ভূমিদস্যু শামশুর নির্যাতনের শিকার শতাধিক মুরুং গ্রামবাসী

সন্ত্রাসী হামলার মুখে শংকিত জীবন যাপন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই এলাকার জনৈক শামসুল আলম কর্তৃক মুরুংদের জিম্মি করে নির্বিচারে বাগানের গাছপালা কর্তন, মুরুং গ্রামবাসীচাঁদা আদায় ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন পাড়া কার্বারী (সর্দার) পাক্কাই মুরুংসহ শতাধিক জন গ্রামবাসী।    

প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের দুপ্রু ঝিরি এলাকায় বংশপরম্পরায় ২০টি মুরুং পরিবারে শতাধিক মুরুং বসবাস করে আসছেন। সেখানে তাদের ভোগ দখলীয় প্রায় শতাধিক একর জমিতে অনুদানের ভিত্তিতে বেসরকারী সংস্থা কারিতাস কর্তৃক ফলজ ও বনজ বাগান সৃজন করে দেয়। মুরুংদের ভোগ দখলীয় ওই জমিতে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে রেপারপাড়ি এলাকার মৃত নুর আহামদের পুত্র শামশুল আলমের। স্থানীয় প্রশাসনের নিকট মুরুংরা লিখিত অভিযোগে জানান, গত তিনবছর ধরে মারধর করার হুমকী দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় শামশুগং কর্তৃক মুরুংদের দখলীয় ও রোপিত বড় সাইজের সেগুন, গামারী ও আমগাছগুলি নিজের দাবী করে ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেয়। এতে বাধা দেয়ায় ইতোপূর্বে ১২ জন নিরীহ মুরুংকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করা হয়।

মুরুংরা অভিযোগে আরো জানান, ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী হামলার হুমকী দিয়ে শামশুল আলমগং ৩৩টি আম, ৩৯টি কাঁঠাল, ৫১টি সেগুন, ১০০টি গামারী গাছ ও ৩ হাজার উরা বাঁশ কর্তন করে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, মুরুংদের উৎপাদিত জুমের ফসল থেকেও নিয়মিত শামশুকে চাঁদা দিতে হয়।বলে অভিযোগে জানা যায়। জুমের ফসল থেকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় পুংপ্রে মুরুং এর একটি খামার বাড়ি গুড়িয়ে দেয় শামশুগং। এছাড়াও ইতোপূর্বে মুরুংদের উচ্ছেদ করে তাদের পাড়ার কেয়াংঘরটি দখলে নিয়ে নিজের বাড়ি বানানো ছাড়াও তাদের চলাচল পথটি রুদ্ধ করে নিজের তামাক ক্ষেত করেছে এই শামশু আলম।

মঙ্গলবার সকালে দুপ্রু ঝিরি মুরুং পাড়া এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মুরুংদের ভোগ দখলীয় ও সৃজিত বাগান থেকে কয়েক শতাধিক সেগুন, গামারী ও আমগাছ কর্তন করা হয়েছে। মুরুংরা জানায়, সন্ত্রাসী হামলার হুমকী দিয়ে শামশুল আলমগং এসব গাছ কর্তন করেছে। ষাটোর্ধ্ব বয়সী রেংচা মুরুং জানান, তাদের দখলীয় বাগান থেকে বাঁশ, গাছ ও জুমের ফসল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে গেলে শামশুকে চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। গত রবিবার রেপারপাড়ি বাজারে ওই পাড়ার কার্বারী পাক্কাই মুরুং সওদা করতে গেলে শামশুল আলম তার ওপর চড়াও হয়। পিতাকে হামলার কবল থেকে রক্ষায় পুত্র চাচিং মুরুং এগিলে গেলে তার নাকে পাথর দিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় থানায় চাচিং মুরুং বাদী হয়ে শামশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বাবুল গতকাল মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, হামলার সত্যতা পাওয়া গেছে। শামশুর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুপ্রু ঝিরি এলাকায় স্থানীয় আবুল হোসেন সর্দার, আরাফাত, নুরুল কবির, সালাহ্ উদ্দিন, রুকন উদ্দিন ও মোহাম্মদ আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মুরুংরা নানাভাবে শামশুগং কর্তৃক নির্যাতনের শিকার। এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করলে শামশু মামলার গ্যাড়াকলে জড়ানোর হুমকী দিয়ে থাকে।

চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রুথোয়াই অং মার্মা জানান, ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে শামশুর বিরুদ্ধে মুরুংদের নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, শামশুর স্বভাব-চরিত্র তেমন ভাল নয়।

যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শামশুল আলম মঙ্গলবার মুঠোফোনে জানান, মুরুংদের অভিযোগ সঠিক নয়। দুপ্রু ঝিরি এলাকায় তার ক্রয় করা জমি থেকেই গাছ কর্তন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।