নতুন ধানের মিষ্টি গন্ধে মৌ-মৌ করছে ফসলের মাঠ

বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। শষ্যভান্ডার হিসেবেখ্যাত বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও মুলাদীর অধিকাংশ এলাকার আগাম রোপিত ইরি-বোরো ক্ষেতের ধানে ফুলের ছড়া বেড়িয়েছে। সদ্য প্রস্ফুটিত এই ধান ছড়ার মিষ্টি ঘ্রাণে এখন মৌ মৌ করছে ফসলের মাঠ। অধিকাংশ এলাকায় আরমাত্র ৪/৫ দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক ভাবে আগাম রোপিত ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হবে। কয়েকটি এলাকায় ইতোমধ্যে আগাম রোপিত বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তাই কৃষকেরা ধান কাটার শ্রমিক খুঁজতে এবং কৃষক পরিবারের গৃহকর্তীরা ধান মাড়াই ও শুকানোর জন্য খোলা তৈরীকে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খুলনা, বাগেরহাট ও ফরিদপুর এলাকা থেকে ইতোমধ্যে ধান কাটার শ্রমিকেরা গৃহস্থের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

গৌরনদীর পৌর এলাকাসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ইরি-বোরো ফসলের সবুজ মাঠ এখন ক্রমেই সোনালী হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো স্থানে আগাম রোপিত বোরো ধান পাকতে শুরু করছে। আগামি ৪/৫ দিনের মধ্যেই পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। তবে কোনো কোনো স্থানে স্বল্প পরিমানে ধান কাটা শুরু হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। ইরি-বোরো জমিতে এবার পোকার আক্রমনও তেমন ছিলো না। সেই সাথে সময় মত সার, বীজ ও সেচকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে আগৈলঝাড়ায় হাইব্রীড সারথী ও উজিরপুরে ঝলক ধানের উঠতি ফসলের বিপর্যয়ের খবর পাওয়া গেছে। তার পরেও গত ৫ বছরের তুলনায় এবার বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে বলেও কৃষি বিভাগ দাবি করছেন। কৃষকেরা জানিয়েছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঠিক মনিটরিং, সার, ডিজেল সংকট না থাকা এবং গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষকেরা গত বছরের তুলনায় এ বছর অধিকাংশ জমিতে আশাতীত ফলনের আশা করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোন প্রকার দুর্যোগ না ঘটলে এবার বাম্পার ফলন হবে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬ হাজার ৬’শ ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হলেও প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার রতন কুমার মন্ডল বলেন, চলতি মৌসুমে গৌরনদীতে বোরো চাষে বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বোরো ধান সাধারনত ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যথায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ হাইব্রীড সারথী ধানের বিপর্যয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমান চাষ হয়েছে। এ উপজেলায় সর্বমোট ৯ হাজার ৯’শ ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৯ হাজার ৬’শ ৪০ মে.টন ধান।    

আগামি ২১ এপ্রিল সরকারি ভাবে গৌরনদীর কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করতে আসছেন কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিব সি.কিউ.কে মোস্তাক আহম্মেদ। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এবার বোরো ধানের আশাতীত ফলন হয়েছে। কোথাও কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় চলতি বছর বোরো ধানের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হবে বলেও তিনি আশা করছেন। আগাম বন্যা ও পোকার আক্রমন থেকে প্রতিরোধের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

#খোকন আহম্মেদ হীরা