বিশ্ব অর্থনীতিতে দুর্বল হয়ে পড়ছে ডলারের ভূমিকা

বিশ্বের প্রধান মুদ্রা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে ওয়াশিংটনে এক সাক্ষাতে সারকোযি বলেছেন, ডলার বিশ্বের এক নম্বর মুদ্রা। 

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আই এম এফ সম্প্রতি বলেছে, ২০১০ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারে বা তৃতীয় ত্রৈমাসিক পর্বে মার্কিন ডলারের রিজার্ভ ছিল গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সে সময় বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের মুদ্রা রিজার্ভের শতকরা ৬১ ভাগ রেখেছিল ডলারে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্টন উডস নীতি অনুযায়ী ডলার প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রায় পরিণত হয়েছিল। এশিয়া ও ইউরোপ ছিল তখন যুদ্ধে বিধ্বস্ত। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সে সময় ছিল অর্থ ও সমর শক্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ। স্বর্ণসহ ব্যাপক উদ্বৃত্ত সম্পদের কারণে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে পড়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা। তাই বেশির ভাগ দেশই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতো ডলারে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়ায় ডলারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ গড়ে তোলার আগ্রহ বিশ্বে হ্রাস পায়। এদিকে ৭০’র দশকের প্রথম দিকে মার্কিন সরকার একতরফাভাবে ডলারের সাথে সোনার সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং সোনার বিপরীতে ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। মার্কিন অর্থনীতির দুর্বল অবস্থা ডলারকে দিনকে দিন দুর্বল করতে থাকে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা দেশ নয় কিংবা বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশও নয়। তাই পুঁজিবাদী মার্কিন সমাজের চির-অতৃপ্ত ভোগের চাহিদা মেটানোর জন্য মার্কিন সরকারকে এখন বিপুল পরিমাণ ডলার ছাপাতে হচ্ছে এবং বিদেশ থেকে ধার করতে হচ্ছে অর্থ। বর্তমানে মার্কিন সরকারের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ১৩০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং জাতীয় দেনার পরিমাণও ১৪ হাজার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

এ অবস্থায় বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারী ও অন্য দেশগুলোর কাছে ডলার আর আকর্ষণীয় মুদ্রা নয়। গত কয়েক বছরে ডলারকে অন্য স্থিতিশীল মুদ্রায় বা অন্য কোনো বেশি দামী পণ্যে রূপান্তরিত করার প্রবণতা জোরদার হয়েছে। ডলারের মূল্য পতন মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বা সে দেশে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে সহায়তা করলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন ভূমিকা দুর্বল করছে। ইউরোপীয় নেতারা এখন এ জন্য চিন্তিত যে ডলারের দাম কমতে থাকলে ইউরোর চাহিদা বড়বে এবং এর ফল ইউরো জোনে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়বে। আর এ জন্যই ফরাসী প্রেসিডেন্ট শক্তিশালী ডলারকে সমর্থন দিচ্ছেন, যদিও ডলারের উচ্চ মূল্য বজায় রাখা রুগ্ন মার্কিন অর্থনীতির পক্ষে অসম্ভব।