কঠোর আন্দোলন গড়তে চায় বিএনপি

মূল্যে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। বিএনপির হাইকমান্ড থেকে আন্দোলন গড়ে তুলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে দলের নীতিনির্ধারকদের। আন্দোলন গড়ে তুলতে দলে কি কি সমস্যা রয়েছে তা চিন্থিত করে দ্রুত তা সমাধানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দলের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সমস্যাগুলো চিন্থিত করে তা সমাধানের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ হাইকমাণ্ডের কাছে জমা দিয়েছেন। শ্রীঘ্রই সমস্যার সমাধান করে দাবি আদায়ে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে নামছে দলটি।

দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলন সংগ্রামে দলকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সমস্যাকে তারা চিন্থিত করেছেন। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটিকে পুরোপুরি চাঙা করা, ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে ছাত্রদলকে তার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বন্ধাত্ব কাটানো, বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দল মেটানো, সংস্কারবাদী ইস্যুতে দলের অবস্থান পরিষ্কার করা, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সব নেতাকে সক্রিয় করা। তৃণমুলে দলের গ্রুপিং দুর করা।

উল্লেখিত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি আরো কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো, ইতিমধ্যে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে,  দল থেকে বেড়িয়ে গেছেন কিংবা দলের গত কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, বর্তমান কমিটিতে নেই, কিংবা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন,  এমপি বা মন্ত্রী ছিলেন এমন নেতাদের ফিরিয়ে এনে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দলের কাজে লাগানো।

জানা গেছে, সমস্যাগুলো  চিন্থিত হওয়ায় এবং তা সমাধানের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দলের মধ্য থেকে পাওয়ায় খুব শীঘ্রই তা সমাধানের ব্যবস্থা নিচ্ছেন হাইকমাণ্ড। এ লক্ষে আগামী ২৩ এপ্রিল দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। নির্বাহী কমিটির বৈঠকের পরে আবারো জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হবে।  সে বৈঠক থেকেই সমস্যা সমাধানের ঘোষণা আসতে পারে।

জানা গেছে, চলতি মাসেই মহানগরী কমিটি ঘোষণাসহ বিবদমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এরপরেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সরকারের পদত্যাগের লক্ষ্যে সরকার বিরোধী কঠোর আন্দোলনে নামবে দলটি।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ও সরকারের পদত্যাগের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করা প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৭ এপ্রিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, সংবিধান সংশোধনের নামে সরকার একদলীয় কমিটি করেছে। এই কমিটি নানারকম স্বেচ্ছাচারিতা করেই যাচ্ছে। তারা বলছে, সংবিধানের নতুন একটি খসড়া নাকি তারা বানিয়েছে। আমি জানতে চাই, খসড়া সংবিধান  কেন? তাহলে কি মূল সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে। কোন সংবিধানে দেশ চলছে ?

খালেদা জিয়া বলেন, খসড়া কোনো সংবিধানে দেশ চলতে পারেনা। সংবিধানের মৌলিক কোনো পরিবর্তন ঘটাতে হলে তার জন্য জনগণের সম্মতি নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সরকার, পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ কিংবা কোনো কমিটির ওপর সে ক্ষমতা দেয়া হলে সেটা আমরা মেনে নিতে পারিনা।

তিনি বলেন, দেশে যে সাংবিধানিক সংকট ও শুণ্যতা সৃষ্টি করা হয়েছে এসব কারণে সৃষ্টি হয়েছে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্যই আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলেছি। এ দাবি আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের আদায় করে নিতে হবে। সে লক্ষে আগামী ৯ মে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগ এবং জেলা শহরে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সমস্যা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী, বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলাÑমামলার বিষয়টি ইস্যু হিসেবে ইতিমধ্যেই সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব দাবিতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি দেয়ার ব্যাপারে বিএনপি দল, জোট ও সমমনা দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণকে এ দাবির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে নানা প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান, বিভিন্ন কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনিবার্য হয়ে গেছে। আমি মনে করি বিএনপিতে ছোটো খাটো যে সমস্যা ছিলো তার সমাধান হয়ে গেছে। বিএনপি বর্তমানে যথেষ্ট গোছনো এবং প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করেছে। আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত হলেই লাগাতার কর্মসূচি আসতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গত বুধবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির ধারবাহিকতায় লাগাতার কর্মসূচি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার সংবিধান সংশোধনের নামে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে বিরোধী দল দমনে নেমেছে। সারা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এ ধরণের নৈরাজ্য সৃষ্টির পথ পরিহার না করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।