নারী ও প্রকৃতি

ঝড় বৃষ্টি বন্যা  ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির উত্তাপ দিয়ে সে জানিয়ে দিতে চায়  তার কর্তৃত্ব ও স্বার্বভৌমত্বের কথা  । কিন্তু কেন? কেন মাতৃ স্নেহে লালিত সন্তানকে এমন কঠোর শাস্তি? এর  যেমন বৈগ্ঞানিক  ব্যাখ্যা আছে  তেমন আছে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাও । য়ে যার অবস্থানে খেকে ব্যাখ্যা দিয়েই চলেছেন । প্রকৃতি চলছে তার আপন মনে ।

সকালে কাগজ খুলেই দেখলাম ইরানে একজন ধর্মীয় নেতা ভূমি কম্পের কারণ ব্যখ্যা  করে বলেছেন । দেখে আমার সমস্ত অস্তিত্বে চেতনায় এক ভূমিকম্প হয়ে গেল ।  এত কালের বিগ্ঞাণ ,সাধনা সব মিথ্যা প্রমাণিত হ;লো তাহলে ? উনি কি অবলীলায় বলেছেন , নারীর কারণে ই ভূমিকম্প । নারীর অশালীণ পোষাক, অমার্জিত আচার ব্যবহার , ব্যাভিচারই পৃথিবীতে ভূমিকম্প নিয়ে আসে । আমি এর আসল বৈগ্ঞানিক কারণ ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচণা করব না এখন ।  যারা আধ্যাত্মিক দিকটা দেখেন এবং মনে করেন মানুষের পাপের ফলস্রুতিই এ দুর্যোগ , তাঁদের প্রতি যথায়থ সন্মান প্রদর্শণ করেই দৃষ্টি আকর্ষণ্ করছি । পাপ যদি দায়ী ই হবে তা সে সমগ্র মানব জাতির পাপ । শুধু মাত্র নারীর  হ’তে যাবে কেন ?    ’যত দোষ নন্দ ঘোষ ‘ এ ই সংস্কৃতির  শুরু হয়েছিল আদম হাওয়া থেকে, হাওয়া গন্ধব ফল খেয়ে যে ভুল করলো বা যে সংস্কৃতির প্রচলণ করে গেল  এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে ও তা  বহমান ।

সেদিন টাইমসের একটি পুরাণো সংখ্যায় চোখ বুলাচ্ছিলাম । এই

বিশেষ সংখ্যাটি ১৯৭২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর উন্নতি অবনতি বা অবস্থান পরিবর্তনের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে ।যেমন ১৯৭২ সালে শতকরা ৩৬.২ ভাগ চাকুরী মেয়েদের দখলে ছিল ।২০০৯ সালে সে সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৪৯.৮ ভাগ । বলতে গেলে পুরুষের প্রায় সমান সমান । ১৯৭২ সনে   পুরুষের প্রতি ১ ডলার আয়ে নারীর আয় ছিল  ৫৮ সেন্ট তা এখন এসে দাঁড়িয়েছে ৭৭ সেন্টে যদিও পুরুষের চাইতে  অনেক পেছনে তবুও সামনে তো এগুচ্ছে !

যদিও কথাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত নারীদের নিয়ে বলা হয়েছে ,  কম বেশী সব দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ই এটা প্রযোজ্য।
অর্থনৈতিক উন্নতি নিয়ে যত কথা ই আমরা বলি পারিবারিক বা সামাজিক অবস্থান এর আদৌ কোন পরিবর্তণ্ হয়েছে কি ?সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা যখন আসে একজন বিবাহিত নারী
সংসারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা  কতভাগ রাখেন ? আমি প্রবাসী অনেক নারী কেই সারা সপ্তাহ কাজ করে এসে পে চেক বা বেতনের টাকাটা স্বামীর হাতে তুলে দিতে দেখেছি । গুরুত্বপূর্ণ্ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার কথা না হয় বাদ ই দিলাম , ভূমিকাই বা কতটা রাখতে পারে ? এবং এটা একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে । বিয়ের পর একটি মেয়ে ও আস্তে আস্তে ভুলে যায় এবং রবীন্দ্রনাথের সুরে সুর মিলিযে বিশ্বাস করতে শুরু করে –
    ‘আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি,-
  আমার যত বিত্ত, প্রভু , আমার যত বাণী ।।
 আমার চোখের চেয়ে দেখা , আমার কানের শোনা ,
 আমার হাতের নিপুণ সেবা , আমার আনাগোনা –
   সব দিতে হবে ।।
 —
সে তার সমস্ত ভালোবাসা দিয়েই হারিয়ে ফেলে নিজেকে ।তার সমস্ত দায় দায়িত্ব এখন অন্য একজনার । চিন্তা চেতনা সব । এটা ভেবেই সে বেশী আনন্দিত গ র্বিত এবং স্বার্থক্  মনে করে নিজেকে  । এমন ভাবে ই রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে এ বিশ্বাস ।

  মা কত যন্ত্রণা সহ্য করে পরিবারে একটি শিশু নিয়ে আসেন ।কোন কারণে সে শিশু যদি অসুস্থ বা বিকলাংগ হয় তার সমস্ত দোষ বা দায়ভার বহন করতে হয় মা কে । সুস্থ স্বাভাবিক শিশু হলেই বা কি ! লালন পালনের সব দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করলে ও স্বীকৃতি দেবার একজন ও খুঁজে পাওয়া যাবেনা ।কিন্তু চুন থেকে পান খসলেই , নেই রক্ষা !
ওই ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ ।’সন্তানের বাবা থেকে শুরু হয় মা কে দোষারোপ করা । পাড়া প্রতিবেশী সমাজ সংসার ছি ছি করতে থাকে বেচারী মা কে । ছেলেমেয়ে স্কুলে খারাপ করেছে ,দুষ্টুমি করেছে , ছেলে পাড়ার বখাটে দের সাথে মিশে গেছে ,ড্রাগ নিচ্ছে কিম্বা মেয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে , ‘ তোমার জন্যই এমন হ’লো ’।মা ও মাথা পেতে নেন । পুরুষ মানুষ ! নিজেকে হালকা করার জন্য বলেছে ভেবে সান্তনা ও দেন নিজেকে । আহা ! বাবা না !মনে কত কষ্ট পেয়েছে ! আর মা সে যেন কোন কষ্ট ই পায়নি ।মা কে যেন হতাশা নিবারণের জন্য কিছুই করতে হয়না ! সে তো মা ! সে কি মানুষ ! না সে মানুষ না । সে একজন মেযেমানুষ । আরো আরো বহু আগে থেকেই সে জেনে এসেছে সে কথা । তাই তো সে চিন্তা ও করতে পারে না অভিযোগ করার কথা , সে বাবা হিসাবে কি দায়িত্ব পালন করেছে !অর্থের যোগান দিলেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না ।

যে সমাজে বিয়ের প্রচলন থাকবে সে সমাজে ডিভোর্স্ ও থাকবে । বিযে যেমন একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যে হয় তেমন ডিভোর্স্ ও হয় দুজনার মাঝে । কিন্তু বিয়ে গায়ে হলুদের মত শুভ কাজে একজন ডিভোর্সী মেয়ে বড়ই অশুভ   ’সে অনেক অনেক দিন আগের কথা য়খন মানুষ কাঁচা মাংস খাইতো’…না তেমন কিছু না ।এ ই তো সেদিনের কথা – আমি আমার পরিচিত একজনার কথা জানি সে তার নিজের মামার বিয়েতে গায়ে হলুদের দিন কনে কে হলুদ দিতে গিয়েছে সবাই আঁতকে উঠেছে । পরে আকদ বা কলমা পড়ার দিন বাড়ীর সবাই  সেঁজে গুঁজে চলে গেল । মেয়েটিকে নিল না ।ওর যে বিয়ে ভেঙে গেছে ! ও গেলে নব দম্পতির অকল্যাণ হবে । কোন ছেলের ক্ষেত্রে কি এমন হয়েছে ?

কিম্বা বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কের শাস্তি স্বরুপ শুধু একজন নারীকে পাথর ছোঁড়া এখন ও কোন কোন সমাজে প্রচলিত আছে আর যেখানে নেই সেখানে ও সমাজের কুদৃষ্টি তির্য্ক বাক্যবাণ  আস্তঁকুড়ে ছুঁড়ে ফেলার মত হেয় প্রতিপন্ন করার প্রবণতা অভিযুক্তকে ঘর সঙসার তো ভালোই পৃথিবী পর্যন্ত ত্যাগ  করতে বাধ্য করে । । করতে হয় আত্মহত্যা ।কিন্তু অপর পক্ষ কেমন নির্বিকার ভাবে ঘুরে বেড়ায় । একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল । পুরুষ মানুষের আবার দোষ কিসের ? অবিবাহিত হলে তো সব দোষ সেই ব্যাভিচরিণীর । তার ছলা কলার আর যদি বিবাহিত হন তাহলে সাথে যোগ হন আর এক মহিলা । বিশিষ্ট ভদ্রলোকের স্ত্রী । নিশ্চয়ই কোথাও ভুল ছিল, অবহেলা ছিল , ঘাটতি ছিল ।

।কোথা ও কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে আমরা সবচেয়ে আগে জানতে চাই মেয়েটি কেমন পোষাক পড়েছিল ? বা মেয়েটির কি দোষ  ছিল?  ছোট ছোট মেয়েরা যাদের চোখে থাকবে স্বপ্ন হৃদয়ে থাকবে অন্গীকার সুন্দর জীবনের সোনালী ভবিষ্যতের । একের পর এক আত্ম হত্যা করে ই চলেছে । কারণ? বখাটেদের অত্যাচার । কি দু:খ জনক ।একটি বালক ও জানে তার গায়ে কোন কাঁদা লাগবে না । সে পুরুষ ! সমাজ ধিক্কার দিবে মেয়েটিকে । এত মেয়ে থাকতে সে কেন?যা ছেলেটির অত্যাচারের থেকে তা কোন অংশে ই কম নয় । বরং অনেকাংশে ই বেশী । সে নিজের পরিবারের মান সন্মানের কথা চিন্তা করে ই আত্মহননের পথ বেছে নেয় । নিজেকে নিজের জীবনকে এতই অর্থহীন মনে হয় ।কিন্তু যে প্রকৃত অপররাধী সে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখে । জাল বোনে । মাছ ধরে ।।

 এমন লিখতে থাকলে সারাদিন ই কাটিয়ে দিতে পারব ।অজস্র উদাহরণ রয়েছে । নারী কে ই দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং এটা একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে নারী ও কেমন অবলীলায় মেনে নেয় সবকিছু ।আমাদের   আর্থ্ সামাজিক অবস্থান ই এর জন্য দায়ী । দায়ী আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ । আর   নয় –.ঝিণুক নিরবে সহ, নিরবে সহ। ভিতরে বিঁষের বালি , মুখ বুঁজিয়া মুক্তা ফলাও’  ।  সময় এসেছে প্রকৃতির মত রূখে দাঁড়াবার । বিদ্রোহ করবার । জানিয়ে দেবার –অনেক হয়েছে !