বিপর্যয়ের আগেই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান – খালেদা জিয়া

গতকাল শুক্রবার সন্ধায় ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্র“য়ারি সংঘটিত নৃশংস হত্যাকান্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে দলের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, অধ্যাপক মাহাববুব উল্লাহ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটির্র (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ।

খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এখনও সময় আছে ব্যর্থতা স্বীকার করে বিপর্যয়ের আগেই ক্ষমতা থেকে সরে দাড়াঁন। চাপের মুখে অসম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে না চাইলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুণ। মধ্যবর্তী নির্বাচন দিন। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ ক্ষমতা ছাড়া করবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আকাশে শকুনের আনাগোনা এবং নীচে নেড়িদের ঘেউ ঘেউ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশে নীপিড়িত মানুষ জেগে উঠছে। দেশ সংকটের পথে- ফলে আত্মসম্মান বাঁচাতে ঘর থেকে সবাইকে  বেরিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে গানের আয়োজন করা হয়েছে। পিলখানার ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের পর এক কলঙ্কের অধ্যায় রচনা করে চলছে। তারা সরকার গঠনের দুই মাসেরও কম সময়ে মধ্যে ঘটে যায় পিলখানা হত্যাকান্ডের মতো ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। এটি এ সরকারের প্রথম এবং আমার বিবেচনায় সবচেয়ে শোচনীয় কলংকজনক ঘটনা। দেশদ্রোহী চক্রের ক্রিড়নক হয়ে মুষ্টিমেয় কিছু বিপথগামী লোক ১৯৮২ সালে বাংলাদেশের জননন্দিত নির্বাচিত রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিলো।

তিনি বলেন, দীর্ঘ দিনের রাজপথের অভিজ্ঞতা আমাকে বলে দিচ্ছে উত্তাল আরেকটি দুর্বার আন্দোলনের জন্য সারাদেশেই আজ টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ তৈরি আছে। বাংলাদেশে অনতিবিলম্বে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের মাধ্যমেই কেবল অনিবার্য উত্তাল গণঅভূত্থান পাশ কাটানো সম্ভব।

খালেদা জিয়া বলেন, আমরা সকলেই জানি যে, ১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধেও জাতিকে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসার হারাতে হয়নি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও সার্বিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়। কেবল হত্যা এবং নির্যাতন নয়, পিলখানায় নারীদের ওপর যে পৈশাচিক নির্যাতন চলেছে তা বহুকাল মানুষের স্মৃতিকে তাড়িত করবে। কোনো যুদ্ধের সময় ভিনদেশী আক্রমনকারীরা চরম অপমানের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যেসব বর্বর পন্থা অবলম্বন করে থাকে, পিলখানায় সেসবই প্রত্যক্ষ করার দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছে। 

তিনি বলেন, দুই বছর পেরিয়ে গেলেও পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায্য বিচার আজো হয়নি। নিশ্চিত এ সরকারের আমলে এ বর্বরোচিত হত্যযজ্ঞের সুবিচার হবেনা। বিচারের নামে হবে প্রহসন। এখন বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক সরকারের বিকল্প নেই বলে দাবি করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমাদের বিশাল সীমান্ত অরক্ষিত। চোরাচালানে দেশ ভরে গেছে। দেশের শিল্প-উৎপাদন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। অবাধে আসছে মাদক। জাতির ভবিষ্যৎ তরুণ-সমাজ হচ্ছে বিপথগামী।

সীমান্তে প্রতিনিয়ত নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীর মতো নিষ্পাপ কিশোরীদের মৃতদেহ কাঁটাতারে ঝুলছে। প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষীরা আমাদের সীমানা ও জমি জোর করে দখল করছে। বলপূর্বক ভেতরে ঢুকে শষ্য, গবাদিপশু ও সম্পদ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার প্রতিবাদহীন, নির্বিকার।

সরকার কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দীদের নয়, দেশের সম্মানিত বরেণ্য নাগরিকদেরও অপমান হেনস্থা করছে। দুই বছরেই সীমাহীন দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে দেশটাকে এরা কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে? এদের লুট, দখল, সন্ত্রাসে সারা বাংলাদেশ আবারো উপদ্রুত জনপদে পরিণত হয়েছে। আগের বারের মতো এবারো তারা শেয়ার বাজারে ৩৩ লাখ পরিবারের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে, তাদেরকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

শাসক পরিবারের এক ভাগ্যের বরপুত্র হাজার হাজার কোটি ডলার লুট করে বিদেশী ব্যাংকে গড়েছে সঞ্চিত অর্থের পর্বত। কেবল ভারতী এয়ারটেলের কাছে ওয়ারিদের শেয়ার কেনা বেচায় কারসাজির মাধ্যমেই হাতিয়ে নিয়ে গেছে কয়েকশ কোটি টাকা। ৬৪ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে শেয়ার বাজার থেকে। এর বিরাট অংশ বাইরে চলে গেছে।

তিউনিশিয়া, মিসর, লিবিয়া বিক্ষোভ চলছে বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি আরো বলেন, জনগণ রাজপথে নেমে আসলে ঠেকাতে পারবেন না। তাই এখনোও যদি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় না হয় তবে এ সরকারের পরিণতিও ভয়াবহ হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকে এদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। বিশ্বকাপের জন্য আন্দোলন স্থগিত রেখেছি। তিনি বলেন, মইন উদ্দিন  ফখরুদ্দীন পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন জনগণের সম্মুখে তাদের বিচার হবে। রিমান্ড বন্ধ করে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।