পিলখানা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে উইকিলিকসের তথ্য

‘উইকিলিকস’-এর উদ্ধৃতি দিয়ে তথ্যগুলো প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ এবং ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’। দৈনিক দুটির ২৭ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত তথ্যগুলোকে এভাবে সাজানো যায় :

Pilkhana১. পিলখানায় কথিত বিডিআর বিদ্রোহের পর ‘সাহায্য চেয়ে’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিকে টেলিফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২. তিনি ঠিক কোন ধরনের ‘সাহায্য’ চেয়েছিলেন তার উল্লেখ না করলেও খবরে বলা হয়েছে, প্রণব মুখার্জি ‘ইতিবাচক সাড়া’ দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রয়োজন অনুযায়ী’ সহায়তা করা হবে

৩. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোন পাওয়ার পরই প্রণব মুখার্জি বিষয়টি নিয়ে লন্ডন, বেইজিং এবং টোকিও’র সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

৪. ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) অর্থাত্ হত্যাকাণ্ডের পরদিনই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শিবশঙ্কর মেনন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টিভেন হোয়াইটকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। মার্কিন দূত লক্ষ্য করেছিলেন, শেখ হাসিনার নতুন সরকারের ওপর বিদ্রোহের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল ভারত সরকার।

৫. পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত বিবরণসহ ২০০৯ সালের ২ মার্চ ওয়াশিংটনে পাঠানো ১৯৪৬৬১ নম্বর গোপনীয় তারবার্তায় মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জানিয়েছিলেন, ভারতের ভয় ছিল, বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ করতে পারে। কারণ, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া কার্যক্রমে জামায়াত ‘নাখোশ’ ছিল।

৬. ভারতের পররাষ্ট্র সচিব অবশ্য বিদ্রোহের ঘটনায় জামায়াতকে সরাসরি দায়ী করেননি। তবে বলেছিলেন, এই বিদ্রোহের পেছনে ছিল দীর্ঘ পরিকল্পনা, যদিও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় ‘দীর্ঘ’ হতে পারে না।

৭. ভারতের দ্বিতীয় ভয় ছিল, বিদ্রোহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।

৮. পররাষ্ট্র সচিব একটি কারণে আশাবাদী ছিলেন। কারণটি ছিল, পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল করতে’ সেনাপ্রধান (জেনারেল মইন উ আহমেদ) সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছিলেন।

৯. এক মাস পর, ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ পাঠানো ১৯৮৯৫২ নম্বর গোপনীয় তারবার্তায় মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছিল, তখন পর্যন্তও শেখ হাসিনার সরকারের স্থিতিশীলতা ছিল ভারতের উদ্বেগের মূল বিষয়। ঘটনাপ্রবাহে উগ্রবাদীদের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়েও ভারত উদ্বিগ্ন ছিল।

১০. ২০০৯ সালের ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ঢাকা সফরের পর পররাষ্ট্র সচিব শিবশঙ্কর মেনন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার বার্গিলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ১৬ এপ্রিলের ২০২৬১৫ নম্বর তারবার্তায় মার্কিন দূতাবাস জানায়, ভারতের ভয়ের কারণ জানাতে গিয়ে মেনন বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন যে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং ভারতে আক্রমণ চালানোর মতো ‘ফ্রি হ্যান্ড’ বা অবাধ সুযোগ নিতে পারে। অর্থাত্ এরা ভারতের ভেতরে ঢুকে আক্রমণ চালাতে পারে।

১১. জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর পরিচিতি দিতে গিয়ে শিবশঙ্কর মেনন জামায়াতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক দল, হরকাতুল জেহাদ আল ইসলামী বা হুজি’র মতো মৌলবাদী গ্রুপের কথা জানিয়েছিলেন।

১২. ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শিবশঙ্কর মেনন বলেছিলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি তখনও অর্থাত্ ২০০৯ সালের মধ্য এপ্রিলেও ‘ভঙ্গুর’ ছিল।

‘দ্য হিন্দু’ এবং ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’য় প্রকাশিত খবরে এসবের বাইরে আর কিছু জানানো হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে পড়লে মনে হতে পারে যেন বিদ্রোহের আড়ালে সেনা অফিসারদের হত্যাকাণ্ডে ভারতের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না, ভারতীয়রাও ছিল অন্ধকারে। অন্যদিকে ঘটনাপ্রবাহে কিন্তু অন্য রকম তথ্যই প্রাধান্যে এসেছিল। এখানে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের কথা উল্লেখ করা দরকার। বাংলাদেশের কোনো মানুষ জানার, এমনকি কল্পনা করারও অনেক আগে, বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পরপর বেলা ১২টার দিকেই ভারতীয় টিভি চ্যানেল সিএএন-আইবিএন ও এনডিটিভি প্রচার করেছিল, বিডিআরের ডিজি ও তার স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এটা এমন কারও পক্ষেই শুধু জানা সম্ভব, যারা মূল পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকে। খবরের ‘সূত্র’ও ছিল যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। ভারতীয়দের প্রত্যেকেই খবর পেয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা ‘সূত্রে’। সেকথা তারা উল্লেখও করেছিল। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল, ঘটনাপ্রবাহে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গভীরভাবেই জড়িত ছিল।

দ্বিতীয়ত, উইকিলিকস ভারতের ‘সাহায্য’ চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধ জানানোর কথা প্রকাশ করেছে সত্য, কিন্তু জানায়নি ‘সাহায্য’ করার জন্য ভারত ঠিক কোন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। প্রকাশিত তথ্যগুলো পড়লে মনে হতে পারে যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করার এবং মুখে মুখে ‘ইতিবাচক সাড়া’ দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন প্রণব মুখার্জি। অন্যদিকে সত্য হলো, ঢাকা থেকে সাহায্যের জন্য ‘সুনির্দিষ্ট অনুরোধ’ যাওয়ার পর রাতারাতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্যারাস্যুট রেজিমেন্টকে আগ্রা থেকে পশ্চিম বঙ্গের কালাইকুণ্ডে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে এই রেজিমেন্টের সেনাদেরই বিমানযোগে বাংলাদেশে নামানো হয়েছিল। অর্থাত্ বাংলাদেশ ছিল তাদের ‘নখদর্পণে’। ওদিকে পশ্চিম বঙ্গের পাশাপাশি আসামেও ‘প্রস্তুত’ ছিল ভারতীয় বিমান বাহিনীর বোমারু বিমান। এসব খবর সে সময় ভারতের সংবাদ মাধ্যমই জানিয়েছিল। অর্থাত্ শেখ হাসিনার সরকারকে ‘সাহায্য’ করার জন্য ভারত রীতিমত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল। ভারতের অনুমান ছিল, এতজন অফিসারের হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়বে। সেনাবাহিনী ‘ভুল’ করে বসবে। আর তেমন ‘ভুল’ করা মাত্রই শুরু হবে প্রণব মুখার্জিদের ‘সাহায্য’—ভারতের সেনাবাহিনী সোজা বাংলাদেশে ঢুকে পড়বে। সেনাবাহিনী অবশ্য ‘ভুল’ করার পরিবর্তে যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছিল। ফলে ভণ্ডুল হয়ে গেছে সব আয়োজন—যার পেছনে ছিল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র।

উইকিলিকসের বরাত দিয়ে ভারতের দৈনিক দুটির খবরে কিন্তু এসব বিষয়ের কোনো উল্লেখ নেই। প্রসঙ্গক্রমে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ওই সময়কার ভূমিকা স্মরণ করা দরকার। কথিত বিডিআর বিদ্রোহের পরমুহূর্ত থেকেই দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে উঠেপড়ে লেগেছিল তারা। দৃশ্যপটে প্রথমে এসেছিল কলকাতার দৈনিক ‘আনন্দবাজার’ ও ‘দ্য টেলিগ্রাফ’। দৈনিক দুটি বিদ্রোহের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা ‘আবিষ্কার’ করে বসেছিল। ভারতীয় গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘আনন্দবাজার’ লিখেছিল, বিদ্রোহে যাদের সামনের সারিতে দেখা গেছে তাদের বেশিরভাগই নাকি বিএনপি ও জামায়াতের ‘সমর্থক’! ‘আনন্দবাজার’-এর পরপর ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ও গল্প ফেঁদেছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় দৈনিকটি লিখেছিল, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে নস্যাত্ করার জন্যই নাকি বিডিআরের বিদ্রোহ ঘটানো হয়েছে! এর পেছনে কারা রয়েছে—সে ‘তথ্যও’ আবিষ্কার করেছিল ‘দ্য টেলিগ্রাফ’। লিখেছিল, যুদ্ধাপরাধীরা এখন জামায়াতে ইসলামীর নেতা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্কের বিষয়টি সবারই জানা। জামায়াত ও বিএনপিকে ‘পাকিস্তানপন্থী দল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়! ওদিকে ‘আনন্দবাজার’ও পিছিয়ে থাকেনি। ২ মার্চ দৈনিকটি লিখেছিল, ‘বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে মৌলবাদী ইসলামী শক্তির উপস্থিতি ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।’ পুলিশ নাকি বিদ্রোহের প্রধান নেতা তৌহিদুল আলমের একটি ‘রাজনৈতিক পরিচয়’ খুঁজে পেয়েছিল। সে নাকি কিশোর বয়সেই জামায়াতের ছাত্র শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য এবং স্থানীয় স্তরের নেতা হয়েছিল। এ পর্যন্ত এসেই অজান্তে একটি অতি তাত্পর্যপূর্ণ তথ্য জানিয়ে ফেলেছিল ‘আনন্দবাজার’। লিখেছিল, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক তৌহিদের সহপাঠী ছিলেন এবং সে সূত্র ধরেই নানক তার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন।

এভাবেই তথ্যযুদ্ধ চালিয়েছিল ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো। সমস্যা বাংলাদেশের হলেও মাথাব্যথায় মরে যাচ্ছিল তারা। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, দেশের ভেতরেও সে সময় বিএনপি ও জামায়াতকে জড়িয়ে নানা ‘আবিষ্কারের’ কথা জানান দেয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সুরে একের পর এক ‘বিশ্লেষণ’ হাজির করেছিলেন। জাতীয় সংসদের ভাষণে তিনি এমনকি একথা পর্যন্ত বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনীকে নিয়ে ‘খেলনেওয়ালারাই’ নাকি পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে! ‘খেলনেওয়ালারা’ বলতে প্রধানমন্ত্রী ঠিক কাদের বুঝিয়েছিলেন সেকথা সাধারণ মানুষেরও বুঝতে অসুবিধা হয়নি। বলা বাহুল্য, এ ধরনের অভিযোগ হালে পানি পায়নি। এর একটি কারণ হলো, ‘ডিজিটাল’ নির্বাচনের সামান্য ধাক্কাতেই যারা ‘কুপোকাত্’ হয়ে পড়ে, তেমন কোনো দল বা জোটের পক্ষে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত করতে পারার প্রশ্ন উঠতে পারে না। তথ্যনিষ্ঠ পর্যালোচনায় বরং দেখা গেছে, ‘হাত গুটিয়ে’ বসে না থাকার ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি ভারত একেবারে ‘সশরীরে’ এসে যাওয়ার জন্য ‘এক পায়ে দাঁড়িয়ে’ থাকায় বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষে তেমন কোনো ঝুঁকি নেয়ার কথা চিন্তা করাও সম্ভব ছিল না।

এজন্য শুধু নয়, ঐতিহাসিক একটি বিশেষ কারণেও বিএনপি ও জামায়াতকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে দাঁড় করানো যায়নি। কারণটি হলো, স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় আগত আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর পাল্টা বাহিনী হিসেবে রক্ষীবাহিনী তৈরি করেছিল। অবস্থা এমন হচ্ছিল যে, আর কিছুদিন পর সেনাবাহিনীর নাম-নিশানাই মুছে যেত। সেই দুঃসময়ে সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারই রক্ষীবাহিনীর বিলুপ্তি ঘটিয়ে নতুন প্রাণশক্তি দিয়েছিল সেনাবাহিনীকে। জামায়াতে ইসলামীও সেনাবাহিনীর ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে সব সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে। এজন্যই জনগণকে বিশ্বাস করানো সম্ভব হয়নি যে, বিএনপি ও জামায়াত নিজের সন্তানের মতো সেনাবাহিনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘ইসলামপন্থীদের’ ফাঁসির এবং জামায়াতের ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়ার কথাটাও লক্ষ্য করা দরকার। কারণ সত্য হলো, চারদলীয় জোট সরকারের কঠোর নীতি ও ভূমিকার কারণেই জঙ্গি নেতারা গ্রেফতার হয়েছিল। সুতরাং ‘ইসলামপন্থী’ নামধারীদের ফাঁসিতে জামায়াতের ‘কোণঠাসা’ বা ‘নাখোশ’ হয়ে পড়ার প্রশ্ন উঠতে পারে না। তাছাড়া ভারতের মতো বিরাট দেশের ভেতরে গিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষে যুদ্ধ করা এবং ভারতকে ‘দুর্বল’ করা আদৌ সম্ভব কি না—হাস্যকর সে প্রশ্নের উত্তরও ভারত এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে যায়নি। ঘটনাপ্রবাহে বরং সম্ভাবনার অন্য দিকটিই অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে। সেটা বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এবং বিডিআরকে ধ্বংস করে ফেলা।

উইকিলিকসের তথ্যের ভিত্তিতে বর্তমান আলোচনার সমাপ্তি টানতে গিয়ে সংক্ষেপে বলা দরকার, পিলখানায় সেনা অফিসারদের হত্যাকাণ্ডকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহে ভারতীয়দের তত্পরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু আগ্রহ নয়, ভারতীয়দের মধ্যে উত্সাহের আতিশয্যও লক্ষ্য করা গেছে। দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলো অতি উত্সাহ দেখিয়েছে। দৃশ্যপটে এসেছে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নামধারী অনেক প্রতিষ্ঠানও। খুবই তাত্পর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো, কেউই শুধু খবর জানানোকে যথেষ্ট মনে করেনি। তারা অনেক বেশি গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনাপ্রবাহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে। তত্ত্বের পর তত্ত্ব হাজির করেছে। কিন্তু এসবের কোনো একটিতেই প্রকৃত সত্যের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বরং প্রমাণিত হয়েছে, ভারতীয়রা আসলে একই সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে পা বাড়িয়েছিল। প্রত্যেকেই বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির পেছনে উঠেপড়ে লেগেছিল। ফলে তাদের উদ্দেশ্যও অস্পষ্ট থাকেনি।