শান্ত ছিল সর্বহারা অধুষ্যিত জনপদ

গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের আধুনা, শাহজিরা, সাকোকাঠী, মিয়ারচর, কুরিরচরসহ ৬/৭টি কেন্দ্রে কেউ ভোট দিতে আসতে পারতো না সর্বহারাদের ভয়ে। এ বছর আর সেই ভয় নাই। আইজ সবাই খুশি মোনে শান্তিতে ভোট দিতে পেরেছি”। গতকাল রবিবার দুপুরে আধুনা ভোট কেন্দ্রের সম্মুখে বসে কথাগুলো বলেছেন ওই গ্রামের ভোটার দিনমজুর আনিচুর রহমান (৬৫)।

সরিকল ইউনিয়নের আধুনা গ্রামটি ছিলো নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা পার্টির নিরাপদ ঘাটি। সাকোকাঠী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সোহবার হোসেন খান (৭০) বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে অতীতে আজকের মতো এমন শান্তিপূর্ণ ভোট সরিকল ইউনিয়নের আর কখনো দেখিনি। সরিকল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ মনজুর হোসেন মিলন বলেন, আশির দশকের পর এবারই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জয়-পরাজয় যেটাই হোক সেটাই আমি মেনে নেবো।

অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন আকন জানান, সর্বহারা সন্ত্রাসীরা অতীতে সরিকল ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আকন, নশা মিয়া, মন্নান আকন, শুরেন্দ্র নাথ সিকদার, জহিরুল হক খোকনকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। এ ছাড়াও গত দুই দশকে এ অঞ্চলের প্রায় সহস্রাধিক লোককে খুন করেছে সর্বহারারা। আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী খন্দকার শাহ আলম মঞ্জু বলেন, একটি সময় এ অঞ্চলে সর্বহারাদের কথায়ই সবই হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্র থাকতো তাদের দখলে। দির্ঘদিন যাবৎ সর্বহারাদের আশির্বাদ পুষ্টরাই এ অঞ্চলের চেয়ারম্যান ও মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৩ বছরে এ অঞ্চলের ৮জন সর্বহারা সন্ত্রাসী র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হবার পর সন্ত্রাসীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছিলো।

এবারের নির্বাচনে দুইজন সর্বহারা নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় সর্বহারারা পূর্নরায় মাঠে নেমেছিলো। তবে এবার গোটা সরিকল ইউনিয়নের র‌্যাব-পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সতর্ক নজরদারি ও মিডিয়া কর্মীদের কারনে ভোটাররা শান্তিতেই ভোট দিতে পেরেছে। ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রে কোনো ধরনের উত্তেজনা নেই।

একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য করার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গৌরনদীর সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সরিকল ইউনিয়নের নির্বাচনের ৪ দিন পূর্বেই র‌্যাব সদস্যদের টহল বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়াও গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দিন প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে স্থায়ী ভাবে ছদ্রবেশে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থ্যার সদস্যরা অবস্থান করায় চিহ্নিত সর্বহারা সন্ত্রাসীরা আগেভাগেই গাঁ ঢাকা দিয়ে আত্মগোপন করে।