বদলে গেছে বিলাঞ্চলের শিক্ষাচিত্র

করে গড়ে তোলার জন্য ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী। পশ্চিম সুজনকাঠি গ্রামের নিরক্ষর ভেগাই হালদার গ্রামের মানুষকে শিক্ষিত করার জন্য গৈলার কৈলাশ সেনকে নিয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে পাঠশালা হিসেবে স্থাপিত হলেও আজ এ প্রতিষ্ঠানটি অত্র এলাকার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের স্বীকৃতি লাভ করেছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে প্রায় দেড়হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ণ করছে। এদের পাঠদানের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ২২ জন শিক্ষক কর্মচারী। প্রায় ৫ একর জমি উপর ৪০ কক্ষ বিশিষ্ট ৫টি সুবিশাল দোতালা ভবন এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি ছাত্রাবাস। বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করানো হয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এ+সহ আশাব্যঞ্জক ফলাফল করছে অনেক শিক্ষার্থী। ফলাফলের দিক থেকে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি এ অঞ্চলের শীর্ষে রয়েছে। ১৯০৫ সালের ইংরেজী শাসন আমলে বঙ্গদেশকে দ্বিখন্ডিত করে পশ্চিমবঙ্গ নামে পৃথক একটি প্রদেশ গঠিত হয়।

তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের উচ্চবর্ণের লোকেরা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের অবহেলা করত। মহাত্মা ভেগাই হালদার নিম্নবর্ণের হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় তিনি নিম্নবর্ণের হিন্দুসহ মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের শিক্ষার জন্য একটি ক্ষুদ্র পাঠশালা স্থাপন করেন। ভেগাই হালদার নিজে নিরক্ষর হলেও তিনি চেয়েছিলেন অবহেলিত বিলাঞ্চলের মানুষ শিক্ষা দীক্ষায় জ্ঞান অর্জন করে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক। তিনি বরিশালের বরেণ্য অশ্বিনী কুমার দত্তের পরামর্শ মোতাবেক ও গৈলার কৈলাশ সেনকে সাথে নিয়ে পাঠশালার কাজ চালিয়ে যান। পাঠশালার শিক্ষার দায়িত্বে ছিলেন পন্ডিত হরভূষণ হালদার। কালক্রমে পাঠশালাটিতে শিক্ষার্থীদের আধিক্য বৃদ্ধি পেলে এটিকে আরও বড় করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এসময় একাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছিলেন স্বর্গীয় নিবারণ চন্দ্র দাস, নিশিকান্ত মিস্ত্রী, সীতানাথ হালদার, গোপাল হালদার, মফিজউদ্দিন খান, মুন্সী দলিল উদ্দিন পাইক, ধোনাই ফকিরসহ অনেকেই। ব্রিটিশ শাসনামলে দশমশ্রেণী পর্যন্ত স্কুলগুলির নাম ছিল হাই ইংলিশ স্কুল। ভেগাই হালদার এই পাঠশালাটিকে বিদ্যাপীঠে রুপান্তরিত করার জন্য কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন বিত্তশালীদের কাছে হাত বাড়িয়ে ছিলেন। বিদ্যালয়টি প্রসারিত করার জন্য জমির প্রয়োজন দেখা দিলে তখন ভেগাই হালদার রামচরণের কাছে কিছু জমি ভিক্ষা চায়। রামচরণ বর্তমান বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ জায়গা বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে আজ বিদ্যাপীঠটি জেলার মধ্যে একটি স্বনামধন্য বেসরকারী বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।

মহাত্মা ভেগাই হালদার নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আগৈলঝাড়ায় একটি জনসভা করেন। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ ও কবি অশ্বিনী কুমার দত্ত, আচার্য প্রফুল্ল¬ কুমার রায়, শেরে বাংলা ফজলুল হক। ভারতের বিখ্যাত পন্ডিত ও কংগ্রেস নেতা মদনমোহন মালব্য এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের বোনের মেয়ে সরলা দেবী। ওই সভার উদ্যোগের কথা তৎকালীন ভারতের আনন্দবাজার, অমৃতবাজার প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় আর ভেগাই হালদারের নাম ভারতবর্ষসহ বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ বিদ্যালয়টি একটি আধুনিক বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৪০ খ্রিঃ ২১ আষাঢ় মহাত্মা ভেগাই হালদার  পরলোকগমণ করেন। তার জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ এক হওয়ায় প্রতিবছর ২১ আষাঢ় সাড়ম্বরে দিবসটি পালিত হয়। বিদ্যালয়ের দক্ষিণপ্রান্তে তার প্রতি সম্মাণ জানিয়ে একটি সমাধি মন্দির স্থাপন করা হয়েছে।