ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী, আওয়ামী পৃথিবী-ওয়াচডগ

দূরে তা মাপতে বোধহয় যন্ত্রপাতির দরকার হবেনা। চোখ কান খোলা রেখে ৩৬০ ডিগ্রী পরিধিতে তাকালে এর দূরত্ব ও নৈকট্য দুটোই অনুভব করা যাবে। অস্বাভাবিক রকম ভারী হয়ে গেছে এখানকার বাতাস। রাজনীতি ও অর্থনীতির পাশাপাশি সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থার প্রতি ধাপে এখানে রাজত্ব করছে সীমাহীন অবক্ষয় আর নজিরবিহীন হতাশা। সরকার বলতে কেউ একজন আছে তার উপস্থিতি টের পাওয়া যায় কেবল কথায়। কথার সিফিলিসে আক্রান্ত রাজনীতির প্রভাব এখন দেশের শাসন ও বিচার ব্যবস্থায়।

‘তিনে একে তিন, তিন দ্বিগুণে ছয়, ছয় দ্বিগুণে বার‘, ছোটবেলায় উচ্চস্বরে নামতা পড়ার মত ওরা সবাই নামতা পড়ছে মুক্তিযুদ্ধ, ঘোষক আর পিতার নামে। দেশপ্রেম নামক শূন্য কলসের অর্কেস্ট্রা দিয়েও কিন্তু ঢেকে রাখা যাচ্ছে না সামাজের আসল চেহারা। এরই মধ্যে পশু নিধনের মত লাশ টুকরা নিয়ে শুরু হয়েছে বন্য প্রতিযোগিতা। দু টুকরা হতে সংখ্যাটা এরই মধ্যে দশ অতিক্রম করে গেছে। মৃত লাশকে টুকরা করা হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে , লেনাদেনার কারণে, প্রেমের কারণে, সামান্য মোবাইল ফোনের কারণে। খবরে জানা গেল মেডিক্যাল কলেজের দুই হবু ডাক্তার তাদের বন্ধুকে টুকরা করে মাটিতে পুতে রেখে তার উপর কঁচুগাছ লাগিয়ে দিয়েছে। দুদিন আগে লঞ্চ ডুবে লাশ হল কয়েক ডজন।

যে শান্তিচুক্তির জন্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কথা সে ’শান্তির’ রাজ্যই এখন মৃতপুরী। এখানেও লাশ পরছে, পাশাপাশি রাজত্ব করছে ভয়, ভীতি আর সন্ত্রাস নামক নোবেলিয় বিভীষিকা। ব্যর্থ রাষ্ট্রের সংজ্ঞা বলতে কোন কিছুর অস্থিত্ব আছে কিনা জানিনা, তবে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে সমসাময়িক বাংলাদেশ হতে পারে এর নিকৃষ্টতম উদাহরণ।

মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রবক্তা খোদ মার্কিন মুলুকেও অর্থনীতি ততটা নিয়ন্ত্রণহীন নয় যতটা এক নেতার এক দেশ বাংলাদেশে। সরকারীভাবে বলা হচ্ছে এ দেশে অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক ও চালিকাশক্তি সর্বদলীয় সিন্ডিকেট। দেশের শেয়ার বাজার হতে এই সিন্ডিকেটের দল লুটে নিয়েছে বিশাল অংকের টাকা। তদন্তে ধরা পরলেও এদের নাম উচ্চারণ করতে বাধা, কারণ এরা আমাদের জামাই। দুর্দিনে এই জামাইদের পকেটের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয় ক্ষমতার সিঁড়ি পাকা করার চুন সুরকির জন্যে। দুদিন আগে সরকার প্রধান সদম্ভে ঘোষনা দিলেন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হলে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার। তিন দিকে ভারত আর একদিকে বঙ্গোপসাগরের বিশাল ঢেউ ডিঙ্গিয়ে তৃতীয় কোন দেশ অথবা শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করতে আসবে কিনা তা সরকার প্রধানই বলতে পারবেন, তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাদে অন্য দলের ক্ষমতায়নের অর্থ যদি স্বাধীনতা বিপন্ন হয় তা হলে সরকার প্রধানের কঠোর হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

বাংলাদেশের কোটি কোটি খেটে খাওয়া মানুষের জন্যে স্বাধীনতার মানে শুধু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পাঠিয়ে শেখ নামের পূজা করা নয়, বরং অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যু নিশ্চিত করা। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল চরমভাবে ব্যর্থ এবং স্বাভাবিকভাবেই এর মূল্য গুনতে হবে সামনের নির্বাচনে। রুটি-হালুয়ার উচ্ছিষ্ট ছিটিয়ে কিছু মানুষকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা গেলেও গোটা জাতিকে দাস বানানো যায়না, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।

সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতেও নাকি অলিখিত পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসের কারণে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের সাথে সর্ম্পকের অবনতি হয়েছে এটা কোন লুকোচুরির বিষয় নয়। কদিন আগে মার্কিন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি কোন রাখঢাক না করেই এর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এর বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। বলা হচ্ছে পরাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনিকে যুক্তরাষ্ট্রর ভিসা দেয়া হয়নি একই কারণে। খোদ প্রধানমন্ত্রীরও এ মাসে ঐ দেশে যাওয়া কথা ছিল, কিন্তু তাতেও দেখা দিয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। প্রধানমন্ত্রী রাগে ক্ষোভে রাষ্ট্রদূত সহ মার্কিন দেশের যে কোন প্রতিনিধির সাথে অসহযোগিতামূলক মনোভাব দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নিচ্ছে শত্রুর শত্রু আমার মিত্র এ পলিসি মাথায় রেখে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আজকের দুনিয়ায় রাশিয়া ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার বৈ অন্যকিছু নয়। শেখ মুজিবের স্বপ্ন সমাজতন্ত্র এখন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।

১৭ কোটি মানুষ নিয়ে আস্তাকুঁড়ের দিকে পা বাড়ালে পরিণতি কতটা ভয়াবহ হবে তা দেখার জন্যে আমাদের বোধহয় কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। ফজলুল হক আমিনীকে মাঠে ছেড়ে সরকার পশ্চিমা দুনিয়ায় যে ম্যাসেজ পাঠাতে চাচ্ছে তা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য, কারণ সরকারের অভ্যন্তর হতেই খবর পাচার হয়ে যাচ্ছে। দইয়ে ভেজাল দেখিয়ে একজন নোবেল বিজয়ীকে আদালতের কাঠগড়ায় দাড় করাচ্ছে আর মাওলানা আমিনী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে সদম্ভে রাজনীতির মাঠ গরম করছেন এর রহস্য বুঝতে বিদেশীদের এখন আর অসুবিধা হয়না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না গেলে দেশ মৌলবাদীদের আখড়ায় পরিনত হবে আমিনী ফ্যাক্টর দেখিয়ে বিদেশীদের কাবু করার এই নাটক দলটি ইতিপূর্বেও মঞ্চস্থ করেছিল, এ যাত্রার এর ফলাফল শূন্য। তথ্যপ্রবাহের যুগে বিদেশীদের ধোকা দেয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়, বাংলাদেশের চোর রাজনীতিবিদদের তা বুঝার সময় এসেছে। এক কথায় ছোট হয়ে আসছে ভাওতাবাজির দুনিয়া, আওয়ামী দুনিয়া।

লেখক: ওয়াচডগ-আমি বাংলাদেশী – www.AmiBangladeshi.orgGournadi.com