একজন প্রবাসীর রোজনামচা…

অনেকের কাছে গল্প মনে হতে পারে। সত্যতা যাচাইয়ের কোন সুযোগ নেই, তাই বিশ্বাস অবিশ্বাসের দায়িত্বটা পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম। বাস্তবতা মিথ্যা হলে খুব একটা ক্ষতি নেই, কারণ বিশ্বাস করি পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ঘটছে এসব ঘটনা, যা একজন বাংলাদেশি হিসাবে চেপে যাচ্ছি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক কারণে। লেখার খাতিরে ধরে নিচ্ছি ঘটনার স্থান, কাল ও পাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের বাসিন্দা চৌধুরী পরিবারের কজন।

ভদ্রলোকের পুরা নাম সাজেদুর রহমান চৌধুরী (কাল্পনিক)। বনেদি চৌধুরী পরিবারের বড় সন্তান সাজেদুরকে অনেকটা জোর করেই বিদেশে পাঠিয়ে দেন উনার মরহুম পিতা। সদ্য স্বাধীন একটা জাতির যুব সমাজে ততদিনে নৈতিক অবক্ষয়ের মহাযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাধীনতা আতুর ঘরেই মৃত্যুবরণ করেছে তন্ত্র, বাদ আর লাল ঘোড়া দাবড়ানোর গ্যাঁড়াকলে। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত পিতাকে তাই খুব একটা বেশি ভাবতে হয়নি আদরের সন্তানকে বিদেশে পাঠাতে গিয়ে। ৭০ দশকের মাঝামাঝি গ্রীষ্মের কোন এক সোনা ঝরা সকালে সাজেদুরকে দেখা গেল নিউ ইয়র্ক শহরের কুইন্স এলাকায়। দেশ হতে সেই যে আসা আর ফিরে যাওয়া হয়নি অনেকগুলো বছর। ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিলনা অভিবাসন সমস্যার কারণে। পিতার অকাল মৃত্যুতে শুকিয়ে গেল টাকার সহজ তারল্য। শারীরিক পরিশ্রমটা মেগা সিটির ইয়েলো ক্যাব দিয়ে শুরু। সোমবার বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিন গাড়ি চালাতে শুরু করল। দিনে ১৮ ঘন্টা চালাতে গিয়ে নাওয়া খাওয়ায় অনিয়ম করতে বাধ্য হল । ক্ষয়টা শারীরিক হলেও এক সময় ফুলে ফেঁপে বেলুন হয়ে উড়তে শুরু করল সাজেদুরের ব্যাংক হিসাব। সাফল্যের শুরুটা এভাবেই। ইনসুরেন্স, রিয়েল স্টেট, ট্রাভেল এজেন্সি, আমদানী রপ্তানী, ওয়াল স্ট্রীট আর ক্রেডিট কার্ড ফ্রড, এক কথায় বৈধ অবৈধ সব পথেই আসতে থাকল কাঙ্খিত অর্থ। সাজেদুর হতে সাজেদুর রহমান চৌধুরীতে রূপান্তরিত হতে খুব একটা পরিশ্রম করতে হলনা গল্পের নায়ককে। বিত্ত বৈভবের পাশাপাশি টাকাই এনে দিল নাম ও প্রতিপত্তি। এই টাকার জোরেই সমাধা করতে হল ইমিগ্রেশন সমস্যা। বিয়ের নাজরানা বাবদ ন্যান্সি হাওয়ার্ডকে (কাল্পনিক নাম) কত দিতে হয়েছিল তার হিসাব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। এর বোধহয় প্রয়োজনও ছিলনা, কারণ সাজেদুরের টাকার সমুদ্রে এ ছিল ছোট্ট একটা তরঙ্গ মাত্র। ন্যান্সির স্পাউজ হিসাবে নাগরিকত্বের দলিলটা হাতে পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই মঞ্চস্থ হয়ে গেল সংসার নাটকের শেষপর্ব, ডিভোর্স। এবার দেশে ফেরার পালা। নতুন স্বপ্নের সোনালী ঝাপি বুকে নিয়ে মধ্য জানুয়ারীর কোন শীতের সকালে চেপে বসল বিমানের ঢাকা গামী ফ্লাইটে।

১৫ বছর আগের সাজেদুর ঢাকার মাটিতে প্রথম যেদিন পা রাখল বয়স তার ৪৫ ছুঁই ছুঁই করছে। আত্মীয় স্বজনদের যারা এয়ারপোর্টে এসেছিল অনেকেই চমকে উঠল তার চেহারা দেখে। চোখে কালো ফ্রেমের শ্রীহীন চশমা, মাথায় চুল বলতে যা আছে তাতে কালো রং লাগিয়েও আটকানো যাচ্ছে না সফেদ রাজ্যের উঁকিঝুঁকি। তামাকের অত্যাচারে জর্জরিত ঠোট আর অনাদরে অবহেলায় বেড়ে উঠা তালের মত ভুরিটা পরিধানের বস্ত্র ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে, সাজেদুরের এমন চেহারার সাথে কেউ মেলাতে পারল না ১৫ বছর আগের চৌধুরী পরিবারের এই কেতাদুরস্ত সন্তানকে। বাহ্যিক চেহারায় হতাশ হলেও সবার জানা ছিল টাকা আছে চৌধুরীর পকেটে, অঢেল টাকা। দেশে আসার আসল কারণটা লুকায়নি সাজেদুর, বিয়ে। ম্যারাথন পাত্রী দেখা চলেছে এক বছর ধরে। ব্যাংকার আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে শুরু করে মাদ্রাসার ১৭ বছরের ছাত্রী পর্যন্ত বাদ যায়নি তালিকা হতে। দীর্ঘ তালিকা সংক্ষিপ্ত করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে পরিবারের বাকি সবাইকে। ধৈর্য্য পরীক্ষায় পরাজিত হওয়ার চূড়ান্ত মুহূর্তে সন্ধান পাওয়া গেল মেহজাবিনের (কাল্পনিক নাম)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের (কাল্পনিক) শেষ বর্ষের ধারালো ছাত্রী মেহজাবীন তাহা বিনতে মুশফেকা।

২৪ বছর বয়সী মেহজাবীন কেন ৪৫ বছর বয়স্ক সাজেদুরকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছিল তার আপন মা-বাবার কাছেও তা ছিল বিরাট এক রহস্য। নিজেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পরিচয় দিয়েছিল সাজেদুর। ব্যবসায়ী প্রয়োজনে দু সপ্তাহের একটা কোর্স শেষ করলেও এ লাইনে তার জ্ঞান ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু বিয়ের বাজারে পরিচয়টা কাজ করেছিল ম্যাগনেটের মত। পয়সাওয়ালা, তার উপর ইঞ্জিনিয়ার, এমন একজন পাত্র শুধু মা-বাবারই নয়, স্বপ্ন ছিল মেহজাবীনের মত অনেক উঠতি মেয়ের। ডিপার্টমেন্টের ছজন বাঘা ছাত্রকে রূপের মুগ্ধতায় কবির খাতায় নাম লেখাতে বাধ্য করেছিল মেহজাবীন। অথচ সেই মেয়ে হাসিমুখে বিয়ের পিঁড়িতে বসল বাপের বয়সী একজনের সাথে। দিন শেষে সোনা-দানার তাজমহলে মমতাজ বনে গেল এক কালের সাড়া জাগানো সুন্দরী তাহা বিনতে মুশফেকা। সুখের পায়রা গুলো যেন অকারণেই গাইতে শুরু করল সুখজাগা্নিয়ার গান।

বছর না ঘুরতে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশে হাজির হল প্রবাস মহাকাব্যের অন্যতম চরিত্র মেহজাবীন। স্বপ্ন আর বাস্তবতার যোজন যোজন দূরত্বে হুমড়ি খেতে খুব একটা সময় লাগে না, মেহজাবীনের বেলায়ও তাই হল। কম্পিউটার প্রকৌশলীর লাল নীল আবরণ ভেদ করে একজন স্বল্প শিক্ষিত, একগুয়ে ও অসৎ বাংলাদেশির আসল চরিত্র বেরিয়ে আসতেও দেরী হলনা। এবং এখানেই জন্ম নিল কাহিনীর নতুন বাঁক।

বন্ধুদের অনেকে ব্যবহার করে ফল পেয়েছে ইতিমধ্যে, সাজেদুরও পা বাড়াল এই পথে। নতুন দুনিয়ার অলি গলি চেনার আগেই মেহজাবীনের কোলে ধরিয়ে দেয়া হল সন্তান নামের পারিবারিক বন্ধন। যতটা না পিতৃত্বের আকাঙ্খা তার চাইতে ’ঘরবন্দী’ মহাপরিকল্পনার হাতিয়ার বানাতে জন্ম দিল মাজেদুর চৌধুরীকে (কাল্পনিক নাম)। সংসার চিরস্থায়ী করার প্রথম অধ্যায়ের সফল সমাপ্তির পর দ্বিতীয় অধ্যায়ে মন দিল সাজেদুর। ধর্ম কর্মে মন দেয়ার চাপ দিল স্ত্রীকে। কোলে সন্তান, মাথায় হিজাব আর মুখে ঘন ঘন সৃষ্টিকর্তার নাম, এসবের মাঝেই কবর দিতে চাইল মেহজাবীন নামের বাস্তবতাকে। এ বাস্তবতার প্রায় সবটা জুড়ে ছিল হারানোর ভয়, পরাজিত হওয়ার দুঃস্বপ্ন।

পরাজয়ের স্বাদ সাজেদুরকে গ্রহন করতে হয়েছিল ঠিকই, তবে তা সহসাই আসেনি। এসেছিল আরও পনের বছর পর। সন্তান মাজেদুর বড় হওয়ার পাশাপাশি এক ধরণের বিদ্রোহ দানা বাধতে শুরু করল মেহজাবীনের মনে। যে স্বপ্নকে লালন করে পাড়ি দিয়েছিল অজানার উদ্দেশ্যে তাকে আবিস্কারের অদম্য ইচ্ছায় খুলে ফেলল মাথার হিজাব। রাতারাতি বদলে ফেলল মুখের ভাষা সহ পরিধানের বস্ত্র। ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল পরিচিত গন্ডি হতে। খুব একটা দুরে যেতে পারেনি, স্থানীয় ডানকিন ডোনাটে ঘন্টায় ৬ ডলারের চাকরী হতেই শুরু করতে হল নতুন যাত্রা। এখানেই পরিচয় হল আসলাম মোহম্মদের সাথে। জন্মসূত্রে পাকিস্তানী আর চেহারায় স্বপ্নের নায়ক ইমরান খানের ছায়া। মজে গেল মেহজাবীন, এবং মোহম্মদের হাত ধরে পা বাড়াল জটিল পথের অনিশ্চিত বাঁকে।

বয়সের কাছে প্রায় পরাজিত সাজেদুর সন্তান মাজেদুরকে নিয়ে অন্ধকার দেখল। ব্যবসা বাণিজ্যেও ততদিনে লেগে গেছে ভাটার টান। ওয়াল স্ট্রিটে বড় ধরণের ধরা খেয়ে দেউলিয়া ঘোষনা করতে বাধ্য হল বেশ কটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাড়ি ও গাড়ির মর্টগেজ পরিশোধে দেখা দিল অনিয়ম। কোলেস্টরেল, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র সহ রাজ্যের রোগ এসে ঝেঁকে বসল তার শরীরে। এত কিছুর পরও হার মানতে চাইল না এবং মনের জোরে ফিরে গেল যেখান হতে শুরু সেখানে, ট্যাক্সি ক্যাব। জীবন যুদ্ধে প্রায় পরাজিত সাজেদুরকে এ নিয়ে কেউ কখনো আক্ষেপ করতে দেখেনি। বরং কাজের শেষে কম্যুনিটির বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে ভুলে যেতে চাইল সব হারানোর যন্ত্রণা। কিন্তু নিয়তি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা আব্যাহত রাখল। একদিন অসময়ে বাসায় ফিরে আবিস্কার করল কবরের শেষ পেরেক টাকে। ১৬ বছরের মাজেদুর ৩০ বছর বয়স্কা এক নিগ্রো পতিতা নিয়ে শুয়ে আছে নিজ কক্ষে। ধৈর্য্যের বাধে অনেকদিন ধরেই ফাটল ধরা ছিল, ঘটনার আকস্মিকতায় তা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ল। রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ল এবং উন্মাদের মত ঝাপিয়ে পরল আপন সন্তানের উপর। প্রতিবেশির ডাকে পুলিশ এসে আধমরা মাজেদুরকে হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হল। বাবা সাজেদুরকে যেতে হল কুইনস কাউন্টি জেলে। এভাবেই শুরু হল সাজেদুর উপাখ্যানের শেষ পর্ব।

মাথায় উলটো করা বেইসবল ক্যাপ আর নিতম্বের অনেক নীচে ঝুলে থাকা প্যান্টটাকে হাতে ধরে দ্ধিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি মাজেদুর বনে গেল ম্যাজ, আর বাবা ও এক কালের কেতাদুরস্ত সাজেদুরের মাথায় উঠল মদিনা টুপি এবং পরনে সফেদ আলখেল্লাহ। দুই প্রজন্মের দুই বাংলাদেশির আমেরিকান ড্রীম এভাবেই লতায় পাতায় বেড়ে উঠল। মারামারির পর্বটা আরও নোংরা দিকে মোড় নিল, বৃদ্ধ পিতার গায়েও হাত দেয়া শুরু করল তরুন ম্যাজ। রাস্তার পতিতা আর নিষিদ্ধ ড্রাগের আখড়া হয়ে উঠল তাদের ঠিকানা। মর্টগেজ পরিশোধে অনিয়মের কারণে বাড়ি যেদিন নিলামে উঠল একই দিন মাজেদুর ওরফে ম্যাজ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হল ড্রাগ বানিজ্যের অভিযোগে।

চৌধুরি পরিবারের ভাগ্যলিপির খুটিনাটি লিখতে গেলে আরব্য উপন্যাসের দৈর্ঘ্যকেও হার মানাবে যা ধৈর্যচ্যুতি ঘটাবে পাঠকদের। তাই সংক্ষিপ্ত করতে হচ্ছে একজন বাংলাদেশির জীবন যুদ্ধের অভিশপ্ত কাহিনী। গৃহহারা সাজেদুর সন্তানকে জেল হতে বের করে ভুলিয়ে ভালিয়ে দেশে নিয়ে যায় এবং কথিত আছে জিয়া এয়ারপোর্টের (তৎকালীন) ইমিগ্রেশন ও কাস্টম পার হওয়া মাত্র গলা টিপে মাটিতে আছড়ে ফেলে সন্তানকে। লাথি আর কিলঘুষির বন্যা বইয়ে দেয় তার শরীরের উপর এবং প্রানভরে প্রতিশোধ নেয় জমে থাকা ক্ষোভের। স্থানীয় পুলিশ আর টাউট বাটপারদের হাতে কিছু নগদ ধরিয়ে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে উঠায় অর্ধমৃত সন্তানের দেহ এবং মিশে যায় বিশাল জনারণ্যে। বাংলাদেশের কোন এক জেলা শহরে সাজেদুরের যেদিন মৃত্যু হয় বন্ধু বান্ধবরা মিলে সানি সাইডের মসজিদে মিলাদের আয়োজন করেছিল। জিলাপি আর রসগোল্লার আপ্যায়নে পরিচিত অপরিচিতরা আর দশটা মৃত্যুর মত বিদায় জানিয়েছিল সাজেদুর লেগাসিকে।

আমার এ লেখার কোন উপসংহার নেই, নেই বিশেষ কোন তাৎপর্য। একজন সাজেদুরের ভাগ্যে কি ঘটল এবং কেন ঘটল তা নিয়ে মাথা ঘামানোর মত যথেষ্ট সময় নেই আমাদের। দেশের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা হতে পালাতে গিয়ে শুধু সাজেদুর কেন আমরা সবাই এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেই পরবর্তীতে যার খেসারত দেই সাড়া জীবন ধরে। অসম বিয়ে, সন্তান মানুষ করা নিয়ে কালচারাল কনফ্লিক্ট, মেইনস্ট্রিম সোসাইটিতে নিজেদের খাপ খাওয়ানোর ব্যর্থতা, অর্থের পেছনে অন্তহীন ম্যারাথন; সব মিলিয়ে জীবনকে এমন এক গলিতে নিয়ে যাই যেখানে স্ত্রী সন্তান নয়, অপেক্ষায় থাকে মৃত্যু যমদূত। এ দৌড়ে সাজেদুর একা ছিলনা, আশেপাশের যারাই সুখী সুখী ভাব নিয়ে প্রতিদিন আড্ডা জমায়, দলবেঁধে গ্রোসারীতে যায় তাদের সবার ভেতর একজন সাজেদুর বাস করে। আমরা স্বীকার করতে চাইনা, ঘনিষ্ট বন্ধুর কাছেও প্রকাশ করতে দ্বিধা করি, কিন্তু দেরিতে হলেও এর মূল্য দেই এবং তা হয় চরম। আওয়ামী না বিএনপি, পিতা না ঘোষক, বাংলাদেশি না বাঙ্গালী, প্রবাস জীবনের এই চিরন্তন বিতর্ক আমাদের হয়ত বেধে রাখে দেশীয় সাংস্কৃতির শ্বাশত গন্ডিতে। কিন্তু দিন শেষে আমাদের সবাইকে ঘরে ফিরতে হয় এবং মুখোমুখি হতে হয় মেহজাবীন আর মাজেদুরদের। আমরা কথা বলি একজন শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে, বিতর্ক করি তাদের সন্তানাদি নিয়ে, অথচ অবলীলাক্রমে ভুলে থাকি নিজের কথা, আপন পরিবারের কথা, নিজ সন্তানাদির কথা। কোনদিন শুনিনি এ নিয়ে সেমিনার হচ্ছে, কাউন্সেলিংয়ের আয়োজন হয়েছে অথবা একজন আরেক জনকে সান্তনা দিচ্ছে। অথচ এ সমস্যা প্রায় প্রতি দেশে, প্রতি ঘরে।

লেখাটা অসমাপ্ত থাকবে যদি কাহিনীর বাকি দুই চরিত্র মেহজাবীন ও মাজেদুরের পরিনতি অলিখিত ও উপেক্ষিত রাখি। শোনা যায় মেহজাবীন ও পাকিস্তানী মোহম্মদের যৌথ জীবন খুব একটা লম্বা হয়নি। গাঁজাখোর মোহম্মদ নেশার ঘোরে প্রায়ই মারধর করত তাকে। মা-বাবা, ভাই-বোনের পাশাপাশি দেশ ও জাতি নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য ছিল এই পাকির নিত্যদিনের খাদ্য। সম্পর্কের চরম মুহূর্তে মেহজাবীনের জীবনে আসে জ্যামাইকান বংশোদ্ভুত পিটার। কোন এক সুন্দর সকালে এই নিগ্রোর হাত ধরে পালিয়ে যায় মোহম্মদের জীবন হতে। গল্পের আসল নায়ক মাজেদুরের এখন কোন বাংলাদেশি পরিচয় নেই। সে মনেপ্রাণে আমেরিকান। নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকা এলাকায় নিতম্বের বিপদজনক নীচে প্যান্ট আর হাতে ড্রাগের পোটলা দেখলে বাংলাদেশিদের কেউ আর চোখ তুলে তাকায় না তার দিকে।

ওয়াচডগ,
লাকেম্বা, নিউ সাউথ ওয়েলস
অস্ট্রেলিয়া

AmiBangladeshi.org