প্রধানমন্ত্রীর নিজ এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছয়টি পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায়

প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্রের রোষানলে এখন রিতিমতো ভিটেমাটি ছাড়ার আতংকে রয়েছেন। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত আমবৌলা ও নিমেরপাড় গ্রামের ভূমিদস্যু চক্রের কতিপয় প্রভাবশালীরা ইতোমধ্যে ওইসব সংখ্যালঘূ পরিবারের আংশিক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। বাকি সম্পত্তি দখল করার জন্য সংখ্যালঘু পরিবারদের ভারতে যাওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। অন্যথায় ওইসব সংখ্যালঘু পরিবারদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাবশালীদের অব্যাহত হুমকির মুখে ওই পরিবারগুলো এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।


ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শুয়াগ্রামের দিনমজুর শশধর দাস (৮৩), ভদ্র কান্ত দাস (৮০), নিরঞ্জন দাস (৫২), কালা চাঁদ ওরফে বীরেন দাস (৪৮), নিম চাঁদ (৪৬) ও নিলমনি দাস (৪৫) ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত তাদের পূর্ব পুরুষের ৩ একর ৫৯ শতক সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছেন। মাঠ জরিপেও তাদের নামে রেকর্ড রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে অসহায় দিনমজুর ওইসব সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পরে পাশ্ববর্তী আগৈলঝাড়ার আমবৌলা গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুল হান্নান হাওলাদার, আবুল বাশার ওরফে বাদশা হাওলাদার ও নিমারপাড় গ্রামের গঞ্জর আলী শেখের। প্রভাবশালী ওই ভূমিদস্যু চক্রটি জাল দলিলের মাধ্যমে সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের ওই জমির মালিকানা দাবি করে দখলের জন্য যান। এসময় তাদের বাঁধা দেয়ায় শশধর দাসের পুত্র প্রাইভেট শিক্ষক অরুন দাসকে (৪৩) অপহরন করা হয়। ভূমিদস্যুরা প্রকাশ্য দিবালোকে অরুন দাসকে অপহরন করে বেধম মারধর করে। পরবর্তীতে তাকে আটক করে রেখে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে প্রভাবশালী হান্নান হাওলাদার ৫৩ শতক ও বাদশা হাওলাদার ২২ শতক সম্পত্তি জবর দখল করে নেয়।

ভুক্তভোগী ভদ্র কান্ত দাস জানান, প্রভাবশালীরা উল্টো তাদের বিরুদ্ধে তিনটি মিথ্যে মামলা দায়ের করে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে আসছে। দিনমজুর নিরঞ্জন দাস বলেন, গত তিনবছর ধরে প্রভাবশালী গঞ্জর আলী শেখ জাল দলিলের মাধ্যমে ১ একর ৯০ শতক জমির মালিকানা দাবি করে ওইসব জমির রোপিত ইরি-বোরো ও আমন ধান পাকার সময় লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে ধান কাটার জন্য আসে। প্রতিবছরই এলাকাবাসির তোপের মুখে প্রভাবশালী গঞ্জর শেখ তার দলবল নিয়ে পিছু হটে। উপায়অন্তুর না পেয়ে অতিসম্প্রতি গঞ্জর শেখ জমিজমাসহ বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য সংখ্যালঘূ ওইসব পরিবারদের নানাধরনের ভয়ভিতী প্রদর্শন ও প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া ওই ছয়টি সংখ্যালঘু পরিবারকে অনতিবিলম্বে ভারতে যাওয়াও হুমকি দিয়েছে প্রভাবশালী গঞ্জর শেখ। ভূক্তভোগী কালা চাঁদ দাস বলেন, উল্লেখিত ব্যাপারে প্রসাশনের কাছে কোন অভিযোগ দায়ের করলে গঞ্জর আলী আমাদের স্ব-পরিবারকে হত্যা করারও হুমকি দিয়েছে। প্রভাবশালীদের অব্যাহত হুমকির মুখে অসহায় সংখ্যালঘূ পরিবারগুলো এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেনা সমর্থিত গত ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রভাবশালী হান্নান হাওলাদার তার ভাতিজা সেনা সদস্য কামরুল ইসলামের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ও সেনা সদস্য কামরুলের উপস্থিতিতে সংখ্যালঘু পরিবারের ৫৩ শতক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে ওই সম্পত্তিতে একটি মাছের ঘেরসহ অস্থায়ী টিনের তৈরি দুটি খুপরি ঘর নির্মান করা হয়েছে। ভুক্তভোগী অসহায় সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা ভূমিদস্যুদের রোষানলে প্রতিনিয়ন এখন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ আতংকে ভূগছেন। এছাড়াও প্রভাবশালীদের অব্যাহত হুমকির মুখে তারা রয়েছেন চরম নিরাপত্তহীনতায়। প্রভাবশালী ভূমিদস্যু কর্তৃক দখলীয় সম্পত্তি ফিরে পেতে ও পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষায় ওইসব অসহায় সংখ্যালঘূ পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।