দাপুটে জয় দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু

শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। কানাডার ১১২ রানের স্বল্প টার্গেটই বদলে দেয় ওপেনার তামিমের পরিকল্পনা। শুরু থেকে যেভাবে চড়াও হয়ে ব্যাট চালাচ্ছিলেন তাতে আর যাই হোক প্রস্তুতি ম্যাচের প্রাকটিস হয়নি তার। অবশ্য তামিমকে দোষ দিয়েও কোন লাভ নেই, পুরো ম্যাচটি তো খেলেছেন কোমরের ব্যথা নিয়ে। দ্রুত খেলা শেষ করতে চাইছিলেন বলে ৩৫ বলে ফিফটি আর জয় থেকে ৭ রানের দূরত্বে ছয় মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ৫০ বলে ৬৯ রানের ঝড়ো ইনিংসের মধ্যে দুটি ক্যাচ মিসও ছিল। ৫৪ ও ৫৮ রানে বালাজি রাও ও ডেভিসনের কাছ থেকে ফিরে পেয়েছেন লাইফ, কিন্তু সেই ছক্কাই তাকে ডোবালো। তবে এটি তামিমের আসল খেলা নয়, যেটি অকপটে স্বীকার করেছেন নিজে। ‘আমি আজ কোমরের ব্যথা নিয়ে খেলেছি, একটু দ্রুত ব্যাট চালিয়েছি ঠিকই তবে এটি আমার মূল খেলা নয়। প্রথম দিকে ব্যাট করলে আমার পরিকল্পনাও হত ভিন্ন’।

রৌদ্রজ্জ্বল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম সুযোগটি আসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। টসে জিতে কানাডাকে ব্যাট করতে পাঠান আর স্বল্প রানের টার্গেট তাড়া করে মাত্র ১৯.২ ওভারে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তার দল। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে বোলারদের প্রস্তুতিটি ভালোভাবে সম্পন্ন হলেও ব্যাটসম্যানদের তৃষ্ণা থেকেই গেছে। ব্যাটিংয়ের পাওয়ার পেস্ন দুশ্চিন্তা এবং ব্যাটসম্যানদের পরখ করে নেয়ার সুযোগ, কোনটি হলো না কাল চট্টগ্রামে। টসে জিতে বোলিং না নিয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে কি খুব বেশি খারাপ হত। সহ-অধিনায়ক অবশ্য বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে- দেখুন, আমাদের ম্যাচ পরিকল্পনা ছিল, মাঠে নামবো জয়ের জন্য। আর জয় পেতে হলে কি ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে শুধু সেটি প্রয়োগ করেছি মাত্র। স্বীকার করছি, ব্যাটসম্যানদের জন্য প্রাকটিস হয়নি, তবে ২০০৭ সালের উদাহরণ টেনে বলতে পারি, তখনো প্রথম ম্যাচ থেকে জয়ের অভ্যাস গড়ে তুলেছিলাম বলে সেই বিশ্বকাপে ভালো করেছি’।

গত বিশ্বকাপের প্রথম প্রাকটিস ম্যাচ জিতে বাংলাদেশকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর করে তুলেছিল, এবারো সেই প্রথম ম্যাচে জয় পেল সাকিবরা। প্রার্থক্য হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং প্রাকটিস না হওয়া। কানাডার ১১২ রান তাড়া করতে গিয়ে এত সহজে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে তার পুরো কৃতিত্ব তামিমের। তবে মারকুটে এই ওপেনার ছাড়াও দলের সবার অবদানও ছিল চোখে পড়ার মত। আগের চাইতে বর্তমান বাংলাদেশের উন্নতির গ্রাফ যে সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন হয়েছে তার প্রমাণ গতকালের ম্যাচ। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের মাটিতে দুটি সিরিজ বেশ ভালোভাবে শেষ হয়েছে বলে সেই ধারাবাহিকতার ছাপ ছিল গতকালের ম্যাচেও। সহ-অধিনায়কের কাছে এটি পরিশ্রমের ফসল হিসাবেই ফুটে উঠেছে। ‘দেখুন, আমার কাছে মনে হয়েছে গত তিন বছরের পরিশ্রমের ফসল এই পারফর্মেন্স। এখন কানাডা কিংবা এদের সমমানের দলগুলো আমাদের কাছ পাত্তা পাবে না। আমাদের উন্নতি কিন্তু হচ্ছে এবং ধারাবাহিকভাবেই হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ নরম্যাল ক্রিকেট খেললেই এসব দলের বিরুদ্ধে জিতবে’।

কাল তামিমের কোমরে ব্যথা না থাকলে হয়তো ১১২ রান টপকাতে বাংলাদেশের কোন উইকেট খরচ হত না। যদিও তামিমের নামে অভিযোগ আছে তিনি নাকি নব্বইয়ের ঘরে গেলে খেলার ধরন পাল্টে ফেলেন। কাল দেখা গেল ভিন্ন চিত্র, ফিফটি করার পরই তামিমের ব্যাটিংয়ের পুরোটা পরিবর্তন হয়ে যায়। এর কারণ অবশ্য তিনি দিয়েছেন এভাবে-আমি সবসময় চেষ্টা করি ভালো কিছু করার। আমি মূলত আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে চাই। আমি আগেও বলেছি, এই বিশ্বকাপে আমি টপ স্কোরার হতে চাই। তবে পরের ম্যাচগুলোতে এ ধরনের খেলা আমি খেলবো না’।

বোলারদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স এবং তামিমের ঝড়ো ইনিংসের কারণে খুব সহজেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে আরো একটি প্রাকটিস ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে তারা। মিরপুর স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচটি খেলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। সহ-অধিনায়ক জানালেন, বিশ্বকাপের আগে সেই ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের পরখ করার সুযোগ থাকবে।