লাইমলাইটে বিএনপির সংষ্কারবাদীরা

২০০৭ সালের এক এগারোর পরে সংষ্কারবাদী হিসেবে যে নেতারা দলে ছিলেন কোনঠাসা ও অবহেলিত তাদের পালে আবারও হাওয়া লেগেছে। অনেকটা আকস্মিকভাবেই তাদের পালে হাওয়া লেগেছে বলে মনে করেন দলের মূলধারার নেতারা। বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুই সংষ্কারবাদীদের পালে হাওয়া লাগার মূল কারণ বলে মনে করেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানান, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পরে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর মহাসচিবের দায়িত্ব গঠনতান্ত্রিকভাবেই এসে পরে। কিন্তু বিএনপির এক শ্রেনীর সিনিয়র নেতা তাকে বিতর্কিত করার জন্য তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব না দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাসচিব এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমনকি দলের গঠনতন্ত্রে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কোনো পদ নেই বলে তাকে অপমান অপদস্ত করার চেষ্টা চালান।
এ প্রেক্ষিতে সংষ্কারবাদী হিসেবে পরিচিত নেতারা তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন এবং মূল ধারার একটি অংশ তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ফখরুলকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে সম্মোধন করতে শুরু করেন। এ নিয়ে বিএনপির এক যৌথসভায় বাকবিতণ্ডা হয় উভয় গ্র“পের মধ্যে। এক পর্যায়ে মির্জা ফখরুল অস্বস্তি প্রকাশ করলে সেদিনের মতো বিতর্কের অবসান ঘটে। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রতিটি প্রেস রিলিজে তাকে মহাসচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব লেখা হয়। এ নিয়েও দলের মধ্যে চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। প্রকাশ্যে না হলেও তলে তলে এ লড়াই বেশ জমে ওঠেছে।

নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ঐক্যও বিশ্বাস স্থাপনের চেষ্টায় মির্জা ফখরুলের মতো নেতাকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো কিন্তু মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারের একগুয়েমির কারণে ফখরুল ঐক্য প্রচেষ্টায় সফল হননি বলে মনে করেন এক শ্রেনীর নেতাকর্মীরা। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে। সংষ্কারবাদীদের বিরোধীতার পথ থেকেও আস্তে আস্তে সরে আসছে দলটি। কেন্দ্রীয় এ মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তুণমূলেও। সংষ্কারবাদীদের কোনো পরিস্থিতিতে দলে জায়গা দেয়া হবেনা। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে নাজেহাল করা হবে। এমন ঘোষণা থেকেও সরে আসছে দলটির নেতাকর্মীরা। বরং কোনো কোনো স্থানে সংষ্কারবাদীদের দলে ফিরিয়ে এনে দায়িত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে তৃনমূলের নেতারা।

দলে নিজেদের অর্ন্তদ্বন্দ ভুলে এখন সরকারের দেশ বিরোধী ও জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাতেই আন্দোলন গড়ে তোলা হচ্ছে বলে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার দেশকে এমন একপর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, আন্দোলন ছাড়া আর বিকল্প কিছু নেই। তাদের অভিযোগ, সরকার দেশের স্বার্থ বিকিয়ে ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্টের নামে ভারতকে করিডোর দিচ্ছে। দলকে সরকার কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। সারাদেশকে সরকার কারাগারে পরিণত করছে। হামলা এবং মামলাই এখন সরকারের একমাত্র কাজ। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং পানি, বিদ্যুত, গ্যাস সঙ্কটে মানুষ দিশেহারা। এ অবস্থায় চুপ করে বসে থাকা যায় না। দলে নিজেদের মধ্যে মারামারি করার সময় পরেও পাওয়া যাবে এমনভাবে বোঝানো হচ্ছে নেতাকর্মীদের।  এ সুযোগে দলে দিনদিন অবস্থা পাকাপোক্ত করছে সংষ্কারবাদী নেতারা।

জানা গেছে, খুব শীঘ্রই সংষ্কারবাদী নেতার তকমা লাগানো সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক করেই ঘোষণা করা হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি। সে কমিটিতে আরো অনেক সংষ্কারবাদী নেতাকে দেখা যেতে পারে।

শোনা যাচ্ছে, বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে কিংবা বিএনপি থেকে বেড়িয়ে গিয়ে নতুন দল করেছেন এমন অনেক নেতাকে দলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সে তালিকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্ণেল অলি আহমেদসহ বহিষ্কত আশরাফ হোসেন, বাদপড়া সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলসহ অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ভোরের কাগজকে বলেন, সংষ্কারবাদীরাতো লাইম লাইটে আছেন। কে নাই লাইম লাইটে। একমাত্র মান্নান ভুইয়া ছাড়া অন্যরাতো আছেন। বি চৌধুরী ও অলি আহমেদদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো কথা শোনেননি বলে জানান তিনি।