বরিশালে হাঁসের খামারে ভাগ্য বদলিয়েছে রাজ্জাক

সম্মিলন ঘটিয়ে ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব- এটা প্রমাণ করেছেন বরিশালের আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার।

বরিশালের বাখেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের দঃ নারায়নগুল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার (৪২)। সিডর ও আয়লায় সবকিছু হারিয়ে যখন নিঃস্ব তখনই আবার নতুন করে বেঁচে থাকার সপ্ন হাতছানি দেয় তাকে। অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া জানা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ধৈর্য ধরে নিজ বুদ্ধিকে পুঁজি করে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন। তার এ সিদ্ধান্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন পটুয়াখালী জেলার বাউফলের কালাইয়া কাঁচা বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ ব্যপারী। রাজ্জাকের বুদ্ধি দেখে মোস্তাফিজ ব্যপারী ৩ শত হাঁসের বাচ্চা কেনার টাকা দেন।

বরিশাল অঞ্চলের বেশির ভাগ জুড়ে রয়েছে পুকুর ও খালবিল। এলাকার পরিবেশগত এ দিকটির কথা মাথায় রেখে আব্দুর রাজ্জাক পরিকল্পনা নেন হাঁস পালনের। পাশের গ্রাম থেকে কিনে আনেন ৩০০টি হাঁসের বাচ্চা। হাঁসের বাচ্চাগুলোকে পুঁজি করে ২০০৮ সালে তিনি কলসকাঠী ইউনিয়নের দঃ নারায়নগুল গ্রামে গড়ে তোলেন হাঁসের খামার।

নিজ পরিবারের ও এলাকার লোকজন রাজ্জাকের এ কাজ দেখে হাসি-তামাশা করলেও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ৬ মাসের মধ্যেই তিনি একজন আদর্শ হাঁস খামারী হিসেবে পরিচিত পেয়ে যান এলাকায়। প্রতিটি মুহূর্ত খামারের কাজে লাগিয়ে অভাবকে জয় করেন তিনি। শুধু তাই নয়, হাঁস পালন করেও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায় অল্পদিনেই তা বুঝিয়ে দেন সবাইকে।

এভাবে স্বাবলম্বী হওয়া আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার কেবল এলাকার হতাশাগ্রস্ত বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্তই নন, এখন সাক্ষাৎ আশার আলো।
ভোলা জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা বর্তমানে মৃত ডাঃ মফিজুল ইসলাম’র উৎসাহ ও  পরামর্শে এক সময় হাঁস পালনে অনভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাক এখন দুই হাজার ২ শ হাঁসের একটি আদর্শ খামারের মালিক। তার দেখাদেখি বড় ছোট অনেকগুলো হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলে।

আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার জানান, হাঁস পালনই তাকে সুদিন এনে দিয়েছে । এখানে পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবং প্রাকৃতিক খাবার সহজলভ্য হওয়ায় তার হাঁসগুলো অন্য এলাকার হাঁসের চেয়ে বেশি ডিম দেয়। আর হাঁসের খামার গড়ে ওঠার কারণে খাদ্য, শামুক ও হাঁসের ডিম বিক্রির ব্যবসা করে উপার্জনের পথ হয়েছে এখানকার আরও বেশকিছু কর্মহীন মানুষের।

আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারে তথ্যমতে, ২ হাজার ২শ হাঁস থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫শ ডিম পাওয়া যায়। ৩০ টাকা দরে হাঁসের বাচ্চা কিনে এর পিছনে ওষুধ ও অন্যান্য খরচবাবদ ৭০ টাকাসহ প্রতিটি হাঁসের পেছনে মোট একশ টাকা ব্যয় হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক হাঁস বিক্রি হয় আড়াই থেকে তিনশ টাকায়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে সাড়ে ৩ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি আরও জানান, মোস্তাফিজ ব্যাপারী দেয়া হাঁসের বাচ্চা কেনার টাকা অনেক আগেই পরিশোধ করে ইতোমধ্যে হাঁসের বাচ্চা ও ডিম পাড়া হাঁসের সঠিকভাবে পালনের  প্রয়োজনে ভোলা জেলার গজারিয়া, পটুয়াখালীর দুমকী, বরিশালের কলসকাঠী ও মিরগঞ্জে কিছু কিছু জায়গা-জমিও কিনেছেন তিনি।

এদিকে, খামারের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় আব্দুর রাজ্জাক আরও ৬ জন কর্মচারী রেখেছেন খামার দেখাশোনার জন্য। এ ৬ জন ছাড়াও হাঁস ও ডিম বিক্রির মাধ্যমে আরও প্রায় ১০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তার খামারে।

বরিশাল জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল জব্বার শিকদার জানান, শুধু আব্দুর রাজ্জাক কেন বরিশাল অঞ্চলের বেকার যুবক আতœনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে এ ধরনের পেশায় আত্মনিয়োগ করতে চায় এমন যে কাউকে, আমরা সহযোগিতা করবো।