মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির সঙ্গে জনগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে

বর্তমান মহাজোট সরকার তাদের অপশাসন, ব্যর্থতা ও পরনির্ভরশীল নীতির কারণে এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এই সরকারের অপশাসন ও ফ্যাসিবাদের চিত্রই ফুটে উঠেছে। সেই জন্যই আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলেছি। আমরা আশাকরি, ধীরে ধীরে আমাদের এই দাবির সঙ্গে জনগণ সম্পৃক্ত হবে। সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।তিনি গতকাল আমার দেশ-এর সঙ্গে তার উত্তরার বাসায় দেয়া এক একান্ত সাক্ষাত্কারে এই কথা বলেন। মির্জা ফখরুল দেশে সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে বলেন, সংবিধান নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। একটি সিনেমা হলের মালিকানাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের কতগুলো পর্যবেক্ষণকে রায়ে পরিণত করার ফলে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এখন সংবিধান সংশোধন নিয়ে চলছে লেজেগোবরে অবস্থা। সংবিধানের কপি চেয়েও পাওয়া যায় না। বলা হয়, খসড়া সংবিধান রয়েছে। তাহলে দেশ চলছে কোন সংবিধানে? দেশে যখন সংবিধান থাকে না, তখন যেকোনো অঘটন ঘটতে পারে বলেও তিনি তার আশঙ্কার কথা জানান।

মির্জা ফখরুল মানবাধিকার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টামেন্টের মানবাধিকার রিপোর্টেও এ সরকারের অপশাসন ও ফ্যাসিজমের চিত্র ফুটে উঠেছে। বিচার বিভাগ গণমাধ্যম থেকে শরু করে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষার সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে সরকার। আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিরোধী দল দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চিত্রও ওই রিপোর্টে স্থান পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই রিপোর্টের মাধ্যমে বিএনপি দেশে মানবাধিকার নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করত, তা সত্য প্রমাণিত হলো।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পাওয়ার পর মির্জা ফখরুলের এটাই প্রথম সাক্ষাত্কার। গত বুধবার (৬ এপ্রিল) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সভায় তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে ২০ মার্চ সৌদি আরব যাওয়ার প্রাক্কালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার মৌখিক নির্দেশ দিয়ে যান। ১৬ মার্চ মহাসচিব হিসেবে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গেলে এই পদটি শূন্য হয়।

মির্জা ফখরুল সাক্ষাত্কারে দেশের রাজনীতি, বিএনপির রাজনীতি, দলকে তিনি কীভাবে সাজাতে চান ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ করেছেন। নীচে তা তুলে ধরা হলো :

আনুষ্ঠানিকভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন। এখন দলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আপনার চিন্তাভাবনা কী?

ফখরুল : আমরা প্রতিটি জেলায় সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলকে আরও সুসংগঠিত করতে চাই। এই কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। দলকে সংগঠিত করার জন্য আমাদের দলের নেতারা সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন।

তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি এজন্য ইউনিয়ন প্রতিনিধি সভার মতো কর্মসূচি নিয়েছিলেন। এখন তৃণমূলে দলের অবস্থা কী?
ফখরুল : তৃণমূলে আমাদের দল সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি পৌরসভা নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলে প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন। তারেক রহমানও তা শুরু করার সব আয়োজন শেষ করেছিলেন। এখন এই প্রশিক্ষণ শুরু করার কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি?
ফখরুল :  প্রশিক্ষণ যে কোনো দল বা প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করেছিলেন। আমরাও এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু করব। অতি শিগগিরই আপনারা তা দেখতে পাবেন।

সংবিধান সংশোধন বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত এই প্রক্রিয়ায় কী কী সমস্যা আপনারা চিহ্নিত করেছেন?

ফখরুল : সরকার সংবিধান নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছে। সংবিধান নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। একটি সিনেমা হলের মালিকানাকে কেন্দ্র করে মাননীয় হাইকোর্টের কতগুলো observation-কে (পর্যবেক্ষণ) রায়ে পরিণত করার ফলে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে যে রায় দেয়া হয়েছে, তা সমস্যাকে আরও জটিল করেছে। আমরা কি চতুর্থ সংশোধনী বাকশালে ফিরে যাব? নাকি বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাব? যদি বাহাত্তরে ফিরে যাই, তাহলে চতুর্থ সংশোধনীর কী হবে? বলা হচ্ছে, সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকবে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে, বহুদলীয় গণতন্ত্র থাকবে, সংসদীয় গণতন্ত্র থাকবে। তাহলে সমাজতন্ত্রের কী হবে? ধর্মনিরপেক্ষতা কোথায় বসবে? বিষয়গুলো কিন্তু সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে সংবিধান সংশোধন বিষয়ে একদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, পুনর্মুদ্রণ করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। খসড়া সংবিধান তৈরি হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন দেশ তবে কোন সংবিধানে চলছে? এই সংসদ তো সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। গণভোটের ব্যবস্থা রাখা হবে কিনা? এটা একটা লেজেগোবরে অবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে।

সংবিধান সংশোধন বিষয়ে সঙ্কটের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। সেটা কী ধরনের সঙ্কট হতে পারে?
ফখরুল : দেশে যখন সংবিধান থাকে না, তখন যে কোনো অঘটন ঘটতে পারে। দেশের শত্রুরা অতীতে বহুবার অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। তারা আবার সুযোগ নিতে পারে।

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে দেশে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, এই ব্যাপারে আপনাদের মূল্যায়ন কী?

ফখরুল : ড. মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল বিজয়ী একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। গ্রামীণ ব্যাংক ও তার ক্ষুদ্রঋণ বিশ্বে দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে একটি নতুন তত্ত্বের সৃষ্টি করেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী এতে লাভবান হয়েছে। তাদের ঋণে কোনো ধপপবংং ছিল না। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণ যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। কিছু ভুল-ত্রুটি আছে। হয়তো যে হারে দারিদ্র্য দূর হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। কিন্তু এটা তো সত্য যে, এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুদ্রঋণ অনুঘটকের ভূমিকা রেখেছে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রেখেছে।

বর্তমানে ড. ইউনূসকে নিয়ে যা চলছে, তা ব্যক্তিগত আক্রোশ ছাড়া আর কিছুই নয়। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ন্ত্রণে এনে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহারের আশঙ্কা আমরা করছি। বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি অত্যন্ত ক্ষুণ্ন হয়েছে।

ড. ইউনূস ইস্যুতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশেষ করে আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর দূরত্ব বেড়েছে। বিরোধী দল হিসেবে এ অবস্থায় আপনাদের ভূমিকা কী?
ফখরুল : আমরা সব সময় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের পক্ষপাতি। বিশেষ কোনো দেশ বা জোটের প্রতি আমাদের বিশেষ কোনো আগ্রহ নেই। তবে মুসলিম বিশ্ব এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোসহ দূরপ্রাচ্যের সঙ্গে আমরা গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চাই। আমরা নীতিগতভাবে মনে করি, আমরা বন্ধু চাই, প্রভু নই।

অনেকে মনে করেন দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ অনেক ইস্যু থাকার পরও বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। এর কারণ কী?
ফখরুল : কথাটা ঠিক নয়। দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইত্যাদি নিয়ে আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, এমনকি হরতালও করেছি। আমরা যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে দেখব বাংলাদেশের জনগণ সবসময় সরকারকে একটি যৌক্তিক সময় দিয়েছে। যখন সময় হয়, তখন জনগণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের দাবি আদায় করে নেয়। সরকার এরই মধ্যে তাদের ব্যর্থতা ও পরনির্ভরশীল নীতির কারণে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। সেজন্যই আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলেছি। আমরা আশা করি, ধীরে ধীরে আমাদের দাবির সঙ্গে জনগণ সম্পৃক্ত হবে। সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

ভারতকে ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া ইস্যুতে বিএনপি বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া ছাড়া বড় কোনো কর্মসূচি দেয়নি। এর কারণ কী?
ফখরুল : ভারতকে ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়াসহ জাতীয় স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছি। এসব নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছি।

আপনারা ক্ষমতায় গেলে এগুলো বাতিল করবেন কিনা?
ফখরুল : জাতীয় স্বার্থবিরোধী যে কোনো চুক্তির বিরুদ্ধে আমরা আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছি।

সীমান্তে হত্যা নিয়ে যখন মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিয়মিত রিপোর্ট প্রকাশ করে চলেছে এবং বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি নেই কেন?
ফখরুল : সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা সব সময়ই সোচ্চার। এসবের বিরুদ্ধে আমরা জোরালো প্রতিবাদ জানাই। সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কর্মসূচিও দিয়েছি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচনসহ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দু’একটি উপনির্বাচনে জয়লাভকে আপনাদের রাজনৈতিক জয় বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই জয় সরকারের প্রতি জনগণের নেতিবাচক মনোভাবের ফল। বিএনপির ইতিবাচক অর্জন নয়। এই বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
ফখরুল : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাসহ দু’একটি উপনির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষকদের ধারণ সঠিক নয়। যদিও ১/১১-এর অসাংবিধানিক সরকারের সময়ে বিএনপিকে ব্যাপক আঘাত করা হয়েছে, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দলের যে পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন হয়েছে, তার মাধ্যমে বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তদুপরি জনগণ বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ও বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের মধ্যে তুলনা করছে বলেই এই বিজয় অর্জিত হয়েছে।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কমিটি করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন?
ফখরুল : বিএনপি একটি বৃহত্ সংগঠন। এখানে সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু তা আমাদের কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করছে না।

অনেকে মনে করেন, আপনার দলের মধ্যে গণতন্ত্রায়ন হয়নি। এর প্রকৃত কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
ফখরুল : এই মতের সঙ্গে আমি একমত নই। আমাদের বিগত জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশে প্রতিটি ইউনিট গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। আমাদের দলের চেয়ারপার্সনের নির্বাচনও হয়েছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে দলকে আরও সুসংগঠিত করা ও দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার কাজ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চলছে।

চারদলীয় জোটের সর্বশেষ অবস্থা কী?
ফখরুল : চারদলীয় জোট ভেঙে যায়নি, সময়মত সক্রিয় হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে সরকারের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ফখরুল : বর্তমান সরকারের একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ঐতিহ্য রয়েছে। তারা ফ্যাসিবাদী আচরণের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সে কারণেই সরকারের দলীয় লোকেরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়ার কথা অনেক জায়গায় বলেছেন। আমরা মনে করি, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার এই অসাংবিধানিক চিন্তা করছে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। সরকারের এমন চিন্তাভাবনা গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চর্চার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন আপনারা। এর কারণ কী?
ফখরুল : ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি আন্তর্জাতিকভাবে এরই মধ্যে বিতর্কিত হয়েছে। আমেরিকার অনেক রাজ্যে এই ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে। ভারতেও ইলেকট্রনিক ভোটিং সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এই পদ্ধতি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, কারচুপির যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকতে পারে। এজন্যই আমরা ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতির বিরোধিতা করছি।

গণতন্ত্রকে অর্থবহ করার জন্য আপনার পরামর্শ বলুন।
ফখরুল : গণতন্ত্রে সহনশীলতার বিকল্প নেই। অপরের মতকে সম্মান করা বহুদলীয় গণতন্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থা রাখতে হবে।

সেকুলারিজম সম্পর্কে আপনার মত বলুন।
ফখরুল : আমরা ধর্মীয় বিশ্বাস স্বাধীনতা ও সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারকে আমরা সব সময়ই পরিত্যাগ করেছি। এ দেশের মানুষ সেকুলারিজমে বিশ্বাস করে না। কিন্তু ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। সম্ভবত বাংলাদেশই এই উপমহাদেশের একমাত্র দেশ যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অত্যন্ত নিবিড়ভাবেই বিরাজ করছে।

দেশ নিয়ে আপনার স্বপ্ন বলুন।
ফখরুল : বাংলাদেশ অতি দ্রুত একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এখানে কেউ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের জন্য কষ্ট পাবে না। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিত্সাসহ মৌলিক অধিকারগুলো মানুষের কাছে পৌঁছবে। একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণই আমার স্বপ্ন।