দরে। এত লোকের চলাচলের ব্যবস্থা এখানে করা সম্ভব নয়।”

‘ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় ছিল’
ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করে সরকার আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাতায়াতকারী বিমানগুলোর টেকনিক্যাল ল্যান্ডিংয়ের জন্য স্থানটি খুবই উপযোগী। এখানে বিমানবন্দর হলে বিপুল সংখ্যক বিমান টেকনিক্যাল ল্যান্ডিংয়ের জন্য এখানে অবতরণ করত এবং বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো।”

প্রধানমন্ত্রী দেশে আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির পক্ষে বিভিন্ন জরিপের ফলও তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে।

তিনি বলেন, “২০১০ সালে বিশ্বে বিমান চলাচল থেকে আয় হয়েছে আটশ ৯০ কোটি মার্কিন ডলার। এশিয়ার বিমান সংস্থাগুলো এই সময় আয় করেছে পাঁচশ ২০ কোটি মার্কিন ডলার।”

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে নতুন বিমানবন্দর হলে উপশহর, রাস্তা-ঘাট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট নানা ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠতো- এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এর ফলে স্থানীয় বিপুল মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১০ সালে দুই লাখ মেট্রিক টন কার্গো পরিবহন করেছে শাহজালাল বিমানবন্দর। এর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “বলা হচ্ছে এত বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিমানবন্দর নির্মানের প্রয়োজনীয়তা কী? কিন্তু, সরকার এটা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথবা বিওটিটি-এর আওতায় নির্মাণের চিন্তা করছে। এতে সরকারের অর্থের প্রয়োজন হবে না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা আমার গত টার্মেই নিয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের অভাবে শুরু করা যায়নি।”

Source : Bdnews24.com