বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় দু’কিশোরীকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা

প্রত্যাখান করায় বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার মোহনকাঠী গ্রামের দু’কিশোরী বোনকে দিয়ে ওই সমাজপতিরা থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করিয়েছে বলে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। উল্টো সমাজপতিরা কথিত সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে আসামি ও তাদের বাড়ির নিরিহ লোকজনদের সমাজচুত্য করারও ঘোষনা দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আসামি পক্ষের বাড়ির এক যুবকের মায়ের পারলৌকিক ক্রীয়া অনুষ্ঠানে সমাজের বাক্ষ্মনকে আসতে বাঁধা দিয়েছে সমাজপতিরা। এ নিয়ে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে মোহনকাঠী গ্রামের দিনমজুর সুরেশ রায়ের কন্যা ঢাকায় গামেন্টেসে কর্মরত কনিকা রায় (১৫) ও নমিতা রায় (১৪) পাশ্ববর্তী নাঘার গ্রামে বাসন্তি পূজার অনুষ্ঠানে উপভোগ করতে যায়। ওইদিন রাত দুইটার দিকে একই গ্রামের ভব রঞ্জন হালদারের পুত্র মনমথ হালদার (২০) ও খগেন হালদারের পুত্র পরিমল হালদার (১৭) পূজার অনুষ্ঠান দেখে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে তালের বাজার নামকস্থানে বসে কনিকা ও নমিতার সাথে তাদের দেখা হয়। এসময় মনমথ ও পরিমলকে ওই দু’বোনকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য তারা (দু’বোন) অনুরোধ করেন। তাদেরকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য মনমথ ও পরিমল রাস্তা দিয়ে আসার সময় তালের বাজার এলাকার দু’যুবক গভীর রাতে মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার অপরাধে তাদের আটক করে। এনিয়ে সারারাত চলে নানা ষড়যন্ত্র। পরেরদিন ভোরে মোহনকাঠী গ্রামের ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশ উভয়কে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য গ্রাম্য মোড়ল সরবিন্দু ওরফে কুশাই বৈরাগীসহ স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি শুক্রবার কথিত গ্রাম্য সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কিশোরী দু’বোনকে মনমথ ও পরিমলকে বিয়ে করতে হবে। এ রায়কে মনমথ ও পরিমলের অভিভাবকরা মেনে না নেয়ায় কতিপয় সালিশদ্বাররা ঘটনার চারদিন পর দু’ কিশোরী বোনকে দিয়ে (রবিবার) আগৈলঝাড়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করায়। মামলার পর থেকে পুলিশের গ্রেফতার আতংকে মনমথ ও পরিমল এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলার বাদি ওই দু’ কিশোরীর পিতা সুরেশ রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা ও ঘটনা সম্পর্কে কোন সদূত্তর দিতে পারেননি। তারস্থলে ঘটনার বিবরনী খুলে বলেন সালিশদ্বার সরবিন্দু ওরফে কুশাই বৈরাগী। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একটি কু-চক্রি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরবিন্দু ওরফে কুশাই বৈরাগী মোহনকাঠী উত্তরপাড়া সার্বজননী কালী মন্দিরের সভাপতি থাকাকালীন মন্দিরের অর্থ ও মন্দির আঙ্গীনার গাছ আত্মসাতের ঘটনায় মনমথ হালদার, পরিমল হালদার ও তাদের বাড়ির অন্যান্য লোকজনদের সাথে সরবিন্দুর বিরোধ দেখা দেয়। ওই বিরোধের কারনেই চলতি বছর ওই মন্দিরে কালী পূজা হয়নি। পূর্ব শত্রুতার জেরধরেই সরবিন্দু বৈরাগী তার কতিপয় সহযোগী নিয়ে এ ধর্ষণের নাটক সাজিয়েছে থানায় মামলা দায়ের করিয়েছেন বলেও স্থানীয় শ্রীকান্ত হালদারসহ একাধিক ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন। তারা আরো অভিযোগ করেন, কতিথ সালিশ বৈঠকে ফতোয়াজারি করে হালদার বাড়ির লোকজনদের একঘোরে করে রাখার ঘোষনা দেয়া হয়। যার ফলে গত ১৭ এপ্রিল ওইবাড়ির দিনমজুর নিমাই হালদার তার মায়ের পরলৌকিক ক্রীয়ার মন্ত্রপাঠ নিতে পারেননি। নিমাই জানান, তাদের সমাজের ব্রাক্ষ্মন কেশব ঠাকুরকে মন্ত্রপাঠ করতে না আসার জন্য সরবিন্দু বৈরাগী ও তার লোকজনে নানাধরনের হুমকি দিয়েছে। যে কারনে তিনি (কেশব ঠাকুর) মন্ত্রপাঠ করতে আসেননি। হালদার বাড়ির খেটে খাওয়া নিরিহ মানুষগুলো সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মিথ্যে ধর্ষণ মামলা থেকে মনমথ ও পরিমলকে অব্যাহতি দেয়া ও শালিশবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত সমাজপতি সরবিন্দু ওরফে কুশাই বৈরাগীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সমাজের লোকজনে সালিশ বৈঠক করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমি তার সাথে একমত পোষন করেছি মাত্র।