মনে হয় এমএলএম কোম্পানীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রচারিত আলোচিত কোম্পানী হচ্ছে এই ডেস্টিনি।
আমার এক পরিচিত ব্যক্তি আছেন। যিনি খুব ধার্মিক। হঠাৎ শোনা গেল তিনি ডেস্টিনির এমএলএম ব্যবসার সাথে জড়িত। মানুষ ধর্মীয় বিধিনিষেধ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি তার যুক্তি দেখাতেন। কেউ যদি বলত এসব সুদ। ইসলামে সুদ হারাম। তিনি বলতেন এগুলো সুদ না ইন্টারেস্ট!
সমস্যা এটা না। সমস্যা একটা রোগ। যার নাম দেয়া হয়েছে দি ডেস্টিনি সিন্ড্রোম। ডায়রিয়ায় যেমন মানুষ গনহারে আক্রান্ত হয় তেমনি এই ডেস্টিনি সিন্ড্রোমে মানুষ গনহারে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এই রোগ সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।
কখন বুঝবেন আপনার পরিচিতজন এই রোগে আক্রান্তঃ
১
ধরেন আপনি বসে আছেন বা শুয়ে আছেন বা টিভি দেখছেন বা কোন কিছু করছেন। যেকোন কিছু হতে পারে। এমন সময় পুরোনো কলেজ ফ্রেন্ড যার সাথে গত মাস তিনেক ধরে কোন যোগাযোগ নেই, হঠাৎ কল দিল মোবাইলে। জানতে চাইল আপনি কেমন আছেন, কি করছেন,পড়ালেখা কেমন চলছে ইত্যাদি। মিনিট চারেক খোজখবর নিতেই চলে গেল। আপনার খটকা লাগতে পারে। এই বন্ধুকে আপনি কিপটা হিসেবে জানতেন এবং দেখেছেন অতিশয় সঞ্চয়ী হিসেবে। তার হঠাৎ কি হল!
মিনিট চারেক আপনার এবং পরিবারের সবার খোজখবর নেয়ার পর বন্ধু জানতে চাইল আপনি পড়ালেখার পাশাপাশি কি করছেন?
আপনি আমার মত বোকা হলে হয়ত বলবেন, মুভি দেখছেন,ক্রিকেট খেলছেন বা বই পড়ছেন। কিন্তু বন্ধু আবার প্রশ্ন করবে এই করা সেই করা না। আয় উপার্জনের জন্য কি করছেন?
কি আর বলবেন। হয়ত বলবেন কিছু না। আমাদের দেশে তো আর বিদেশের মত পার্ট টাইম জব নেই। আর আমাদের কেন যেন টাইম ও থাকে না। আপনার কথা শুনে বন্ধুটি হেসে বলবে, আরে আমি তো মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা উপার্জন করছি।
টাশকি খাইতে পারেন। তবে খাইবেন না। কারন আপনার বন্ধু ডেস্টিনি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। অতএব ফোনটা রেখে নিজের কাজে লেগে যান। ভবিষ্যতে এই নাম্বার থেকে কল আসলে না ধরার চেষ্টা করবেন।
২
আপনি ভার্সিটি থেকে বের হইছেন। কি করা যায় জাতীয় চিন্তা মাথায় আসার চেষ্টা করছে এমন সময় দেখলেন আরেক বন্ধু সামনে। সে হাসিমুখে এসে হাত টাত মিলানোর পর আপনাকে রেস্টুরেন্টে নিয়া গেল। আপনি হয়ত আপনার বন্ধুর এমন মহত্ত্ব দেখে আনন্দিত এবং কিছুটা চিন্তিত।
তখন দেখলেন খাবারের অর্ডার দিয়ে বন্ধুটি আপনার সামনে একটি কাগজ ধরে ডাইনে বামে উপরে নিচে গোল্লা গোল্লা কিছু জিনিস দিয়ে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে। বন্ধুটির মুখ থেকে বার বার কিছু শব্দ বের হচ্ছে যেমন ম্যাচিং, লেফট সাইড, রাইট সাইড,সেন্টার,প্রোডাক্ট,মালয়েশিয়া,ট্রি প্লান্টেশন, তাহলে আপনার বুঝতে হবে আপনার বন্ধুটি ডেস্টিনি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। খাওয়া শেষ হলে বের হয়ে যাবার তার সাথে যথা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলতে চেষ্টা করবেন। কারন এই রোগ ছোয়াছে বলে অনেকের ধারণা!
৩
আপনার কোথাও তাড়া আছে তবুও আপনার পরিচিত জন আপনাকে কোথায় যেন নিতে চাচ্ছে। অবশেষে একরকম জোড় করেই এক জায়গায় নিয়ে গেল। আপনি ভদ্রতা বজায় রাখতে গেলেন। কিন্তু যাওয়ার পর অবস্থা দেখে আপনার হেচকি উঠার মত অবস্থা হল। আপনি কি কোন ওয়াজ মাহফিলে এসেছেন? এত টুপিয়ালা পাঞ্জাবী পড়া লোক এখানে কেন? সবাই এত কিসের আলোচনা করছে? আলোচনা দেখে মনে হচ্ছে বাঙলাদেশের ভবিষ্যত সব পরিকল্পনা নির্ধারিত হচ্ছে এখানে। একটু খেয়াল করে দেখলেন সব টেবিলে একজন বা দুইজন লোক কিছু মানুষকে খাতায় আকিঁবুকিঁ করে কিছু বোঝাচ্ছে। ম্যাচিং,মালয়েশিয়া, ডায়মন্ড, গোল্ড, ক্রাউন এই শব্দগুলো বাতাসে ভাসছে।
আপনার পরিচিত ভদ্রলোক কোন একটা টেবিলের দিকে আপনাকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন। সেখানে কাগজ কলম নিয়ে গোল্লা জাতীয় কিছু একে বোঝানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন কয়েকজন!
তাহলে আপনি বুজে নিবেন আপনি সহজ কোন জায়গাতে নেই। আপনি বড় কঠিন এক জায়গায় এসে পড়েছেন। এই জায়গা বড়ই বিচিত্র! এখানে সব ম্যাচিং এর কারবার।
এরা সবাই ডেস্টিনি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। এটাকে এই রোগের একটি ছোটখাট উৎপাদন কারখানাও বলা যায়। আপনি রোগের উৎপাদন কারখানায় চলে এসেছেন।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হয়ে যান এবং যে ভদ্রলোক আপনাকে এখানে এনেছেন তার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
ডেস্টিনি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আরো কিছু লক্ষণঃ
১। এরা যখন স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ পায় তখন সব কথা বার্তা এক জায়গায় নিয়ে শেষ করে। সেই জায়গাটার নাম ডেস্টিনি।
২। এরা গোল্লা আকাঁ ডাইনে বামে মিলানো এসব বিষয়ে অতি পারদর্শী। এমনকি মুখে মুখে ও ডাইন বাম মিলিয়ে ফেলতে পারে।
৩। এরা মনে করে দেশের যাবতীয় সমস্যা, যেমন বিদ্যুৎ সমস্যা,গ্যাস সমস্যা,খাদ্য সমস্যা,জনসংখ্যসা সমস্যা সবকিছুর সমাধান করবে এমএলএম কোম্পানী ডেস্টিনি। তারা বলবে ডেস্টিনি এমন সব প্রযুক্তি দেশে আনবে চীন থেকে যাতে বর্তমানে এক হেক্টরে যত ধান উৎপন্ন হয় তার দশগুন ধান উৎপন্ন হবে। বিশাল সব বৈদ্যুতিক প্লান্ট থেকে শুরু করে হাস্পাতাল সব প্রতিষ্টা করবে এই কোম্পানী।
৪। এরা কথা বলতে পারে প্রচুর। যে ব্যাক্তি কথা কম বলত এই রোগে আক্রান্ত হবার পর তার কথা বলার ক্ষমতা দশ বার গুন বৃদ্ধি পায়।
Source : SomeWhereinBlog.Net