কালকিনিতে গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা ব্যহৃত

সম্প্রতি চিকিৎসকদের নিজ কর্মস্থলে নিয়োজিত থাকার নির্দেশ দিলেও যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় মাদারীপুরের কলকিনিতে উপেক্ষিত হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ইউপি স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্রে চিকিৎসক না পাঠিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে রেখে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ১১টি ইউপি স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্রে নিয়োগ দেয়া থাকলেও চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য চিকিৎসকরা কর্মরত না থাকায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কতিপয় চিকিৎসক কর্মস্থলে না থেকেও বেতন-ভাতাদি তুলে নিচ্ছেন মাসের পর মাস। বিভিন্ন বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার প্রতিবেদন পাঠালেও প্রতিকার মিলছেনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪টি, ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্র এবং ২৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে যার মধ্যে মাত্র ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। নবগ্রাম ও চরদৌলত খাঁ ইউনিয়ন ও কালকিনি পৌরসভায় কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক নাই। ডাসার, গোপালপুর, চরদৌলত খাঁ, কয়ারিয়া, রমজানপুর, সাহেবরামপুর ও লক্ষীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নাই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ও ১৫বছর ধরে নৈশ প্রহরীর ২টি পদ খালি রয়েছে। ১০বছর যাবৎ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে জেনারেটর মেশিন। এক্সরে মেশিনটি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে বাক্স বন্দি অবস্থায়। ২০০৭সালের অক্টোবর মাস থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখার পরিপ্রেক্ষিতে মেরামত করলেও ২/৩দিন পরেই আবার নষ্ট হয়ে যায়। এক্সরে মেশিনটি বর্তমানে কোনো কাজেই আসছে না। ইউসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও অপারেশন থিয়েটার নাই। তবে নতুন ভবনে ৩টি অপারেশন থিয়েটার নির্মাণ করা হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার ডাসার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. রুহুল আমিন মোল্লা, গোপালপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. সায়েমা আফরোজ, সাহেবরামপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. আফসানা রহমান, খাসের হাট উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রশান্ত বারিকদার, এনায়েত নগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্রে ডা. মাহাবুব আবীর, কালকিনি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্রে ডা. শামীমা ইয়াসমিন, নবগ্রাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্রে ডা. ছন্দা মজুমদার, কাজী বাকাই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্রে ডা. অপূর্ব মল্লিক ও আলী নগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্রে ডা. শেখ শহিদুল ইসলাম কাগজে-কলমে নিয়োজিত রয়েছেন। এলাকাবাসী তাদের কাছ থেকে কোন দিন কোন সেবা পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্মস্থলে না থেকেও বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত থেকে একাধিক চিকিৎসক বেতন-ভাতাদি তুলে নিচ্ছেন ঠিকমতই। ডা. রুহুল আমিন মোল্লা, ডা. আফসানা রহমান ও ডা. ছন্দা মজুমদার কোনো দিনই কর্মস্থলে যান নি। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহে দু’এক দিন রোগী দেখে থাকেন। ডা. মাহাবুব আবীর ও ডা. শামীমা ইয়াসমিন স্বামী-স্ত্রী হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একই কক্ষে বসে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। ডা. সায়েমা আফরোজ, ডা. প্রশান্ত বারিকদার, ডা. অপূর্ব মল্লিক ও ডা. শেখ শহিদুল ইসলাম কখনোই কর্মস্থলে যাননি। তারা যোগদানের পর থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০/১২দিন সরেজমিনে এ প্রতিবেদক গেলে শুধুমাত্র ডা. মশিউর রহমান, ডা. মাহাবুব আবীর, ডা. প্রশান্ত বারিকদার. শামীমা ইয়াসমিনকে পাওয়া যায়। উপস্বাস্থ্য ও ইউপি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে না যেতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডা.মাহাবুব আবীর ও প্রশান্ত বারিকদার জানান, ‘সরকার আমাাদের যেখানে নিয়োগ দিয়েছে সেখানে আমরা কাজ করতে আগ্রহী কিন্তু সেরকম কোন পরিবেশ তো সেখানে নাই। বসার মত একটি টেবিলও নাই। আমরা মিটিংয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি বসার মত পরিবেশ তৈরী করে দিলে অবশ্যই সেখানে আমরা যাব’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, ‘সরকার আমাকে যেখানেই নিয়োগ দিয়েছে তারপরও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত ডিউটি (চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত) করছি। কিছু চিকিৎসক কোন জায়গায়ই ডিউটি করছে না, আপনারা তাদের বিরুদ্ধে লিখেন’। উপজেলায় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান কার্যক্রম চললেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে নিরব ভূমিকায় রয়েছে। যেসব চিকিৎসকরা কর্মস্থলেও নিয়োজিত না থেকেও মাসের পর মাস বেতন-ভাতাদি নিচ্ছেন, তাঁরা বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতিমাসে ৩হাজার টাকা করে দিয়ে থাকেন বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান এ প্রতিবেদক বলেন, ‘উপস্বাস্থ্য ও ইউপি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মনিটরিং করার দায়িত্ব আমার হলেও কিছু করার নেই । ঐ স্বাস্থ্য কেন্দ্রেগুলোতে আসবাবপত্র বলতেও কিছু নেই। তাই চিকিৎসকরা এখানে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) চিকিৎসা দিচ্ছে। বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে আমরা উপর মহলে প্রতিবেদন পাঠালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না’।

তিনি অনুযোগের সাথে আরো বলেন, ‘নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা কর্মরত না থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বারবার অভিযোগ পাঠালেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না’।