যা হবার হয়ে গেছে-আর কিছুই হবেনা

হুমকি-ধামকিসহ সরকার পরিবর্তন হলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়া হয়েছে। উপায়ন্তুর না পেয়ে থানায় সাধারন ডায়েরীও করেছি। তদন্ত কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়েরের একবছর অতিবাহিত করার পরেও আজো তার কোন সুফল পাইনি। তাহলে তদন্ত কমিশন গঠন করে আমাদের কাছ থেকে অভিযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষের কাছে পূণঃরায় আমাদের কেনইবা শত্র“ করা হলো। কয়েকটি অভিযোগের তদন্তে থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। তারা (পুলিশ) তদন্তে গিয়ে ২০০১ সালের হামলাকারীদের কাছেই হামলার কাহিনী শুনতে চায়। এ নিয়ে এলাকায় ফের উত্তেজনারও দেখা দিয়েছিলো। তদন্ত কমিশন গঠনের একবছর পরেও যখন নির্যাতিদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। তখন কমিশন গঠনেরই বা কি দরকার ছিলো। যা হবার তাতো ২০০১ সালেই হয়ে গিয়েছিলো। আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেছেন ২০০১ সালের মিডিয়ার বহুল আলোচিত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের কমলা রানী রায়। এ কথাশুধু কমলা রানীর একারই নয়। একই ভাবে বলেছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদীকা শেফালী রানী সরকার, নির্যাতিত আওয়ামীলীগ নেত্রী রেনুকা অধিকারী ওরফে কালা বউ, খাঞ্জাপুরের প্রণব রঞ্জন বাবু দত্ত, গেরাকুলের গোলাম হেলাল মিয়াসহ অসংখ্য নির্যাতিত আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা।

রাজনৈতিক বিশেষ্ণদের মতে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিশনের নামে যা হবার হয়ে গেছে-আর কিছুই হবে না। কারন সরকারতো আর একটি বিষয় নিয়েই বসে থাকেন না। তাকে ভাবতে হয় পুরো বিষয় নিয়েই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নির্যাতিত একাধিক মহিলা আওয়ামীলীগ কর্মীরা বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিশনে অভিযোগ করে এক বছরে মোরা কি পেলাম। তদন্ত কমিশন বা সরকারইবা মোগো কি দিলো। সরকারী কিংবা প্রশাসনের কেউকি বলতে পারবেন, তদন্ত কমিশনে অভিযোগ দেয়ার পর ওইসব লোমহর্ষক ঘটনার কোন বিচার করেছেন বা বিচার হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের ক্যাডার বাহিনীর হাতে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের ৫০ টি, রামানন্দেরআঁক গ্রামের ২৫ টি, বাহাদুরপুর গ্রামের ৩০ টি, বাকাল গ্রামের ২৫ টি, পতিহার গ্রামের ৩০ টি সহ অসংখ্য পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। এসময় গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দু’শতাধিক পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে আত্মগোপন করেছিলেন। নির্বাচন পরবর্তী সময় বিভিন্ন হামলার শিকার হয়ে গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, কালকিনি, উজিরপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলার আওয়ামীলীগের হাজার-হাজার নির্যাতিত নেতা-কর্মীরা আগৈলঝাড়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী বর্তমান মহাজোট সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ উপজেলা কোটালীপাড়ার রামশীল গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর তৎকালীন স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী শপথ গ্রহনের পর প্রথম সফর করতে এসেছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া ও রামশীলে। ওই সময় তিনি হেলিকপ্টারে রামশীল ঘুরে ঢাকায় গিয়ে রামশীলে আশ্রয় গ্রহণকারীদের নির্যাতিত না বলে উল্টো সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর চারদলীয় জোটের ক্যাডাররা আরো বেপরোয়া হয়ে লোমহর্ষক নির্যাতন চালিয়েছিলো। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তৎকালীন এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছিলো।

আওয়ামী দলীয় সূত্রের বর্ননানুযায়ী, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্যাডারদের নির্যাতনে ৩ শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো। ধর্ষিত হয়েছিলো ৭ জন, খুন হয় ২ জন, অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিলো অসংখ্য। দীর্ঘ ৯ বছর পর অভিযোগ করার সুযোগ পেয়ে শুধু আগৈলঝাড়ার নির্যাতিতরাই নয় ভূক্তভোগী গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলার নির্যাতিতরা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিশনের কাছে জোট সরকারের আশির্বাদপুষ্ট সন্ত্রাসী ও ক্যাডারদের হামলার শিকার আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা, এসিড নিক্ষেপসহ ঘরবাড়ি ছাড়ার লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করেছিলেন। কমিশনের নেতৃবৃন্দ গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় আসার পূর্বেই (২০১০ সালের ১১ এপ্রিল) তাদের কাছে বরিশাল সার্কিট হাউজে বসেই অর্ধশত অভিযোগ জমা পরেছিলো। আগৈলঝাড়ায় কমিশনের সামনে ১২৯ জন ও গৌরনদীতে শতাধিক নির্যাতিতরা লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবলীগের বাছাই করা তথ্যানুযায়ী, চারদলীয় জোট সরকারের সময় তাদের দলের ২৯৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৯ টি মিথ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ধর্ষণের শিকার  হয়েছিলো ৫ জন, দেশত্যাগ করেছিলেন ১৫ টি পরিবার, হত্যার শিকার হয়েছিলো আওয়ামীলীগের ৫ জন নেতা-কর্মী। আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ছিলো কোটি টাকারও অধিক। সূত্রে আরো জানা গেছে, আগৈলঝাড়ার ৫ টি ইউনিয়নে জোটের ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের সংখ্যা ছিলো ৮৩০ জন। এরমধ্যে রাজিহার ইউনিয়নে ১৮২ জন, বাকালে ৯২ জন, বাগধায় ১২০ জন, গৈলায় ৩২৯ জন ও রত্নপুরে ১০৭ জন।

মানবতা বিরোধী অপরাধ তদন্ত কমিশনের কাছে আগৈলঝাড়ার ১২৯ জন নির্যাতিতরা অভিযোগ দাখিল করতে পারলেও  কমিশন সদস্যরা আগৈলঝাড়া ত্যাগ করার পর আরো প্রায় অর্ধশতাধিক অভিযোগকারীরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারেননি।

রিপোর্টটি তৈরী করেছেন : খোকন আহম্মেদ হীরা ও তপন বসু