তামাকের পরিবর্তে রবিশস্য

বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও পতিত জমিতে এখন সবুজের সমারোহ। সরিষা, ডাল, তরমুজ, বাদাম, বেগুন, মরিচ, ক্ষিরা ও গোল আলুর পাতায় পাতায় দখিনা বাতাসের নাচন। বনবিভাগের তৎপরতায় এ বছর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উপজাতি ভিলেজার ও চাষীরা বের হয়ে এসেছেন।

দীর্ঘ দেড়দশক ধরে লামা বন বিভাগের আওতাধীন এই মাতামুহুরী রেঞ্জের প্রায় ৪ শতাধিক জমিতে তামাকের আগ্রাসন চলে আসছিল। কিন্তু চলতি তামাক মৌসুমের শুরু থেকে বন বিভাগের তৎপরতার কারণে এবার তামাকের পরিবর্তে চাষ হয়েছে নানারকমের রবিশস্যের।

সংরক্ষিত বনের মিরিংচরে বসতি স্থাপনকারী উপজাতি কৃষক কেংক ম্রো জানান, আগে এখানে তামাক কোম্পানী যোগসাজশে সাবেক সহকারী ভিলেজার হেডম্যান উক্যজাইর মধ্যস্ততায় বাণিজ্যিক তামাকের চাষ হতো। এ বছর তাঁরা বন বিভাগের পরামর্শে রবি ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন।

উপজেলা সদরের অদূরেই বাবুপাড়া ফরেস্ট বিট চত্বরে দাড়ালেই চোখে পড়ে রিজার্ভ ফরেস্টের বিস্তীর্ণ মাতামুহুরী নদীর চরাঞ্চলে রবিশস্যের চাষ। বন বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, মাতামুহুরী রেঞ্জেই রয়েছে এ ধরনের আবাদযোগ্য প্রায় ৪০০ একর পতিত বনভূমি। বসতি স্থাপনকারীরা গত দেড়দশক ধরে ধরে এসব জমিতে বাণিজ্যিক তামাক চাষ করতো। এখন সে জমিতে তামাকের পরিবর্তে সরিষা, বাদাম, তরমুজ, বেগুন, মরিচ, ক্ষিরা, গোল আলু ছাড়াও এখন সেখানে স্থান করে নিয়েছে বেগুন, ডাল আর মুলা।

কথা হয় মাতামুহুরী রেঞ্জের কুরুকপাতার উপজাতি অংচিং মুরুং এর সঙ্গে। তিনি জানান, তামাক চাষ করে নগদ কিছু টাকা হাতে এলেও তাতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে। তাই বন কর্মকর্তাদের পরামর্শে সবজি চাষে তারা ফিরে এসেছেন।

অন্যদিকে মহেশখালী ঝিরির ক্রিওয়াই মুরুং জানান, তামাক চাষ করলে ফরেস্ট বাবুরা আগে তেমন একটা বাধা দিতেন না। এখন বাবুরা সাবধান করে দেয়ায় বনভূমিতে তামাক চাষ বন্ধ। তাই তাঁর দখলীয় জমিতে এবার বাদাম চাষ করেছেন তিনি।

জানালীপাড়ার বাসিন্দা পাচুয়া মুরুং বললেন, তিনিও তামাক ছেড়ে এবার সরিষা চাষ করেছেন। ফসলের অবস্থা ভালো। ঠিকভাবে ফসল তুলতে পারলে হাতে কিছু টাকা আসবে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট এশিয়া মহাদেশের একক বৃহত্তম বনভূমি। এর আয়তন এক লাখ প্রায় তিন হাজার একর। বন রক্ষা এবং সুফলভোগী হিসেবে এখানে দুই শতাধিক ভিলেজার ও কয়েক হাজার জুমিয়া পরিবার রয়েছে।

জানতে চাইলে মাতামুহুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ বলেন, তামাকের পরিবর্তে রবিশস্য চাষের জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ তাঁরা করে যাচ্ছেন। ধারাবাহিক এ উদ্যোগের ফলে স্থানীয়দের মাঝে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু তামাক চাষ বন্ধ করায় তারা বিভিন্নভাবে হুমকী ও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন বলে তিনি জানান।