বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা শুরু আজ

জীবনের দুঃখ মোচন ও শান্তি অর্জনের এবং জগতের মঙ্গলার্থে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে সাড়ে চার’শ বছরের পুরনো দেশের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বার্থী তাঁরামায়ের মন্দিরে দু’দিনব্যাপী বাৎসরিক পূজা ও মেলা শুরু হচ্ছে আজ শনিবার।

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার বার্থী বাসষ্ট্যান্ডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বার্থী তাঁরামায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ১০ ও ১১ চৈত্র বাংলা (ইংরেজী ২৫ ও ২৬ মার্চ) ঐতিহ্যাবাহী মন্দিরের বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উপলক্ষে মন্দিরের পাশ্ববর্তী এলাকায় ২৫ ও ২৬ মার্চ দু’দিনব্যাপী মেলা বসবে। প্রতিবছর পূজা ও মেলায় ভারতসহ দেশের বিভিন্নস্থানের লাখো ভক্তের সমাগম ঘটে। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ২৫ মার্চ পূজা আরম্ভ ও চন্ডীপাঠ, দুপুরে বলিদান, সন্ধ্যায় মায়ের সামনে আরতী প্রতিযোগীতা, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাতে বিশ্বশান্তি কল্পে প্রার্থনা ও শিবাভোগ। ২৬ মার্চ প্রসাদ বিতরন। ‘কে বলেছে মা আমার কালো-মা যে আমার বিশ্ব জুড়ে জ্বালিয়ে দিলো আলো, কে বলেছে মা আমার কালো’। ধর্মীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার মধ্যে রয়েছে, তাঁরামায়ের জীবনির ওপর স্বরচিত সংগীত প্রতিযোগীতা। প্রতিবছরের ন্যায় দু’দিনব্যাপী পূজা অনুষ্ঠানে আগত ভক্তবৃন্দের নিশ্চিত নিরাপত্তা দেয়ার জন্য গৌরনদী থানা পুলিশের সাথে মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম বলেন, পুলিশ প্রসাশনের পক্ষ থেকে দু’দিনব্যাপী পূজা ও মেলা অনুষ্ঠানে আগত ভক্তদের কঠোর নিরাপত্তা দেয়া হবে। ঐতিহ্যবাহী এ মন্দিরের পূজা ও মেলাকে ঘিরে প্রতিবছর গৌরনদীতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পরে।

বার্থী তাঁরামায়ের মন্দির কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত এএসপি শান্তনু ঘোষ ও সাধারন সম্পাদক প্রণব রঞ্জন বাবু দত্ত জানান, দেশের মধ্যে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বার্থী তাঁরামায়ের মন্দিরটি প্রায় সাড়ে চার’শ বছরের পুরনো। ইতিহাসের আলোকে তারা দাবি করে বলেন, বার্থী এলাকার জমিদার প্রয়াত ভুবতী কান্ত বক্শি প্রথমে তাঁরামায়ের মন্দিরের নামে ৫৭ শতক জমি দান করেন। দেশের একমাত্র ঐহিত্যবাহী তাঁরামায়ের মন্দিরটি গৌরনদীর বার্থী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারই নামানুসারে ওই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বার্থী তাঁরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তাঁরাকুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তাঁরাকুপি নামের একটি গ্রাম। বাংলা ১১১১ সালে বরিশালের বিখ্যাত জমিদার রাম লাল ভট্টাচার্য তাঁরামায়ের মন্দিরের পাকা ভবন নির্মান করে দিয়েছেন। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার তাঁরামায়ের ভক্তদের অনুদানে প্রসিদ্ধ ও সার্বজনীন এ মন্দিরটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। পূজা ও মেলা উপলক্ষে গত বছরের তুলনায় এবছর ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, বিভিন্ন ধর্মরক্ষিনী সভা থেকে জানা গেছে, বৃট্রিশ সরকারের আমলে তাঁরামায়ের মন্দিরে সেবাইত হিসেবে ছিলেন ভগবান শ্যাননাল ও রমেশ শ্যাননাল। ১৯৮৪ ইং সাল থেকে মন্দিরের সেবাইত হিসেবে অনিল বৈদ্ধ ও সার্বক্ষনিক মন্দিরের কাজের জন্য ৩ জন কর্মচারী নিয়োগ রয়েছেন। বার্থী তাঁরামায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও জনতা ব্যাংকের পরিচালক এডভোকেট বলরাম পোদ্দার বাবলু, গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম খান, পৌর মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এছাড়াও পূজা ও মেলা অনুষ্ঠানে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা ও ভারতসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে লাখো ভক্তের সমাগম ঘটবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।