দৃষ্টি নন্দনকারা আশ্রম হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র

ভক্তদের অনুদানে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে দৃষ্টি নন্দন কারা শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী মোনাই পাগলের আশ্রম। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে রক্ষণা বেক্ষন করা হলে মোনাই পাগলের আশ্রমটি হতে পারে আগৈলঝাড়ার একটি পর্যটন কেন্দ্র।


জোবারপার গ্রামের হালদার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী ওরফে মোনাই পাগল। তার পিতা গৌর মোহন হালদার। মোনাই পাগলের জন্ম হয়েছে কতসালে তা কেউ বলতে না পারলেও মৃত্যু হয়েছে বাংলা ১৩৭৩ সালের ২৮ জৈষ্ঠ। ওই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে মোনাই পাগলকে ঘিরে জানা গেছে অসংখ্য চমকপ্রদত্ত তথ্য। সবর্দা সত্য কথা বলা, ন্যায় পথে চলা ও পরোপকারী ছিল মোনাই পাগলের প্রধান বৈশিষ্ট। এ ছাড়াও অত্র অঞ্চলে হিন্দু ধর্মের ধর্ম প্রচারক হিসেবে তিনি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। সৃষ্টি কর্তার কাছ থেকে লাভ করা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারীও ছিলেন তিনি।

চমকপ্রদ ঘটনার মধ্যে একটি হচ্ছে, ওই এলাকার জনৈক নিলকান্ত ঘরামী তার জমাজমি নিয়ে মহাবিপদে পড়েন। কোন ভাবেই বিপদ মুক্ত হতে পারছেন না। উপায়অন্তুন না পেয়ে নিলকান্ত মোনাই পাগলের কাছে গিয়ে তার বিপদের কথা খুলে বলেন। বিপদ মুক্ত হওয়ার জন্য মোনাই তাকে সাতদিন ধৈয্য ধরে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরন করার কথা বলেন। তার পরামর্শের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেন নিলকান্ত। সাতদিন পর সে সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত হন।

ওই এলাকার জনৈক সূর্যমনি মোনাই পাগলের দর্শন চান। সূর্যকে পরীক্ষা করার জন্য তিন বছর না খেয়ে জঙ্গলঘেরা পাহারে পাঠিয়ে দেন মোনাই। এই ঘটনাটি অত্যন্ত চমকপ্রদ্যত্ত। সূর্য মনির চোখ বন্ধ করে মুখে একটি পাতা দিয়ে মোনাই তাকে নিক্ষেপ করেন। কিছুক্ষন পর সূর্য মনি চোখ খুলে দেখতে পান সে এক জঙ্গলঘেরা পাহারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। তিন বছর পর হঠাৎ একদিন মোনাই পাগল সূর্য মনির সাথে জঙ্গলঘেরা পাহারে দেখা করেন। সেখানে বসে মোনাই পাগল সূর্য মনিকে আর্শীবাদ করে ডান হাত ধরে নিক্ষেপ করলে সূর্য তার বাড়ির উঠানে এসে পৌছে যান। তাৎক্ষনিক সূর্যমনি দৌড়ে মোনাই পাগলের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন মোনাই তার ঘরেই অবস্থান করছেন।

পরোপকারী মোনাই পাগল একদিন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন এমন সময় দেখেন রাস্তার পাশ্ববর্তী ডোবার মধ্যে কচুরিপানার পচা ঢিপের ওপর একটি লোক ছটফট করে কাতরাচ্ছে ও চিৎকার করছে। মোনাই তার কাছে গিয়ে দেখতে পান ওই লোকটির সমস্ত শরীরে গুটি বসন্ত উঠে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। মোনাই পাগল ওই লোকটিকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। মোনাই তার সেবা করে লোকটিকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলেন। মৃত্যুর পথযাত্রী ভেবে পরিবারের লোকজন গুটি বসন্তওয়ালা লোকটিকে কচুরিপানার ঢিপের ওপর ফেলে যাওয়া ব্যক্তিটির নাম হচ্ছে অহেদ। সুস্থ হয়ে অহেদ মোনাই পাগলের শীষ্য হতে চান। মোনাই পাগল অহেদকে ১২ বছর কথা না বলে থাকার নির্দেশ দেন। সেই থেকে অহেদ কথা বলা বন্ধ করে দেন। দশ বছর পার হওয়ার পর মোনাই পাগল অহেদকে কথা বলার নির্দেশ দেন। মোনাই পাগলের এহেন অসংখ্য কাহিনী রয়েছে।

জিবিত অবস্থায় বাংলা ১৩৫৫ সালে মোনাই পাগল আশ্রম তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৩৭৩ সালের ২৮ জৈষ্ঠ শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী ওরফে মোনাই পাগল দেহত্যাগ (মৃত্যুবরন) করেন। মোনাই পাগলের ব্যবহৃত পানসি নৌকাটি এখনও আশ্রমের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে। ভক্তরা প্রায়ই মোনাই পাগলকে তার পানসি নৌকায় বিচরন করতে দেখেন। মোনাইর মৃত্যুর পর নিলকান্ত ঘরামি আশ্রমের জন্য ৩৩ শতাংশ জমি দান করেন। জীবিত অবস্থায় মোনাই পাগলের নিজ হাতে শুরু করা আশ্রমের কাজটি তার মৃত্যুর পর পরই বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ভক্তদের অনুদানে তিল তিল করে গড়ে তোলা হয় নয়নাভিরাম একটি আশ্রম। বাংলা ১৩৯৪ সালে মোনাই পাগলের আশ্রমটির নির্মান কাজ সমাপ্ত করা হয়। ৩ একর ৬০ শতক জমির ওপর নয়ানাভিরাম আশ্রমটিতে আটজন ভক্ত নিঃস্বার্থ ভাবে কর্মরত রয়েছেন। আশ্রমের পরিচালন শ্রী ঠাকুর দাস জানান, পাগলের আশ্রমে ১২ মাসই অনুষ্ঠান থাকে। এরমধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে ১ বৈশাখ হরিণাম কীত্তন, স্নান ও মেলা, ২৮ জৈষ্ঠ্য তিরোধান কীত্তন, ঝুলন, পদাবলী কীত্তন ইত্যাদি। তিনি আরো জানান, ওইসব  অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ বার্মা, নেপাল ও ভারত থেকে হাজার হাজার ভক্তরা সমবেত হন।


ক্যাপশনঃ  নয়নাভিরাম মোনাই পাগলের আশ্রম (বামে), পানসি নৌকা (ডানে), ইনসেটে মোনাই পাগল