ছাত্র সংসদে শোভা পাচ্ছে জিয়া ও খালেদার ছবি

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদে শোভা পাচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি। এ নিয়ে সাধারন শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে অদ্যবর্ধি ছাত্র সংসদ ভবনটি তালাবদ্ধ রয়েছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়কার ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দরা সংসদ ভবনটি যেভাবেই তালাবদ্ধ করে রেখে গেছেন ছাত্র সংসদে শোভা পাচ্ছে জিয়া ও  খালেদার ছবিআজো ছাত্র সংসদ ভবনটি সে রকম তালাবদ্ধই রয়েছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে অসংখ্যবার দলের স্থানীয় র্শীর্ষ নেতাদের কাছে সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা ছাত্র সংসদের নির্বাচন দাবি করে আসছেন। অতিসম্প্রতি নির্বাচনের দিনক্ষন ঠিক করা হলেও রহস্যজনক কারনে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘদিন পর্যন্ত গৌরনদীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় গৌরনদীতে ক্রমেই ঝিমিয়ে পরেছে ছাত্রলীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম। অথচ বিগত চারদলীয় জোট সরকারের ৫ বছরে এ ছাত্র সংসদে দু’বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এর পূর্বেও ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এ ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবি করা হলেও তখনো ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ নির্বাচনের আলোর মুখ আর দেখেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫-১৯৬৬ সালের জন্য এ ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত ভিপি ছিলেন আ.ফ.ম ছরোয়ার আলম ও জিএস ছিলেন সন্তোষ কুমার। পরবর্তীতে প্রতি দু’বছর পর পরই নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদের ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন আজকের বিভিন্ন দলের স্থানীয় র্শীর্ষ নেতারা। ১৯৯১-১৯৯২ সালের জন্য ভিপি নির্বাচিত হন বর্তমানে ডেনমার্ক প্রবাসী মনিরুজ্জামান স্বপন। তার সাথে জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান গৌরনদী উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সফিকুর রহমান শরীফ স্বপন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিনে আর এ ছাত্র সংসদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর তৎকালীন এ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর কাছে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবি করেছিলেন তৎকালীন কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা। ওই সময়েও এ ছাত্র সংসদে কোন নির্বাচন হয়নি। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য এম.জহির উদ্দিন স্বপন ২০০২-২০০৩ সালের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আহবান করেন। সে সময় নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদল নেতা এস.এম জাকির হোসেন রাজা-ভিপি ও মোঃ ফুয়াদ হোসেন এ্যানি-জিএস নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০৪-২০০৫ সালের জন্য পূর্ণরায় সাংসদ স্বপন নির্বাচনের আহবান করেন। সে সময় ছাত্রদল নেতা কে.এম আনোয়ার হোসেন বাদল-ভিপি ও এস.এম সোহানুর রহমান সোহাগ-জিএস নির্বাচিত হন। এরপর আর ছাত্র সংসদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। গত ওয়ান ইলেভেনের সময় ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটির নেতৃবৃন্দরা যেভাবেই ছাত্র সংসদ ভবনটি তালাবদ্ধ করে রেখে গেছেন, ঠিক সেভাবেই আজো সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদ ভবনটি তালাবদ্ধ রয়েছে। ফলে সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদে এখানো শোভা পাচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র সংসদের নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে একাধিকবার কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। এতেও সংশ্লিষ্টদের কোন মাথা ব্যাথা হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে ক্লাশ বর্জনসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেতৃবৃন্দরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক ও সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস, গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহ আলম খান, গৌরনদী পৌরসভার মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান হারিছসহ দলের একাধিক নেতৃবৃন্দের কাছে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবি করেও আজো তার কোন সুফল পাওয়া যায়নি। নেতৃবৃন্দরা আরো জানান, অতিসম্প্রতি সাবেক চীফ হুইপের আশ্বাসে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ক্রমেই ফুঁসে উঠেছে সাধারন শিক্ষার্থীরা।