নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালিদের কর্মসূচি

ইউনিয়ন স্কোয়ারে মহাত্মা গান্ধীর স্ট্যাচুর সামনে প্রবাসী বাঙালিদের ব্যতিক্রমী এক সমাবেশ বহুদেশের মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। অসংখ্য আমেরিকান এ দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেছেন যে তারাও স্ব উদ্যোগে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করবেন। ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে বাঙালি নিধনের নৃশংস এ NYদিনটিকে সারাবিশ্বের বিবেকসম্পন্ন মানুষদের স্মৃতিতে চিরজাগরুক রাখার মধ্য দিয়ে হায়েনার বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ধিক্কার প্রদর্শনের পথ সুগম করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন কয়েকজন আমেরিকান।

ম্যানহাটানে ইউনিয়ন স্কোয়ারে মহাত্মা গান্ধীর স্ট্যাচুর সামনে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবিতে নিউইয়র্কস্থ ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট জেনোসাইড এন্ড ওয়ার ক্রাইমস’র কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ।

নিউইয়র্কস্থ ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট জেনোসাইড এন্ড ওয়ার ক্রাইমস’ নামক একটি মানবাধিকার সংস্থার ব্যানারে ২৫ মার্চ ‘৪০তম গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে মানুষের অধিকার আদায়ের স্মৃতিবাহী ‘ইউনিয়ন স্কোয়ারে’ এ সমাবেশে বিশাল একটি লাল কাপড়ের উপর একাত্তরের হায়েনার বিখ্যাত ছবি ছাড়াও একাত্তরে পাক হায়েনাদের নৃশংসতার বেশকিছু ডক্যুমেন্ট প্রদর্শন করা হয়-যা বিভিন্ন দেশের কৌতুহলী মানুষেরা গভীর মনোযোগ সহকারে প্রত্যক্ষ করেন। ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার জন্যে জাতিসংঘের কাছে কয়েক বছর যাবত দাবি জানাতে নিউইয়র্ক, লন্ডনসহ কয়েকটি সিটিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। তবে ইউনিয়ন স্কোয়ারের এ কর্মসূচি আগেরগুলোকে ছাপিয়ে গেছে বলে মনে করছেন আয়োজক সংস্থার প্রধান বাকসুর সাবেক জিএস ড. প্রদীপ রঞ্জন কর। তিনি বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে অর্ধ লক্ষাধিক এবং এরপরের ৯ মাসে দৈনিক গড়ে ১১ সহস্রাধিক বাঙালিকে হত্যা এবং ৯ মাসে দু’লাখ মা-বোনের সমভ্রমহানীসহ এক কোটি মানুষকে দেশান্তরী করার বিস্তারিত তথ্য সাধারণ আমেরিকানদের অজানাই ছিল। এখন তারা তা জানতে পেরে আঁতকে উঠছেন। এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, স্বাধীনতা চেতনামঞ্চ, সমিমলিত সাংস্কৃতিক জোট, শেখ হাসিনামঞ্চ, চট্টগ্রাম আওয়ামী ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান চলাকালে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে সকলে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন একাত্তরের শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অবিলম্বে ঘাতকদের বিচার সম্পন্ন করার আহবান জানাতে।

২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা দাবিতে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে ইউনিয়ন স্কোয়ারে মহাত্মা গান্ধীর স্ট্যাচুর সামনে এভাবেই একাত্তরের হায়েনাদের বর্বরোচিত আচরণের ডক্যুমেন্ট প্রত্যক্ষ করেন বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণের মানুষেরা।

একইদাবিতে এবং একই সংস্থার আহবানে নিউইয়র্ক সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে জ্যাকসন হাইটসে বাঙালি অধ্যুষিত ৭৩ স্ট্রীটে মোমবাতি মিছিল হয়। এতে শহীদ পরিবারের সদস্য ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা-জনতা অংশ নেন।

এদিকে লন্ডন থেকে এনা প্রেরিত সংবাদে আরো জানা গেছে, যুক্তরাজ্যস্থ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের গণহত্যার ৪০তম বার্ষিকীতে আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানাতে চাই- ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষিত হোক। এই দিন আমরা স্মরণ করতে চাই বিশ্বের সেই সব মানুষকে যারা গণহত্যার শিকার হয়েছেন। নিহতদের স্মরণে আমরা প্রত্যেকে অন্ততঃ একটি মোমবাতি জ্বালাতে চাই, যে আলো ঘাতকের চেতনা থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানির কালিমা দুর করবে’।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণহত্যার বিরুদ্ধে গনসচেতনতা ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে বছরে অন্তত একটি দিন নির্বাচন করতে হবে, যেদিন সমস্ত পৃথিবীর মানুষ স্মরণ করবে নিহতদের, দাবি জানাবে গণহত্যাকারীদের বিচারের এবং উদ্যোগ নেবে গণহত্যা অবসানের’। নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ আমরা আশা করর যেভাবে শেখ হাসিনার সরকার প্রথম মেয়াদকালে জাতিসংঘের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারীর স্বীকৃতি আদায় করেছে, ঠিক একইভাবে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের জন্য জাতিসংঘে এবং দেশে দেশে কুটনৈতিক তৎপরতা চালাবে। আমরা বিশ্বাস করি সরকার উদ্যোগী হলে বিশ্বের যত দেশে আমাদের মতো ভুক্তভোগীরা আছে সবাই এই দাবির সঙ্গে সহমত পোষন করবে’। সংগঠনের সভাপতি ডাঃ বি বি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা ছাড়াও বিবৃতিতে অন্যানের মধ্যে স্বাক্ষর করেছেন সহসভাপতি ইসহাক কাজল, মোহামমদ হরমুজ আলী, প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক আনসার আহমেদ উলস্না, সহসাধারণ সম্পাদক জামাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাদ চৌধুরী বাবু, কোষাধ্যক্ষ ঝলক পাল, প্রচার সম্পাদক সাঈম চৌধুরী, প্রকাশনা সম্পাদক আমিনা আলী, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ এনাম, ওয়ালিউর রহমান, মঞ্জুরুল আজিম পলাশ, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান ও মঞ্জুলিকা জামালী প্রমুখ।