উজিরপুরের ২৫টি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ

বাকী থাকলেও চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের মধ্যে ভোট কেন্দ্র দখল, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে না দেয়ার হুমকী, গনসংযোগে বাধা প্রদান ও আচরণ বিধি ভঙ্গ করে ২৫/৩০টি করে মটর সাইকেলের বহর নিয়ে বিল অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে মহরা দেয়ার কারণে ভীতি ও শংকা বিরাজ করছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উজিরপুরের ৯ ইউনিয়নের মধ্যে ৭ ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে সাতলা ইউনিয়নে ১১জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে পরিমল কুমার বাইন, আক্তার হোসেন হিরু, মো: ইউনুচ হাওলাদার, সুভাষ রায় ভোট কেন্দ্র দখল হওয়ার আংশকা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডে নারী সদস্য প্রার্থী মোসা: হালিমা খানমকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শিরিনা আক্তারের লোকজন তার প্রচার কাজে বিঘœ সৃষ্টি ও হুমকী ধামকী দিচ্ছেন বলে হালিমা খানম ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করছেন। ৬নং ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থী টিটুল বিশ্বাস খাসি কেটে বাড়ীতে বসে তার কর্মী সমর্থকদের ভূরিভোজ করিয়েছেন বলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। সেই সাথে ওয়ার্ল্ড মিশন, রাজাপুর, সাতলা ও আলামদী ভোটকেন্দ্র অধীক ঝুঁকিপূর্ণ বলে একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন।

হারতা ইউনিয়নে ৩জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ডা: হরেন রায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রচার কাজ চালাচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকী দিচ্ছে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ভোটাদের বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকী দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বহিরাগতরা এসে হারতার নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারে বলে তিনি জানান। এছাড়া হীরাবাড়ী, জামবাড়ী, নাথারকান্দী, বড়ইভিটা, কালবিলা ভোটকেন্দ্র গুলো অধিক ঝুঁকি পূর্ণ বলে নারী ও সাধারন সদস্য প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে ডা: হরেন রায় স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করেছেন বলে তিনি জানান।
জল্লা ইউনিয়নে ১২জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু ও অরুন চন্দ্র বিশ্বাস বলেছেন, ঘরইবাড়ী, মজম, শহীদ স্মরণীকা ও বাহেরঘাট ভোট কেন্দ্র বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দখল করতে পারে বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন। বিগত সকল নির্বাচনে ঐ কেন্দ্র গুলোতে কোন ভোটার সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেনি বলে ইতিহাস আছে। সেই সাথে বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে প্রচার কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে এবং তার নামে বিভিন্ন অপ্রীতিকর সংবাদের গুজব রটিয়ে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূল ধারার বাহিরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অন্য দিকে আচরণ বিধি ভঙ্গ করে একাধিক প্রার্থী ৩০-৩৫টি মটর সাইকেলের বহর নিয়ে গ্রামীণ জনপদে ভোটারদের বিভ্রান্তি ও ভয় দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে ঐ ইউনিয়নে ৬জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর একমঞ্চে একত্রিত হওয়ার একটি আলোচনা সভা ২৩মার্চ সন্ধ্যায় ঊর্মিলা বাড়ৈ’র কারণে ভন্ডুল হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ওটরা ইউনিয়নে ৬জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল অভিযোগ করেন ওটরা ইউনিয়নের ১০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে পূর্ব ওটরা, গজালিয়া, চকমানসহ প্রতিটি কেন্দ্রই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ২৯মার্চ নির্বাচনের দিন সকল কেন্দ্রেই তিনি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রশাসনিক টিম রাখার দাবী জানিয়েছেন। সেই সাথে তাকে হত্যার হুমকী ও নির্বচনী প্রচার কাজে তাকে বাধা দেয়া হচ্ছে এবং তার কর্মী সমর্থকদের হুমকী ধামকী দেয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অন্যদিকে এলাকায় কালটাকা ছড়িয়ে ভোট কেন্দ্রগুলো দখল করে তার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেছেন।

বামরাইল ইউনিয়নে ৫জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান গৌরাঙ্গ লাল কর্মকার ও সাবেক চেয়ারম্যান আ: মতিন সরদার নান্টু অভিযোগ করেন অন্য প্রার্থী মো: ইউসুফ হাওলাদার এলাকায় কালোটাকা ছড়িয়ে তাদের কর্মী সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং আচরণ বিধি ভঙ্গ করে অর্ধ্বশত মটর সাইকেলে মহড়া দিচ্ছে। ঐ ইউনিয়নে ধামসর, আটিপড়া, কাজিরা, কালিহাতা, সানুহার, খোলনা, ভরসাকাঠী ভোটকেন্দ্রগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে গৌরাঙ্গ লাল কর্মকার অভিযোগ করেছেন। সেই সাথে ইউসুফ হাওলাদারের সমর্থক সামসুল আলম জুলফিকার, জাহাঙ্গীর সরদার, পলাশ তালুকদার, ফজলুল হক সরদারসহ আরো অনেকে গৌরাঙ্গ কর্মকার ও তার কর্মী সমর্থকদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এর মধ্যে হস্তিশুন্ড বাজারে জুলফিকার তার লোকজন নিয়ে গৌরাঙ্গ বাবুর সমর্থকদের হুমকী দিলে থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাছাড়া আটিপাড়া মসজিদে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেয়াকে কেন্দ্র করে ইউসুফের সমর্থকদের মধ্যে দুই পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সংবাদ পাওয়া গিয়েছিল। এ ব্যাপারে ইউসুফ হাওলাদারের সাথে কথা বললে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সর্বসাকুল্যে উজিরপুর উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৬৫ টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সরকারী ভাবে ২৫টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ দেখানো হলেও এর সংখ্যা আরো অধিক বলে একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়সিন্ধু তালুকদার, অফিসার ইন চার্জ(ওসি) সুকুমার রায় ও সাতলা, হারতা, জল্লা ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার শ্যামল সেনগুপ্তসহ অন্যান্য রিটার্নিং অফিসারদের সাথে কথা বললে তাঁরা  ঝুকিপূর্ণ সকল কেন্দ্রেই অিিতরিক্ত ব্যবস্থা নেবেন ও ভোটারদের নির্বিঘেœ নিরাপদে ভোট প্রদানের ও যাতায়াতের সুষ্ঠ ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন বলে তারা জানান।