ঢাকার সংসদীয় আসন কমানোর উদ্যোগ ইসির

বেঁধে ফেলতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মফস্বল আর শহর এলাকার সংসদীয় আসনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এক্ষেত্রে ঢাকা জেলায় সংসদীয় আসন সংখ্যাও ১৫টির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা করছে কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, এ লক্ষে সীমানা পুনর্র্নিধারণ অধ্যাদেশের আলোকে বিধিমালার একটি খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

ইসি বলছে, গ্রামের মানুষ যে হারে ঢাকামুখী হচ্ছে, তার সঙ্গে মিল রেখে আসন নির্ধারণ করতে গেলে দশম সংসদ নির্বাচনে ডিসিসিতেই আসন সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ২০টি। আর ঢাকা জেলার আসন সংখ্যা হতে পারে ২৫টির বেশি। কিন্তু তা করতে গেলে গ্রাম ও মফস্বল অঞ্চলের সঙ্গে বিভাগীয় শহরগুলোর সংসদীয় আসন সংখ্যার ভারসাম্য থাকবে না।

সাখাওয়াত আরো বলেন, বিদ্যমান আইন অনুসরণ করে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করতে গিয়ে ঢাকা জেলার আসন সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে, বরগুণার মতো জেলা শহর থেকে একটি করে আসন কমে গেছে। যা গ্রামীণ উন্নয়নের পরিপন্থী।

ইসি মনে করছে, এ সংক্রান্ত আইন দীর্ঘ দিন ধরে সংশোধন না হওয়ার কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর এ চিন্তা থেকেই গত বছর বিদ্যমান অধ্যাদেশটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় ইসি।

সীমানা পুনর্র্নিধারণ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এ বলা হয়েছে, সর্বশেষ আদমশুমারীর ভিত্তিতে উপজেলা সদরকে প্রশাসনিক একক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে জনসংখ্যা মোটামুটি সমান রেখে জাতীয় সংসদের আসনগুলোর সীমানা পুনর্র্নিধারণ করতে হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সীমানা পুনর্র্নিধারণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সর্বশেষ আদমশুমারী মেনে জনসংখ্যা অনুপাতে নবম সংসদ নির্বাচনেই ঢাকা  জেলায় আসন হয়েছে ২০টি। এর মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে পড়েছে ১৩টি আসন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ডিসিসিতে আসন ছিল ৮টি এবং ঢাকা জেলায় তা ছিল ১৩টি।

২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী (২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়) দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন। সে অনুযায়ী প্রতিটি আসনে গড় লোকসংখ্যা হয় সোয়া চার লাখের মতো। সীমানা পুনর্র্নিধারণের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ পযন্ত হেরফের গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করে ইসি।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঢাকায় জনসংখ্যা এখন দুই কোটির কাছাকাছি। এ হিসাবে আসন নির্ধারণ করতে গেলে দশম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা জেলার আসন দাঁড়াবে ২৫টি।

ইসি সাখাওয়াত বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সীমানা পুননির্ধারণ বিষয়ে একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছি। এতে ডিসিসির আসন সংখ্যা ১০টিতে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। আর ঢাকা জেলায় ডিসিসির বাইরে পাঁচটির বেশি আসন থাকবে না।

অবশ্য অন্য বিভাগীয় শহরগুলোয় আসন সংখ্যা এভাবে সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ইসির আইন শাখার কর্মকর্তারা। পার্বত্য জেলার আসন সংখ্যাও আগের মতোই থাকছে। ঢাকার আসন কমানের পর দেশের অন্য এলাকাগুলোতে জনসংখ্যা অনুপাতে বণ্টনের মাধ্যমে পুরো দেশকে মোট ৩০০ আসনে বিন্যস্ত করার কথা ভাবছে ইসি।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপের সময় অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়েও আলোচনা হবে।

১৯৭৬ সালে প্রণীত সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ অধ্যাদেশটি সংশোধন ও নতুন বিধিমালা করা হলেও আসন সংখ্যা তিনশই থাকবে বলে জানান তিনি।

প্রতি ১০ বছর পর পর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আদমশুমারি প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও নির্বাচন কমিশন কখনোই নিয়মিতভাবে সীমানা পুননির্ধারণের কাজটি করেনি। ১৯৮৪ সালের পর ২০০৭ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রথমবারের মতো আসন পুনর্বিন্যাসের কাজে হাত দেয়। এর আগে ১৯৯১ ও ১৯৯৫ সালে আংশিকভাবে এ কাজ করা হয়। প্রতিবারই সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কমিশনকে শত শত মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ৩০০ আসনের জেলাওয়ারি বণ্টন প্রকাশ করে ইসি। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর সারাদেশে তিনশ আসনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৭ জেলায় ৯৪টি, রাজশাহীর ১৬ জেলায় ৭২টি, চট্টগ্রামের ১১ জেলায় ৫৮টি, খুলনার ১০ জেলায় ৩৬টি, বরিশালের ৬  জেলায় ২১টি এবং সিলেটের ৪ জেলার আসন সংখ্যা ১৯টিতে দাঁড়ায়।

এ বছর মার্চে পঞ্চম আদম শুমারি শুরু হয়। দেড় বছর পরে এ আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ হবে। আইন অনুযায়ী, সর্বশেষ আদমশুমারি অনুসরণ করেই নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। ফলে পঞ্চম আদমশুমারি অনুযায়ী আসন পুনর্বিন্যাস করতে হবে ২০১৪ সালে।