গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস প্রসঙ্গে

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী বিতর্ক হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি শুধু কয়েকটি পয়েন্টের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করব। ১. ১৯৯৯ সালে ড. ইউনূস ৬০ বছর অতিক্রম করাতে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ তাঁকে (শুধু তাঁকে) যত দিন ইচ্ছে তত দিন এমডির দায়িত্ব পালন করার অনুরোধ করেছিল। এই অনুরোধের সঙ্গে বোর্ডের সরকার মনোনীত চেয়ারম্যান ও তিনজন পরিচালকও ছিলেন। তাঁরাও এই সিদ্ধান্তের অংশীদার। তারপর এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক কখনও আপত্তি করেনি। ২০১১ সালে এসে এক রহস্যময় কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এমডি পদে তাঁর অবস্থান অবৈধ বলে চিঠি দিয়েছে। এত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক এই আপত্তি তোলেনি কেন তার ব্যাখ্যা জানা দরকার। সংশ্লিষ্ট অফিসারদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য দাপ্তরিক শাস্তি হওয়া দরকার। সবচেয়ে বেশি দরকার এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা। কেন তারা একজন ‘অবৈধ এমডির’ সঙ্গে প্রায় ১০ বছর কাজ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ব্যর্থতার কথা ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার কথা ড. ইউনূসের সমালোচনায় মুখর এক শ্রেণীর মিডিয়ার কেউ তুলছে না কেন? এমনকি এ ব্যাপারে আদালতে যে শুনানি হয়েছে সেখানেও বিষয়টি তেমন কোনো গুরুত্ব পায়নি। ড. ইউনূসের আইনজীবী বিষয়টি একবার তুললে বিজ্ঞ বিচারক বলেন : ‘চুরি করার সময় চোর ধরা সম্ভব হয়নি বলে পরে কি চোর ধরা অন্যায় হবে?’ এতে মামলাটি সম্পর্কে বিচারকের দৃষ্টিভঙ্গি গোপন থাকেনি। কিন্তু বিজ্ঞ বিচারকও তাঁর পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব পালনে অবহেলা সম্পর্কে কিছু বলেননি।

এর একটা কারণ রয়েছে বলে আমার মনে হয়। তা হলো : বিজ্ঞ আদালত ও সমালোচক মিডিয়া জানে, বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ বছর কোনো অন্যায় করেনি। কারণ নিয়ম অনুযায়ী বিধি মেনেই বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড. ইউনূস এতদিন এমডি ছিলেন।

২. এক শ্রেণীর সমালোচক মিডিয়ায় বারবার বলছেন : ‘ড. ইউনূস এত সম্মানিত লোক, নোবেল বিজয়ী, তিনি সামান্য একটি এমডির চাকরিতে থাকার জন্য এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? অনেক আগেই তাঁর এই পদ ছেড়ে দেয়া উচিত ছিল?’

গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে যাঁদের কোনো ধারণা নেই তাঁরা এরকম বোকার মতো কথা বলতে পারেন। তাঁদের যে ধারণা নেই এ কথাও তাঁরা স্বীকার করেন না। গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কোনো ব্যাংক নয়। এটা খুবই ব্যতিক্রর্মী ও অনন্য একটি ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আগে এরকম কোনো ব্যাংকের মডেল পৃথিবীতে ছিল না। পাঠক জানেন, এটা ড. ইউনূসের এক অসাধারণ সৃষ্টি। বাংলাদেশ সরকারকে (এরশাদ আমল) ১৯৮৬ সালে তিনি এই ব্যাংকের আইডিয়াতে রাজি করিয়েছিলেন। সরকার তখন সম্পূর্ণ তাঁর আইডিয়া ও চিন্তাধারার আলোকে বিশেষ একটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। বর্ষ পরিক্রমায় সরকার তার শেয়ার কমিয়ে আনে। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের শেয়ার ২৫ ভাগের মতো। ৭৫ ভাগ শেয়ারই এর সদস্যদের। এরপরও সমালোচকরা বলছেন, ‘এটা সরকারি ব্যাংক’। ৭৫ ভাগ যারা মালিক, তারা নয়। ২৫ ভাগ শেয়ারের মালিক হয়ে সরকার গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর পদ ড. ইউনূসের কাছে নিছক একটি চাকরি নয়। এমডির বেতনও এমন কোনো লোভনীয় কিছু নয়। কাজেই এমডির পদে থাকা না থাকাটা এখানে কোনো প্রশ্ন নয়। এটা তাঁর সৃষ্টি। যেমন-তেমন সৃষ্টি নয়। পৃথিবীর ১০০টিরও বেশি দেশে এই মডেল অনুকরণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। গরিব মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যাংকটির অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। তদুপরি গ্রামীণ ব্যাংকের রয়েছে প্রায় ১ কোটি সদস্য। যাদের প্রায় ৯৫ ভাগই গ্রামের গরিব মহিলা। ১ কোটি সদস্যের সঙ্গে ৪ জনের পরিবার ধরলেও ৪ কোটি গরিব মানুষের ভাগ্য গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে জড়িত। ৩০ বছর ধরে নিজের হাতে গড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কাকে ও কীভাবে তিনি দিয়ে যাবেন তা নিয়ে সরকার ও সমালোচকদের কোনো মাথাব্যথা না থাকতে পারে, কিন্তু ড. ইউনূসকে এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিতেই হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব হস্তান্তর তাঁর কাছে অনেক বড় একটি ইস্যু। আবার বলছি, এটা জনতা বা সোনালী ব্যাংকের এমডি নিয়োগের মতো ছোট কোনো বিষয় নয়। এসব ব্যাংকে কে এম ডি হলেন তা নিয়ে ব্যাংকেরই কারো মাথাব্যথা হয় না। গ্রাহকদের কথা দূরে থাক।

অনেক সমালোচক বলেছেন, ‘ড. ইউনূস এমডি পদটা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছেন।’ এই সমালোচকরা কিন্তু বহুল প্রচারিত অর্থমন্ত্রী জনাব মুহিতকে লেখা ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত চিঠিটার কোনো রেফারেন্স দেন না। চিঠিটার বিবরণ প্রায় সব সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। সমালোচকরা তা পড়েননি, তা মেনে নেয়া যায় না। তাহলে সমালোচকরা সেই চিঠির কোনো রেফারেন্স দেন না কেন? ২০১০ সালের ১৫ মার্চে লেখা চিঠিতে তিনি অর্থমন্ত্রী জনাব মুহিতকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাঁর সরে যাওয়া ও নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ সম্পর্কে কিছু অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যেসব প্রস্তাব নিয়ে জনাব মুহিত ড. ইউনূসের সঙ্গে কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেননি। এই প্রশ্নটি কেউ তুলছেন না কেন? ২০১০ সালের ১৫ মার্চ ড. ইউনূস তাঁর অবসর গ্রহণের একটা পরিকল্পনা জনাব মুহিতকে দিয়েছিলেন। চিঠিটি সংবাদপত্রে প্রকাশের পর জনাব মুহিত তা অস্বীকার করেননি। এই চিঠির বয়ান থেকে কি এরকম প্রমাণ পাওয়া যায় ড. ইউনূস এমডির পদ চিরকালের জন্য ধরে রাখতে চেয়েছিলেন? সমালোচকরা কী বলেন? আপনারা টিভিতে বা সংবাদপত্রের কলামে এই চিঠির কোনো রেফারেন্স দেননা কেন তার জবাব কী দেবেন? কয়েকটি সংবাদপত্র তো এই চিঠি প্রকাশই করেনি। এটা কি সাংবাদিকতা? এই চিঠির সূত্র ধরে ২০১০ সালের মার্চ মাসে অর্থমন্ত্রী যদি ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতেন, তাহলে কি আজকের এই পরিস্থিতির জন্ম হতো?

আদালতে যখন এই বিষয়ে শুনানি চলছিল তখন ড. ইউনূসের আইনজীবী সঙ্গত কারণেই এই চিঠির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। দুঃখের বিষয় আদালত তা আমলে নেননি। বরং একজন বিজ্ঞ বিচারক বলেছেন : ‘এটা দুই ভাইয়ের (মুহিত ভাই ও ইউনূস) মধ্যে চিঠি চালাচালি। এটা আদালতের বিষয় নয়।’ কেন বিষয় নয়? এই চিঠির মধ্যে তো গোমর ফাঁক করে দেয়া হয়েছে। ড. ইউনূস ২০১০ সালের ১৫ মার্চ তারিখের এই চিঠিতে (অনানুষ্ঠানিক) দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়ার একটি প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন। আদালত এই চিঠিকে কেন যথাযথ গুরুত্ব দেননি তা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ আছে। আদালতের শুনানিতে রিটের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক এক টুকরো কাগজও অনেক মূল্যবান উপাদান হতে পারে। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞ বিচারকরা এই মহামূল্যবান চিঠিকে ‘দুই ভাইয়ের চিঠি’ বলে পরিহাস করেছেন। কেন করেছেন তা নিয়ে ভাবা দরকার। আমার ধারণা, এই চিঠির মধ্যেই শুনানির ইতিবাচক রায় নিহিত ছিল। এটা অনুধাবন করেই আদালত এই চিঠিকে আমলে আনতে চাননি। পাঠক যদি চিঠিটা আবার পড়েন তাহলে আমার কথাটি নতুন করে অনুভব করবেন।

৪. অনেক সমালোচক এবং দু-একজন মন্ত্রীও বলেছেন, ‘ড. ইউনূস আদালতে গিয়ে নিজের সম্মান নিজেই নষ্ট করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিলেও সরকার সম্মানজনকভাবে এই সমস্যার সমাধানে আগ্রহী ছিল।’

এটাও এক ধরনের অসত্য ভাষণ। কারণ সরকার যদি এই সমস্যার সম্মানজনক সমাধান চাইতো তাহলে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ এই চিঠি দিত না। যে প্রতিষ্ঠান ১০ বছর এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি তোলেনি তারা আরও এক মাস অপেক্ষা করতে পারত। ড. ইউনূস ‘অবৈধভাবে’ আরও এক মাস এমডি থাকলে সরকারের পতন হতো না। বা বড় কোনো অঘটন হতো না। কাজেই এটা প্রায় নিশ্চিত যে, সরকার ড. ইউনূসকে অপমান ও অপদস্থ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এটা যদি ‘শোকজ’ চিঠি হতো তাহলে সমালোচকদের এই যুক্তি মানা যেত। কিন্তু এটা কোনো ‘শোকজ’ চিঠি ছিল না। এটা চূড়ান্ত ‘অব্যাহতি পত্র’ ছিল। শোকজ না করে ম্যানেজিং ডিরেক্টর পর্যায়ে একজন ব্যক্তিকে (শুধু ব্যক্তিকে) অব্যাহতি দেয়া আইনসঙ্গত কি না তা আইনবিদরা বলতে পারবেন। তবে এটা বাস্তব সত্য যে, ড. ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো শোকজ চিঠি দেয়নি। ড. আতিউরকে একদিন এর জবাব দিতে হবে। ‘আমার কোনো উপায় ছিল না’—এসব বলে ড. আতিউর পার পাবেন না। তাঁকে একদিন গবেষক বা বুদ্ধিজীবীর কাতারে আবার আসতে হবে।

আমি মনে করি, অব্যাহতির চিঠি পাওয়ার পর ড. ইউনূসের পক্ষে আদালতে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। একজন নাগরিকের এটাই তো শেষ আশ্রয়। আদালত ছাড়া আর কার কাছে বিচার চাইবে? যদিও অনেকে মনে করেন, বর্তমান সরকারের আমলে আদালত উত্কটভাবে রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত। আদালতে সব সময় সুবিচার পাওয়া যায় না। এটা অনেকের ধারণা হলেও এখনও বাংলাদেশের মানুষ আদালতের ওপরই নির্ভরশীল। কারণ অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়ার আর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান দেশে নেই। কাজেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে বলেই ড. ইউনূস আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এটা তিনি অত্যন্ত সঠিক কাজ করেছেন। তিনি যদি আদালতে না যেতেন তাহলে এই সমালোচকরাই বলতেন : “সরকার তাঁর প্রতি অন্যায় করে থাকলে তিনি আদালতে যাচ্ছেন না কেন? তিনি এই আদেশ নীরবে মেনে নিলেন কেন? নিশ্চয় তিনি তাঁর ‘অন্যায়’ বুঝতে পেরেছেন।” সমালোচকরা খুব সুবিধাবাদী হয়। তারা তাদের সপক্ষে যখন যা দরকার তা বলতে পারেন। কারণ কারো কাছে তাদের কথার জন্য জবাবদিহি করতে হয় না। এমনকি তারা ভুল তথ্য ব্যবহার করে কারো সমালোচনা করলেও তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না বা তাদের শাস্তিও হয় না। বরং অনেকে তাদের বাহবা দেন। তথ্যটি যে ভুল ছিল তা কেউ মনে করিয়ে দেয় না। এভাবেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা চলছে।

৫. অনেক সমালোচক বলেছেন : ‘ড. ইউনূস কি আইনের ঊর্ধ্বে’? না, একথা ড. ইউনূস বা গ্রামীণ ব্যাংক কেউ দাবি করেনি। তবু সমালোচকরা তা বলছেন কেন? বলছেন, ৬০ বছরের পরও তিনি এমডির পদ ছাড়ছেন না কেন? সবার জন্য ৬০ বছর, ওনার জন্য তা হবে না কেন?’ সুন্দর যুক্তি। কিন্তু এ কথা বলার আগে বুঝতে হবে, গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি ‘জনতা ব্যাংক’ নয়। এটার সরকারি শেয়ার ২৫ ভাগ মাত্র। এটার বোর্ড অনেক স্বাধীন। যদিও তিনজন সরকার মনোনীত পরিচালক এই বোর্ডে রয়েছেন। ৬০ বছরের পর তাঁর এমডি থাকা না থাকা সবই বোর্ডের সিদ্ধান্ত। কাজেই এ জন্য ড. ইউনূস একা দায়ী হতে পারেন না। সরকার তাদের মনোনীত চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছে না কেন?

বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যায়ভাবে ড. ইউনূসকে ‘অব্যাহতিপত্র’ দিয়েছে বলে ড. ইউনূস আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি যদি নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করতেন তাহলে কি আদালতে এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করতেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরওয়ের ফান্ড নিয়ে উদ্ভূত বিতর্ক তদন্ত করার নির্দেশ দিলে ড. ইউনূস বিদেশ থেকে বিবৃতি দিয়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এটা কি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নয়? ড. ইউনূস এ যাবত্ যত প্রতিষ্ঠান (ফাউন্ডেশন) করেছেন, সবই সরকারি নিয়মকানুন মেনেই করেছেন। নিয়ম না মানলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা তাকে কোম্পানি করার অনুমতি দিত কি? তিনি তো কখনও সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। সরকারি পোঁ ধরা ব্যক্তিদের আইন না মানলেও চলে। যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বা টেন্ডার হাইজ্যাকাররা তাই আইনের তোয়াক্কা করে না। ড. ইউনূসের তো এরকম ‘ফ্রিস্টাইল’ চলার সুযোগ কোনো কালে ছিল না। কাজেই তিনি বরাবর সরকারি নিয়মনীতি ও আইন মেনেই সব কাজ করেছেন। ৬. এক শ্রেণীর মিডিয়া ও সমালোচক নরওয়ে সরকারের ‘অল ক্লিয়ার’ বিবৃতির পরও এ নিয়ে এখনও অভিযোগ করে যাচ্ছেন। তারা এ প্রসঙ্গে অনেক কথা বলেন, কিন্তু একবারও বলেন না নরওয়ে সরকার বিবৃতি দিয়ে বলেছে : ‘তাদের কোনো অভিযোগ নেই। ১০ বছর আগেই তা মিটমাট হয়ে গেছে।’ এই বিবৃতির কথা স্বীকার করতে সমালোচকরা লজ্জা পান কেন? লজ্জা পান এ জন্য যে, এরপর তাদের আর অভিযোগ টেকে না।

এভাবে প্রতিদিন টিভিতে ও সংবাদপত্রে এক শ্রেণীর দলীয় সমালোচক সচেতনভাবে ভুল তথ্য ও অর্ধ সত্য দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস সম্পর্কে বিষোদগার করে যাচ্ছেন। এই নিবন্ধে তাদের কয়েকটি সমালোচনার জবাব দেয়া হলো। আশা করি, সমালোচকরা তাদের ভুল বুঝতে পারবেন এবং এসব ভুল তথ্যের আর পুনরাবৃত্তি করবেন না।