শাবি স্পীকারস ক্লাবের পিকনিকের একদিন

আর এলাম তো কয়েক মাস আগে। নতুন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে এসে ভালোই লেগেছে। কথাগুলো বলছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পীকারস ক্লাবের নবীন সদস্য, ইংরেজি বিভাগের ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টারের ছাত্রী মৌসুমী। সিলেট বিভাগের দুটি ঐতিহ্যবাহী স্থান মৌলভীবাজার জেলার মাধুবকুণ্ড জলপ্রপাত ও হাকালুকি হাওর। পিকনিকের যাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে ৯ এপ্রিল সকালে ক্যাম্পাসের গোল চত্বর থেকে যাত্রা। শহরের নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থান থেকে ক্লাবের সদস্যরা উঠলো। একে একে করে গাড়ি পূর্ণ হলো। গাড়ির গতি যতই বাড়ছে ততই আনন্দ আর উল্লাসের মাত্রা বেড়ে গেল। তারুণ্যের বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের এতোটুকু কমতি ছিল না। স্পীকারস ক্লাবের সাবেক সফল সভাপতি মামুন ভাইকে পেয়ে খুশি সবাই। সাথে ছিল আরেক সভাপতি হোসাইন। যাত্রা পথে সকালের নাস্তা বিতরণ করা হলো। গানের আয়োজনও চলতে থাকল। এগারটার দিকে গাড়ি পৌঁছল দেশের একমাত্র জলপ্রপাত মাধবকুণ্ডে।

প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য আর নয়নাভিরাম দৃশ্য সম্বলিত এ কুণ্ডের খ্যাতি রয়েছে অনেক। প্রধান ফটক থেকে দুকিলোমিটারের মতো পথ পায়ে হেঁটে ঝরণা স্থলে আসা। বর্ষাকালেই ঝরণার স্রোত বেশি থাকে বলে জানান স্থানীয়রা। চৈত্রের প্রখর রোদে ক্লান্ত সবাই। তবুও স্থানগুলো ঘুরে দেখার আগ্রহ কমেনি। ফটো সেশনেও দাঁড়ালো কেউ কেউ। পূর্ব থেকে নিষেধ থাকায় পানিতে নামা হয়নি। কর্তৃপক্ষ প্রবেশের সময় বলে দিয়েছে কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। কারণ প্রতিবছরই এখানে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অনেকে। তাই সতর্কবাণী টানানো থাকা সত্ত্বেও মৌখিকভাবে জানালো সবাইকে। জলপ্রপাত থেকে বের হয়ে দুপুরের খাবার। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর পরিবেশন করা হলো খাবার। শওকত, আহসান রানা ভাই, জুলহাসুর রহমান জয়, কামরুলসহ অনেকেই খাবার পরিবেশনে সহযোগিতা করে। সিলেট থেকেই রান্না করে খাবার নিয়ে আসায় ঝামেলা হয়নি। বনভোজনের স্বাদের জন্য নিজেরা আগুন জ্বালিয়ে খাবার গরম করে নিল। বনভোজনের তৃপি, আনন্দের পূর্ণতা পেল সবাই। মেয়েরাও সহযোগিতা করল সালাত তৈরি করে।

চৈত্রের প্রখর সূর্যটা ছুটছে পশ্চিমাকাশের দিকে। পাথারিয়া নামক স্থানে সবুজ চা বাগানের ভেতর শুরু হয় ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে কালচারাল প্রোগ্রাম। রতনের উপস্থাপনায় শুরুতে ফারজানা ও রাসেল দ্বৈত গান গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে। ফান বক্স আইটেমে মামুন ভাই পায় নির্বাচনী প্রচারণার বক্তৃতার অভিনয়। বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক মজুমদার পেলেন ডেটিং ডায়লগ। কী অভিনয় করবেন, খুঁজে পাচ্ছেন না কোন সংলাপ। অবশেষে অন্য একজনকে নিয়ে অভিনয় করলেন। দর্শকদের করতালিতে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো। উর্মি আপু চাপাবাজির দারুণ অভিনয় করেন। ছিল কুইজ, বিতর্কও। সব শেষ করে যখন হাকালুকি হাওরে রওয়ানা তখন সূর্য মামা বিদায় জানানোর অপেক্ষাই করছিল। হাকালুকিতে যাওয়া আর না যাওয়া নিয়ে গণভোটের আয়োজন করলেন ক্লাবের সিনিয়র ভাইয়েরা। যাওয়ার পক্ষে অধিকাংশরা রায় দেয়ায় ড্রাইভার মামাকে ছুটতে হলো হাকালুকির পথে। ঠিক একঘণ্টা পর গাড়ি যখন বিস্তৃত মাঠের কোণে পাকিং করে তখন কারোই বুঝতে কষ্ট হয়নি পৌঁছে গেছি হাকালুকি হাওরে। চারদিকে যেখানে পানি থাকার কথা সেখানে কিনা এখন সবুজ শস্য। বিশাল সবুজ প্রান্তর দেখে কার না ভালো লেগে পারে। বিস্তৃত সবুজের সাথে নিজের দেহকেও মিশিয়ে জানান দিলে মা আর মাতৃভৃমির টানের কথা। কিন্তু সবার মন খারাপ হলো এই জন্যে যে, হাকালুকি হাওরে যখন নামা হয় ততক্ষণে সূর্যটা সবাইকে গুড বাই জানিয়ে অস্ত গেছে। কী আর করার! বিষণœ মনকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যই বিস্তৃত হাওরের বুকে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ানো। চারপাশের সবুজ ধান ক্ষেত। কোথাও কোথাও পাকা ফসলের দৃশ্য। চোখ জুড়ানো এ প্রান্তরে কেন আর একটু আগে এলাম না? এমন প্রশ্ন শুনতে হয়েছে ক্লাবের সভাপতি ও সধারণ সম্পাদককে। তারপরও সবাই খুশি এরকম একটি স্থানে আসতে পেরে।

দূর প্রান্তে দেখা যায় হাওরের পানি। সেখানে যাওয়ার আগেই গাড়িতে উঠতে হলো। আমাদের কোরাস গানে কখনো বাসের রেকর্ড গান শুনতে শুনতে ফিরতে হলো সিলেটের দিকে। সিলেট যখন পৌঁছে তখন ঘড়ির কাটা দশটার দিকে এগুচ্ছে। পিকনিকের ফেরার পথে ছিল র‌্যাফেল ড্র। সবার অনুভূতিও জানালো একে অপরের কাছে। ক্লাবের সভাপতি ওমর ফারুক মজুমদার জানান, এরকম একটি পিকনিক সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে। সবার সহযোগিতা পেয়েছি বলেই হয়তো এমন সম্ভব হয়েছে। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়ছল আহমদ চৌধুরী বলেন, ক্লাবের নবীন সদস্যদের নিয়ে এবছর এই প্রথম কোন বড় আয়োজন ছিল। সব দিক মিলিয়ে অনেক ভালো লেগেছে। ক্লাবটি আরোএগিয়ে যাবে উপকৃত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী এমনটি প্রত্যাশা ক্লাবের নতুন পুরাতন সব সদস্যদের।