কালের স্বাক্ষী গৌরনদীর বৌ-ঠাকুরানীর দীঘি

কালের স্বাক্ষী হয়ে আজো রুগ্ন, ভাঙ্গাচুড়া ও খসেপড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে জমিদারের বাড়ির পূর্ব পার্শ্বের ঐতিহাসিক বৌ-ঠাকুরানীর দীঘির দক্ষিণ পাড়ের পাকা দেয়াল ঘেরা সু-বিশাল শান বাঁধানো ঘাটলা। অবহেলার মাঝে আজো জমিদারের স্মৃতিবহন করছে বৌ-ঠাকুরানীর দীঘির ঐতিহাসিক ঘাটলাটি। জমিদার কেদারনাথ বসু বাংলা ১৩১০ সালের দিকে তার সহধর্মীনি (স্ত্রী) কাদন্বীনী বসু মজুমদারের নামে দীঘিটি খনন করিয়ে ছিলেন।

চাঁদশী গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, একই গ্রামের তিন জমিদার কেদারনাথ বসু মজুমদার, অন্মিকা চরন গুহ ও মুকুন্দ নাথ বসুর প্রভাব প্রতিপত্তির কথা। ওই তিন জমিদারের অসংখ্য স্মৃতি আজ বিলীন হয়ে গেছে। দখল হয়ে গেছে তাদের বসত বাড়ি, দালান-কোঠাসহ যাবতীয় সহয় সম্পত্তি। ক্রমেই দখলকারীরা নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে জমিদারদের পুরনো সব ঐতিহ্যকে। সূত্রমতে, ১৯৪৮ সনের দেশ বিভক্তির পর জমিদাররা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে তারা আর ফিরে আসেননি। এ সুযোগে স্থানীয় কতিপয় প্রবাবশালী ব্যক্তিরা ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে জমিদারদের সহয় সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন। তারা নিজেদের স্বার্থে জমিদার বাড়ির পূজা মন্ডপ, সমাধি মন্দির ও দালান কোঠা ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। একই সাথে নিশ্চিহ্ন করে ফেলছে জমিদার বাড়ির সকল ঐতিহাসিক নিদর্শন। চাঁদশী গ্রামের তিন জমিদারের বাড়ির আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে জমিদারদের নানা স্মৃতি। প্রত্যেক জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে আলাদা রাস্তা ও খাল। এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, তিনজন জমিদার একই গ্রামে বসবাস করে তাদের জমিদারী পরিচালনা করলেও তাদের মধ্যে ছিলো না কোন বিরোধ। ছিলো সু-সম্পর্ক। জমিদার কেদারনাথ বসু মজুমদার তার পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন চাঁদশী ঈশ্বর চন্দ্র বসু মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৪৮ সালে জমিদার কেদারনাথ বসু মজুমদার দেশত্যাগ করেন। তার স্ট্রেটের কেয়ারটেকার ছিলেন জিতেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী।

বর্তমানে ওই বাড়িতে তার (জিতেন্দ্র নাথ) ৪ পুত্র বসবাস করছেন। জিতেন্দ্রনাথের পুত্র অজিত কুমার (৬২) জানান, জমিদার কেদার নাথের বাড়িতে ৩ খানা দূর্গা পূজা হতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পূজা উপলক্ষে জমিদার বাড়িতে নাচ, গান ও যাত্রানুষ্ঠানে মুখর থাকতো। জমিদার কেদারনাথ বসু মজুমদারের কালি দাস বসু মজুমদার নামের এক পুত্র ছিলো। তিনি (কালি দাস বসু) ভারতে চলে যাবার পর মারা গেছেন। বিল্লগ্রাম, বাশাইল, ধানডোবা ও চাঁদশীতে তার জমিদারী ছিলো। খাজনা আদায়ের জন্য বিভিন্নস্থানে ছিলো অসংখ্য কাচারী ঘর। জমিদার বসু ও গুহ পরিবার চাঁদশী হাটের মালিক ছিলেন। কিন্তু জমিদারী নিলাম হওয়ার কারনে সবকিছুই বেহাত হয়ে গেছে। এলাকাবাসি জমিদারদের স্মৃতিবিজরীত ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো রক্ষণা বেক্ষনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।