লিবিয়ায় আক্রমণ চলেছে, ন্যাটো দ্বিধাগ্রস্ত

মূল প্রচেষ্টা হল লিবিয়ায় মার্কিন সামরিক সংশ্লেষকে যতোটা সম্ভব সীমিত করে দেখানো৷ ন্যাটো আবার এক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাতেই আটকে রয়েছে৷

ওডিসি ডন অভিযানে মার্কিনিরা যে মুখ্য ভূমিকা নিতে এতো গররাজি, তার কারণ জার্মানির মতো সাবধানি দেশের মনোভাব দেখলেই বোঝা যায়৷ লিবিয়ায় যে শেষমেষ কি ঘটবে, তা এতোটাই অনিশ্চিত, যে যারা সামরিক হস্তক্ষেপে অংশ নিচ্ছে, এবং যারা সামরিক হস্তক্ষেপে অংশ নিচ্ছে না, দু’দলই একটা ঝুঁকি নিচ্ছে৷ একদিকে আরব বিশ্বে একটা বড় পরিবর্তনের সময় বাদ পড়ার আশঙ্কা৷ অপরদিকে আরেকটা ইরাক কিংবা আফগানিস্তানে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা৷ মার্কিন সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান এ্যাডমিরাল মাইক মালেন নিজে বলেছেন: লিবিয়ায় সামরিক পদক্ষেপের ফলশ্রুতি ‘‘খুবই অনিশ্চিত”৷

হ্যাঁ থেকে না’এর দূরত্ব

ফ্রান্স তো গোড়া থেকেই একলা চলো রে মনোভাব নিয়েই মাঠে নেমেছে৷ ব্রিটেন’ও সেরকম৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন ধরি মাছ না ছুঁই পানি করতে পারলে বাঁচে৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি আধা দুনিয়াকে প্যারিসে ডেকেছিলেন বটে, কিন্তু বস্তুত তিনি শুধু আরব লিগের হ্যাঁ শুনতে পেয়েই খুশি৷ এখন তো সেই হ্যাঁ’ও ধীরে ধীরে না হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷

ন্যাটোয় তকরার

সারা সপ্তাহান্ত ধরে ব্রাসেলসে ন্যাটোর বৈঠকের পর বৈঠক চলেছে৷ কিন্তু তা’তে লিবিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি৷ একমাত্র যা ঠিক হয়েছে, তা হল: জাতিসংঘের প্রস্তাবে লিবিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, ন্যাটো তা কার্যকরি করতে সাহায্য করবে৷ এই আন্তঃ-অতলান্তিক সামরিক জোটের পক্ষে ঘরের পাশে যখন বোমা পড়ছে, তখন জলপুলিশের কাজ করাটা কতোটা সম্মানজনক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে৷ ভাবা যায়? ন্যাটোয় এখনও নো-ফ্লাই জোন নিয়ে তকরার চলেছে৷ অবশ্য ফ্রান্স স্বয়ং নাকি এই লিবিয়া সংঘাতে ন্যাটোকে দূরেই রাখতে চায়৷ কেননা একে তো আফগানিস্তান যুদ্ধের কারণে আরব বিশ্বে ন্যাটোর বিশেষ সুনাম নেই৷ দ্বিতীয়ত, ন্যাটো বলতেই মার্কিন নেতৃত্বের কথা মনে পড়ে৷

গাদ্দাফির মতিগতি

গাদ্দাফির কৌশলও এযাবৎ স্পষ্ট নয়৷ রবিবার আরো একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সেটা ভঙ্গও করেছেন, বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের অভিযোগ৷ নয়তো বিদেশী সাংবাদিকদের ডেকে তথাকথিত নিহত বেসামরিক ব্যক্তিদের কবর দেখানো হচ্ছে৷ ওদিকে যুদ্ধও কিছু থেমে নেই৷ বেনগাজি যাবার পথে ধ্বংস ট্যাংকের পাশে গাদ্দাফির সৈন্যদের মৃতদেহ৷ অপরদিকে খোদ বেনগাজির ভিতরেও কিন্তু বিস্ফোরণ এবং ভারী গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে৷ গাদ্দাফি অনুগামীরা হয়তো বেনগাজিতে ঢোকার চেষ্টা করেও থাকতে পারে৷ আর পশ্চিম লিবিয়ায় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত শেষ শহর মিসরাতা’তে সরকারি ট্যাংক ঢোকার খবর তো আছেই৷

প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী

Dw-World.De