যৌতুকের বলি মৃত্যুর কাছে হার মানলো অগ্নিদগ্ধা গৃহবধূ

গতকাল সোমবার দুপুরে পারুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন। এ ঘটনায় ওইদিন বিকেলে গৌরনদী থানায় ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অগ্নিদগ্ধা গৃহবধূ পারুল বেগমের (২০) পিতা শাহজিরা গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধী মোতালেব মুন্সী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিরা হচ্ছে নিহত পারুলের পাষন্ড স্বামী আল আমিন ফকির, তার মা মনোয়ারা বেগম, বোন পারুল আক্তার, বোন জামাতা সেকান্দার আলী মোল্লা, ভাবী কলি বেগম ও চাচা আনোয়ার ফকির।

জানা গেছে, পূর্ব শাহজিরা গ্রামের মৃত সাত্তার ফকিরের পুত্র আল-অমিন ফকিরের সাথে গত এক বছর পূর্বে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয় পশ্চিম শাহজিরা গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধী মোতালেব মুন্সীর কন্যা পারুল বেগমের। বিয়ের সময় বর পক্ষের দাবিকৃত যৌতুকের ৩৫ টাকা পরিশোধ করা হয়। বিয়ের পরবর্তী সময়ে পূর্ণরায় যৌতুকলোভী আল-আমিন ও তার পরিবারের লোকজন তার (মোতালেবের) কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা যৌতুক আনার জন্য পারুলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। তাদের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা আনতে অস্বীকার করায় প্রায়ই পারুলকে শারিরিক নির্যাতন করা হতো। গত রবিবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে পূর্ণরায় যৌতুকের টাকার জন্য আল-আমিনের মা মনোয়ারা বেগম পারুলকে শারিরিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে পারুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এসময় মনোয়ারা বেগম পুড়িয়ে মারার জন্য পারুলের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পারুলের ডাকচিৎকারে পাশ্ববর্তী বাড়ির লোকজন এগিয়ে এসে মুর্মুর্ষ অবস্থায় তাকে (পারুলকে) উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন বিকেলে এ্যাম্বুলেন্সযোগে অগ্নিদগ্ধা পারুল বেগমকে ঢাকার সোহয়ার্দী হাসপাতালের বার্ন ইউনিয়ে ভর্তি করা হয়।

পুলিশ ঘটনার মূলহোতা নিহত গৃহবধূ পারুল বেগমের যৌতুকলোভী শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করেছে। গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম জানান, অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের জোর প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে সোমবার বিকেলে এ্যাম্বুলেন্সযোগে নিহত পারুল বেগমের লাশ ঢাকা থেকে তার পৈত্রিক বাড়ি শাহজিরায় পৌছলে নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে পুরো এলাকার আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে।