স্বামীর মৃত্যুর ৫ বছর পর স্ত্রীর গর্ভধারণ

তবে এ ঘটনাকে হালকাভাবে উড়িয়ে দিলে ওই স্ত্রীর চরিত্রে কলঙ্ক লেপন হবে। সে তার প্রকৃত স্বামীর মাধ্যমেই গর্ভধারণ করেছেন। কিন্তু তার মৃত্যুর ৫ বছর পর। ঘটনার নাটকীয়তা এখানেই।

গর্ভধারণ করা ওই স্ত্রী’র নাম অরু্ণিতা। তার জন্ম ভারতের আহমেদাবাদে। পরবর্তীতে সে যুক্তরাজ্যে প্রবাসি হয়। সেখানে বসবাসকালে তার পরিচয় হয় ইতালিয় বংশোদ্ভুত প্রকৌশলী মাইকেলের সঙ্গে । একপর্যায়ে তারা বিয়েও করে। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে তীব্র ভালোবাসার সম্পর্ক। কিন্তু অরুণিতার কপালে সুখ সয়নি। কিছুদিন যেতে না যেতেই মাইকেল প্রাণঘাতী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। মাইকেলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা ক্যান্সার নিরাময়ে কেমো থেরাপি দেন। তবে কেমো দেয়ার আগে তারা মাইকেলকে সতর্ক করে দেন যে, এরপর সে সুস্থ্ হলেও বাবা হতে পারবেন না। তাই ডাক্তারদের পরামর্শে মাইকেলের শুক্রাণুর কিছু নমুনা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। তবে কেমো দেয়ার পরেও মাইকেলকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শোকের অকূল পাথারে পড়লো অরুণিতা। সে কিছুতেই মাইকেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। সে তার মাইকেলকে ফেরত চায়। কিন্তু সেটা যে সম্ভব নয় তা অরুণিতা ভালো করেই জানতো। তবু অরুণিতা হাল ছেড়ে দেয়নি। মাইকেলের রেখে যাওয়া শুক্রাণুর নমুনার মধ্যেই সে তার স্বামীকে ফেরত পাওয়ার আশা দেখতে পেল। মাইকেলের সন্তানই তো আরেক মাইকেল হবে। অবশেষে মাইকেলের রেখে যাওয়া এ সম্বল নিয়ে ২০০৯ সালে অরুণিতা ভারতে ফিরে আসে। এসেই শরণাপন্ন হয় চিকিৎসকদের। এর আগে যুক্তরাজ্যেও সে সন্তান ধারণের চেষ্টা করেছিল। তবে তাতে ব্যর্থ হয় সে।

ভারতের চিকিৎসকরা তাকে আশার আলো দেখায়। তারা অরুণিতার ডিম্বাণুকে টেস্টটিউবে তার স্বামী মাইকেলের রেখে যাওয়া শুক্রাণুর সঙ্গে নিষেক ঘটায়। অরুণিতার মনে আশঙ্কা ছিল। কারণ এর আগে কয়েকবার সে ব্যর্থ হয়েছে। তবে নিষেক সফল হয় এবং তার আশঙ্কাও কেটে যায়। অরুণিতা অবশেষে তার মৃত স্বামীর সন্তান ধারণের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।

পরে চিকিৎসকরা নিষিক্ত ডিম্বাণু সফলভাবে অরুণিতার জরায়ুতে স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
চিকিৎসক দলের একজন ডাক্তার হিমাংশু বাভিশি বলেন, অরুণিতা মাত্র ২টি নমুনা নিয়ে আমাদের নিকট আসে। আমরা এটাকে ১০টি ভাগ করি। অরুণিতা গর্ভধারণের জন্য চার্চে প্রার্থনা করেছিলেন। তার প্রার্থনার জবাব সে পেয়েছে। তবে অল্পবয়স্ক নারীদের মধ্যে অরুণিতাই প্রথম তাদের নিকট এভাবে মৃত স্বামীর শুক্রাণু দিয়ে গর্ভধারণের জন্য আসে। সাধারণত অনেকেই এক্ষেত্রে নতুন স্বামী গ্রহণ করেন।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।