কালকিনির সুমিতা বাড়ৈর পাঠশালা

শ্রেণীতে পড়ে। মেয়ের পড়ালেখার খরচ ও সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে বসে নেই। অষ্টম শ্রেণী প্রর্যন্ত পড়ালেখার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কোমলমোতী শিশুদের বাংলা ও ইংরেজী বর্ণমালা শিখাচ্ছেন খুব সকাল থেকে দুপুর প্রর্যন্ত। বর্ণমালা শিখে শিশুরা ভর্তি হয় গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সবার কাছেই তিনি প্রিয়। শিশুদের সাথে থাকতে থাকতে তিনিও সবার সাথে আচরণ করেন শিশু সুলভ। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী থাকা সত্ত্বেও মাত্র অষ্টম শ্রেণী প্রর্যন্ত পড়ালেখা করে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার নবগ্রাম ইউপির বাগমারাপাড়া এলাকার সুবাস বাড়ৈর স্ত্রী সুমিতা বাড়ৈ (৫০) গত ৪বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন কোমলমতী শিশুদের মধ্যে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, সুবাস বাড়ৈর মৃত্যুর পর সুমিতা বাড়ৈ মেয়েদের নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কোনো রকম দু’ বেলা খেয়ে দিন কাটিয়েছেন অনেকদিন। পরে মন্দিরের পাশে একটি ঘরে দু’ এক জন পড়াতে পড়াতে এখন ২৫থেকে ৩০জন শিশুকে পড়াচ্ছেন। সকাল ৭টা থেকে ৯টা প্রর্যন্ত সবাইকে পড়ান। এরপর যাঁরা স্কুলে না যায় তাদের ১০টা থেকে দুপুর ১টা প্রর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পড়াতে থাকেন। জন প্রতি এক শ’ টাকা করে নিয়ে এখন ভালোই তার দিন কাটছে। শত হতাশার মাঝে যদি সুমিতা বাড়ৈ অষ্টম শ্রেণী প্রর্যন্ত পড়ালেখা করে ৫০বছর বয়সে শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন তাহলে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষিত গৃহবধূদের জন্য একজন আদর্শ নারী বলে দাবী করেছে এলাকাবাসী।

সরেজমিনে উক্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের পাশে পড়ে থাকা বেড়া নেই শুধু উপরে চালা আছে এমন একটি ঘরে কোমলমতী শিশুদের পড়াচ্ছেন সুমিতা বাড়ৈ। সব শিশুর বয়স ৫থেকে ৯বছরের মধ্যে। দু সাড়িতে বসেছে ২৫থেকে ৩০জন শিশু। মাঝে বসে কাউকে লিখে দিচ্ছেন আবার কাউকে বর্ণমালা পড়াচ্ছেন। দুর থেকে শোনা যায় শিশুদের পড়ার শব্দ। পড়ানোর ঘরটির অবস্থা খুবই খারাপ। শিশুদের বসার জন্য একটি হোগলাও নেই। বই, খাতা, স্লেট ও চক নিয়ে আসা নিজ নিজ ব্যাগের উপর বসেছে সবাই। বৃষ্টি হলে কোনো মতেই পড়ানো সম্ভব হবে না এই ঘরে। ঘরের দুরাবস্থায় সামনে বর্ষাকালে কীভাবে পড়াবেন তা নিয়ে চিন্তিত সুমিতা বাড়ৈসহ এলাকাবাসী।

সুমিতা বাড়ৈ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে পাওয়া টাকা দিয়েই আমার সংসার চলে যায়, মেয়ের পড়ালেখার খরচও দিতে পারি। না পড়াতে পারলে অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করতে হইত। শিশুদের পড়ানোই সবচেয়ে বেশী কষ্টের। শিশুদের পড়াতে শিশুদের মতো আচরণ করলেই শিশুরা পড়ায় মনোযোগ দেয়। কখনোই তাদের শারীরিক বা মানসিক চাপ দেয়া উচিত নয়’।