কৃষির স্থায়ী সমাধানের জন্য ৮৬ কি.মি. খাল পুনঃ খনন জরুরী

সংকটের কারনে চলতি বছর প্রায় ৫’শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে না। এ ছাড়াও চলতি বোরো মৌসুমে অন্যান্য খালগুলোতে পানি সল্পতার কারণে স্বাভাবিক চাষাবাদ ব্যহত হওয়ায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের কৃষকের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। ফলে উপজেলায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস ইতোমধ্যে কৃষি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিসে প্রকল্প দাখিল করে খাল খননের প্রকল্প দাখিল করেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ জানান, কৃষি নির্ভর আগৈলঝাড়ায় গত দুই যুগেও মরা খালগুলো পুনঃ খননের উল্লেখযোগ্য কোন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। তাই কৃষকরা বছরের পর  বছর পানি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসছে। ইরিগেশনের জন্য উপজেলার আভ্যন্তরীন ৮৬ কি. মি. খালের বিপরীতে ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষকদের পানি  সমস্যার স্থায়ী  সমাধান হবে। তিনি বিভিন্ন দপ্তরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাল পুনঃ খননের জন্য প্রকল্পগুলো দাখিল করেছেন। দাখিলকৃত প্রকল্পের মধ্যে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নে মোট ২২ কি.মি. খালের মধ্যে রয়েছে বাশাইল গ্রামের মতিউর রহমানের স্ব-মিল থেকে ছোট বাশাইল-গোয়াইল-ছোট ডুমুরিয়া পর্যন্ত ৮ কি.মি., একই এলাকায় কামাল সরদারের বাড়ী থেকে হায়াতুল্লাহ ফলিয়ার  বাড়ী পর্যন্ত দেড় কি.মি., দক্ষিণ বাহাদুরপুর হইতে মাগুরা ছাদেক বেপারীর বাড়ী পর্যন্ত ৩ কি.মি., বাহাদুরপুর রেজিঃ প্রাঃ বিদ্যালয় থেকে বটু বকুলার বাড়ী পর্যন্ত দেড় কি.মি., রামানন্দের আঁক স্কুল থেকে ক্লাব বাড়ী পর্যন্ত আড়াই কি. মি., বাশাইল খন্দকার বাড়ীর ব্রিজ থেকে চেংগুটিয়া ঢালীবাড়ী মসজিদ পর্যন্ত আড়াই কি.মি., রাজিহার জোড়া ব্রিজ থেকে কুমার ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩ কি.মি. সহ ২২ কি.মি. খাল খনন জরুরী হয়ে পরেছে।

বাকাল ইউনিয়নে শুকিয়ে যাওয়া খালের পরিমান ১৭ কি.মি.। এর মধ্যে ১নং ব্রিজ থেকে আদাবাড়ী পর্যন্ত দেড় কি.মি., কোদালধোয়া থেকে বড়মগরা পর্যন্ত ২ কি.মি., কোদালধোয়া থেকে ফেনাবাড়ী পর্যন্ত ২ কি.মি., কোদালধোয়া শিমুলবাড়ী পর্যন্ত দেড় কি. মি., বাকাল ১নং ব্রিজ থেকে  কোদালধোয়া পর্যন্ত ৪ কি.মি., বাকাল হাট থেকে আমবাড়ী পর্যন্ত ২ কি.মি. ও রাজিহার বাজার থেকে বাকাল হাট পর্যন্ত ৪ কি.মি. সহ ১৭ কি.মি. খালে পুনঃ খননের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গৈলা ইউনিয়নে ফুল্লশ্রী ডাক্তার খানা থেকে উত্তর শিহিপাশা হয়ে কুমার ভাঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে তিন কি.মি., নিমতলা থেকে টেমার হয়ে সেরাল হাই স্কুল পর্যন্ত ৩ কি.মি., গৈলা চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লাল্টুর বাড়ীর ব্রিজ থেকে গুপ্তের হাট পর্যন্ত আড়াই কি.মি., রথখোলা থেকে ভদ্রপাড়া পর্যন্ত ৩কি.মি,  রশিদ ফকিরের ব্রিজ থেকে রামের বাজার পর্যন্ত ২ কি.মি, পতিহার জুরান সরকারের বাড়ী থেকে কারিকর পাড়া পর্যন্ত ১ কি.মি., কালুরপাড় থেকে রামের বাজার পর্যন্ত ২ কি.মি. ও কালুপাড়া গেট থেকে আস্কর বল্লভ বাড়ী পর্যন্ত ৫ কি.মি. সহ মোট ২২ কি.মি.।

রতœপুর ইউনিয়নে মিশ্রিপাড়া বাজার থেকে চাউকাঠী পর্যন্ত ৩ কি.মি., মোহনকাঠী কলেজ থেকে থানেশ্বরকাঠী পর্যন্ত ৪ কি.মি., বরিয়ালী ওয়াপদা থেকে মোল্লাপাড়া-ত্রিমুখী-বারপাইকা-দুশমী পর্যন্ত ৭ কি.মি., কাঠিরা-দুশুমী থেকে দক্ষিণে উজিরপুর সীমানা পর্যন্ত ৬ কি.মি., ছয়গ্রাম তালুকদার বাড়ী থেকে ডাক্তার বাড়ী পর্যন্ত ২ কি.মি. ও ঐচারমাঠ থেখে কাঠিরা পর্যন্ত ৩ কি.মি. সহ ২৫ কি.মি. খালে পানি সরবরাহ না থাকায় পুনঃ খনন দরকার। উপজেলায় গ্রামীন শাখা খালগুলোর ২৭টি প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ৮৬ কি.মি. খাল খনন জরুরী হয়ে পরেছে। এ খালগুলোতে অতীতের মত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগৈলঝাড়া উপজেলায় অদূর-ভবিষ্যতে পতিত জমির পরিমান বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন সহসাই কমে যাবে। ফলে খাদ্য ঘাটতির আশংকা দেখা দেবে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর পূর্বে খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। কাবিখা, কাবিটা, টিয়ার,জিয়ার সহ এডিপি ও এলজিইডি বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও শাসক  দলের জনপ্রতিনিধির উদাসিনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে খাল খননের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে সেচ ব্লকের ড্রেন নির্মান, গ্রামীণ সড়ক মেরামত করছে। 

সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলায় চলতি বছর ৯ হাজার ৮’শ ১৮ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার ৩৫ হাজার মে. টন চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও চাল উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে ৩০ হাজার ৯’শ ৬৯ মে. টন। বাকী প্রায় ৪ হাজার মে. টন খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। সূত্র মতে, উপজেলার গৈলা, বাকাল, রতœপুর, বাগধা ও রাজিহার ইউনিয়নে প্রায় ৫’শ হেক্টর জমিতে এবছর সেচ না দিতে পারায় বোরো চাষ হচ্ছে না। কৃষকরা জানান, তাদের এলাকার গ্রামীণ শাখা খালগুলো ভরাট হয়ে শুকিয়ে যাওয়ায় চলতি বছরে তারা বোরো চাষ করতে পারছেন না।জরুরী ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খাল খননের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা দাবি জানিয়েছেন।