ফেঁসে যাচ্ছেন রাঘব বোয়ালরা

এরই মধ্যে এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া তিন আসামি শরিফুল ইসলাম কোরবান, খন্দকার ওমর ফারুক ও সালাহউদ্দিন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ওই স্বীকারোক্তিতে তারা এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করেছে। সেই সূত্র ধরে এলাকার প্রভাবশালী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজমা বেগমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

র‍্যাব জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে নাজমা বেগম পলাতক। র্যা ব উত্তরা এলাকা থেকে মামলার আসামি কোরবানকে ২৮ ডিসেম্বর রাতে গ্রেফতার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিরা কীভাবে শিশুদের অপহরণের পর অঙ্গহানি বা বিকলাঙ্গ করে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করে, তার বিবরণ দিলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আদালত ইতোমধ্যে শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত না করায় কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সিকদারকেও ডেকে তিরস্কার করেছেন আদালত। আদালতের নির্দেশেই মামলাটি র‍্যাব-১-এ কর্তব্যরত সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন তদন্ত করছেন।

তদন্তকারী সূত্র জানায়, কামরাঙ্গীরচর এলাকার আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজমা বেগমের মদদেই গ্রামের সহজ-সরল মেয়েদের দিয়ে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি এবং শিশুদের বিকলাঙ্গ করে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। এ টাকা দিয়েই তিনি এলাকায় তিনটি বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি কোরবান, ফারুক ও সালাহউদ্দিন স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছে, তাদের সঙ্গে সালাউদ্দিন, কাওসার, রমজান, জনি, সাদ্দাম, নাহিদসহ আরও বেশ কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে এই অনৈতিক কাজ করে আসছে। তারা বলে, ফারুকের বাসার সামনে একটি ক্লাব আছে। ক্লাবটি সারা দিন বন্ধ থাকে। রাতে সেখানে বিচার-আচার চলে। ছিনতাইয়ের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। তারা এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষকে ক্লাবে ডেকে নিয়ে সালিশের নামে জরিমানা আদায় করে নিজেরা টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। স্বীকারোক্তিতে আরও বলা হয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিয়ামুলকে অপহরণ করা হয়। পরে একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ব্লেড দিয়ে গলার চামড়া এবং গলার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত লম্বা টান দিয়ে চামড়া কেটে ফেলা হয়। এরপর তার পরনের হাফপ্যান্ট খুলে ব্লেড দিয়ে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়। তখন নিয়ামুল জোরে চিৎকার দিলে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। নিয়ামুল অচেতন হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। চার-পাঁচ বছর আগে বেড়িবাঁধ থেকে খুলনার শিশু শরিফ আর যশোরের রাহাতকে ধরে হাত ও পায়ের রগ কেটে বিকলাঙ্গ করে ভিক্ষাবৃত্তি করানো হয়। দেড় বছর আগে ৮-৯ বছরের একটা ছেলেকে পাতিলের মধ্যে রেখে হাত-পা বিকলাঙ্গ করা হয়।