মোরা ভূমিদস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে চাই

উপজেলার শুয়াগ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছয়টি অসহায় পরিবার তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। ওইসব সংখ্যালঘু পরিবারদের আংশিক জমিজমা দখল করে নেয়ার পর বাকি সম্পত্তি দGournadi.comখল করার জন্য প্রভাবশালী একটি ভূমিদস্যু চক্র ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে ওইসব পরিবারদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব, প্রধানমন্ত্রী সামরিক সচিব, ভারতীয় হাইকমিশনার, জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জ ও বরিশাল, পুলিশ সুপার গোপালগঞ্জ ও বরিশাল, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করায় ভূমিদস্যুরা তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারদের হত্যার হুমকি অব্যাহত রেখেছে। তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে অসহায় ওই পরিবারগুলো এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। অসহায় সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি রেখে বলেছেন “মোরা ভূমিদস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে চাই-মোগো বাঁচান”। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংখ্যালঘু ওইসব পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রামের দিনমজুর শশধর দাস (৮৩), ভদ্র কান্ত দাস (৮০), নিরঞ্জন দাস (৫২), কালা চাঁদ ওরফে বীরেন দাস (৪৮), নিম চাঁদ (৪৬) ও নিলমনি দাস (৪৫) ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত তাদের পূর্ব পুরুষের এস.এ-৩৯৬, ৯৪৭, ৩২১ খতিয়ানের বিভিন্ন দাগের ৩ একর ৫৯ শতক সম্পত্তি ১৯৬৬ সন থেকে ভোগ দখল করে আসছেন। মাঠ জরিপেও তাদের নামে রেকর্ড রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে অসহায় দিনমজুর ওইসব সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পরে পাশ্ববর্তী আগৈলঝাড়ার আমবৌলা গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুল হান্নান হাওলাদার, আবুল বাশার ওরফে বাদশা হাওলাদার ও নিমারপাড় গ্রামের গঞ্জর আলী শেখের। প্রভাবশালী ওই ভূমিদস্যু চক্রটি জাল দলিলের মাধ্যমে সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের ওই জমির মালিকানা দাবি করে দখল করতে যান। এসময় তাদের (ভূমিদস্যুদের) বাঁধা দেয়ায় শশধর দাসের পুত্র প্রাইভেট শিক্ষক অরুন দাসকে (৪৩) অপহরন করা হয়। ভূমিদস্যুরা প্রকাশ্য দিবালোকে অরুন দাসকে অপহরন করে বেধম মারধর করে। পরবর্তীতে তাকে আটক করে রেখে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে আমবৌলা গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুল হান্নান হাওলাদার ও আবুল বাশার ওরফে বাদশা হাওলাদার এস.এ-৩৯৬ খতিয়ানের ২১৮৯ দাগের ৫৩ শতক ও ২৪০১ দাগের ২২ শতক সম্পত্তি জবর দখল করে নেয়।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেনা সমর্থিত গত ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু আব্দুল হান্নান হাওলাদার তার ভাতিজা মন্নান হাওলাদারের পুত্র সেনা সদস্য বর্তমানে ঢাকার কচুক্ষেতে কর্মরত কামরুল ইসলামের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ও সেনা সদস্য কামরুল ইসলামসহ অন্যান্য সেনা সদস্যদের উপস্থিতিতে উল্লেখিত সংখ্যালঘু পরিবারের ৫৩ শতক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে ওই সম্পত্তিতে হান্নান হাওলাদার একটি মাছের ঘেরসহ অস্থায়ী টিনের তৈরি দুটি খুপরি ঘর নির্মান করেছে।

ভুক্তভোগী ভদ্র কান্ত দাস অভিযোগ করেন, প্রভাবশালীরা ১৯৯৭ সাল থেকে তাদের বিরুদ্ধে পর পর তিনটি মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করে। প্রতিটি মামলার তদন্তে তারা নির্দোশ প্রমানিত হওয়ায় আদালত থেকে বেখসুর খালাশ পেয়েছেন। দিনমজুর নিরঞ্জন দাস বলেন, গত তিনবছর ধরে নিমারপাড় গ্রামের প্রভাবশালী ভূমিদস্যু গঞ্জর আলী শেখ জাল দলিলের মাধ্যমে তাদের এস.এ-৯৪৭ খতিয়ানের ১৭৮০ দাগের ও ৩২১ নং খতিয়ানের ২৪৬৫ দাগের ১ একর ৯০ শতক জমির মালিকানা দাবি করে আসছে। এমনকি ওইসব জমির রোপিত ইরি-বোরো ও আমন ধান পাকার সময় লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে গঞ্জর আলী ধান কাটার জন্য আসে। প্রতিবছরই এলাকাবাসির তোপের মুখে প্রভাবশালী গঞ্জর শেখ তার দলবল নিয়ে পিছু হটে। উপায়অন্তুর না পেয়ে অতিসম্প্রতি গঞ্জর শেখের পুত্র জলিল শেখ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে ওইসব সংখ্যালঘু পরিবারদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য নানাধরনের ভয়ভিতী প্রদর্শনসহ হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়া ওই ছয়টি সংখ্যালঘু পরিবারকে অনতিবিলম্বে ভারতে যাওয়াও হুমকি দেয়া হয়। ভূক্তভোগী কালা চাঁদ দাস বলেন, উল্লেখিত ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করা অভিযোগ উত্তোলনের জন্য গঞ্জর আলী ও তার লোকজনে আমাদের হত্যা করার হুমকি অব্যাহত রেখেছে। প্রভাবশালীদের অব্যাহত হুমকির মুখে অসহায় সংখ্যালঘূ পরিবারগুলো এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। সূত্রে আরো জানা গেছে, উল্লেখিত প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে নিরিহ সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের জমিজমা আত্মসাত করার জন্য উৎসাহ যোগাচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুধারঞ্জন রায়।

প্রভাবশালী ভূমিদস্যু কর্তৃক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আংশিক জমি আত্মসাত এবং বাকি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরিত সংখ্যালঘূ স¯প্রদায়ের অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবীর মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আমার কাছে পাঠানো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিযোগের তদন্তের স্বার্থে গত ৩১ মার্চ উভয় পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে আমার কার্যালয়ে তলব করা হয়েছিলো। প্রথমবার বিবাদীরা কোন কাগজপত্র হাজির করতে না পারলেও পরবর্তীতে আংশিক কাগজপত্র জমা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আগামি ২/৩ দিনের মধ্যে আমিসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্য ঘটনা উদঘাটন করেই আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।
 


শুয়াগ্রাম থেকে ফিরে খোকন আহম্মেদ হীরা, গৌরনদী ডট কম