দীর্ঘ তিন বছরেও তার হদিস মিলেনি। এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদেন বৃদ্ধ পিতা হারুন আর রশিদ। পরিবারের অভিযোগ র্যাব পরিচয়ে নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়কের সামনে থেকে মোনায়েমকে অপহরন করা হয়। অপহরন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন সহ প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সেনা প্রধান, যৌথ বাহিনী, মানবাধিকার সংস্থা ,র্যাব ও পুলিশ অধিদপ্তরকে অবহিত করা হলেও সন্ধান মিলেনি মোনায়েমের। তবে অপহরনের বিষয়টি র্যাব সবসময়ই অস্বীকার করে আসছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর রাত সোয়া ৮ টার দিকে মোনায়েম ও তার বন্ধু মজিবর কাউনিয়া প্রধান সড়কের আম্বিয়া ভবনের সামনে ব্যবসায়ীক আলাপ আলোচনা করছিল। ঠিক সেই মুহুর্তে সাদা পেষাকধারী ৫/৬ জন ব্যক্তি নিজেদেরকে র্যাব পরিচয় দিয়ে মোনায়েমকে দুটি মটর সাইকেল যোগে তুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে র্যাব-৮ কার্যালয়ে রাতেই যোগাযোগ করেন মোনায়েমের পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু র্যাব মোনায়েমের পরিবারকে জানায়, এই নামের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ ঘটনায় বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানায় জিডি করতে গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা রহস্যজনক কারনে জিডি গ্রহনে অপরাগতা প্রকাশ করেন। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থানায় জিডি গ্রহণ করা হয়। তদ ন্দের দায়িত্ব দেওয়া হয় এস আই এরশাদ আলীকে । এরশাদ আলী রহস্যজনক কারনে কোন তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যাননি বলে জানান মোনায়েমের বড় ভাই আহসান উল্লাহ মাইনুল। তিনি জানান ২০০৮ সালের ৪ এপ্রিল বরিশাল মেট্রোর সহকারি পুলিশ কমিশনার একে এম মাকফারুল ইসলাম তদন্ত করে ১৭ এপ্রিল রিপোর্ট করেন। এরপরে তদন্তে করেন ইন্সপেক্টর নূরুজ্জামান। এতসব তদন্তের পরও কোন ফলাফল জানাতে পরেননি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আহসান উল্লাহ মাইনুল আরও জানান, র্যাব সবকিছু জেনেও অস্বীকার করেছে। আমরা পরে জেনেছি মোনায়েমকে অপহরনের ঘটনা নগরীর ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোর্তুজা আবেদীনের যোগশাজশে হয়েছে।
সূত্রে আরো জানা গেছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এডভোকেট মোর্তুজা আবেদীনের সঙ্গে মোনায়েমের সাথে এলাকার আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। মর্তুজা কমিশনারের নিকটতম আত্নীয়দের একজন র্যাবের উর্দ্ধতন অফিসার। তাকে ব্যাবহার করে র্যাবের লোকেদের মাধ্যমে এই অপহরন করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। অপহ্নতের পরিবারের অভিযোগ মর্তুজাই একমাত্র বলতে পারবেন মোনায়েমের খবর। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সকল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব।
মোনায়েমের বৃদ্ধ পিতা হারুন অর রশিদ অশ্রু সিক্ত নয়নে বলেন, ওরা আমার ছেলেটা জীবিত না মৃত সেই খবরটা পর্যন্ত দিচ্ছে না। মরে গেলে অন্তঃত জানাযা দিতে পারতাম। এখন তাও সম্ভব না। তবে আমরা কি করব। এখন শুধু জানতে চাই মোনায়েম জীবিত না মৃত। সে খবরটাও কি দিতে পারবেনা প্রশাসনের লোকেরা? মোনায়েমের পিতা হারুনের এই প্রশ্ন এখন তার একার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় সময়ের ব্যাবধানে যেন এই প্রশ্ন এখন গোটা বরিশালবাসীর।