পিতৃ হত্যাকারী রেজাউল সিকদার গ্রেফতার

পদপ্রার্থী ও টরকী বন্দর বণিক সমিতির সাবেক কথিত সভাপতি সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল তৃতীয় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে গতকাল রবিবার গ্রেফতার হয়েছে।

বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদীর বহুল আলোচিত পিতৃ হত্যাকারী সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল তার তৃতীয় স্ত্রী নাহিদ বেগমকে ঢাকার বাসায় বসে হত্যা করে গতকাল রবিবার লাশ গুমের জন্য নিজের গাড়িতে লাশ নিয়ে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ লাশবাহী গাড়িসহ রেজাউলকে গ্রেফতার করে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় এ সংবাদ তার নিজ এলাকা গৌরনদীর টরকীতে ছড়িয়ে পরলে এলাকাবাসি বিস্তারিত ঘটনা জানার জন্য স্থানীয় সংবাদ কর্মীসহ থানা পুলিশের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম বলেন, মৌখিখভাবে বিষয়টি শুনেছি।

সূত্রমতে, এরপূর্বে রেজাউল সিকদার প্রকাশ্যে দিবালোকে তার পিতা সাবেক চেয়ারম্যান হাবুল সিকদারকে ছুড়িকাঘাত করে হত্যা করেছিলো। এছাড়াও গৌরনদী থানার সাবেক এস.আই সামসুদ্দিনকে থানার গেটে বসে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছিলো। রেজাউল সিকদারের বিরুদ্ধে এলাকায় বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। খুনি রেজাউলের গ্রেফতারে গতকাল রবিবার রাত সাড়ে এগারোটায় টরকীতে এলাকাবাসি আনন্দ মিছিল করেছে।- Gournadi.com


সমকাল থেকে নেয়া- লাশ বসে আছে গাড়িতে!

মাসুম মিজান/সাহাদাত হোসেন পরশ: উপরে ছবিটি দেখুন। এক তরুণী যেন সুখনিদ্রায় শায়িত। ঘুমিয়ে আছেন ঠিকই। তবে গৃহবধূ কামরুন নাহার নাদিয়ার এই ঘুম কোনো দিন ভাঙবে না। চিরনিদ্রায় শায়িত তিনি। রায়েরবাজারে নিজ বাসায় তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন স্বামী শফিক। হত্যাকাণ্ড চাপা দিতে তিনি ছায়াছবির মতো চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। তবে তার বর্ণিত গল্প অবিশ্বাস্য, কষ্টকল্পিত এবং সাজানো। শাহবাগ থানার পুলিশ শফিক ও তার ড্রাইভার রবিউলকে গ্রেফতার করেছে। নাদিয়ার দুই পা, হাত ও বুকে জমাটবাঁধা রক্ত ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের ধারণা, গৃহবধূ নাদিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রাত সাড়ে ১২টায় ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
শফিকের সাজানো গল্পটি এ রকম : রোববার তার স্ত্রী নাদিয়া বাথরুমে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। সকাল ১১টায় ড্রাইভার রবিউলকে দিয়ে স্ত্রীকে স্কয়ার হাসপাতালে পাঠান তিনি। ড্রাইভারকে বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা
তুলে তিনি হাসপাতালে যাচ্ছেন। স্ত্রীর নিথর দেহ গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। ড্রাইভার স্কয়ার হাসপাতালে যেতে যেতে বারডেমের কাছে এসে লক্ষ্য করেন, ম্যাডামের সাড়াশব্দ নেই। এ কথা জানালে শফিকের কথামতো ড্রাইভার দিলকুশা এলে শফিক জানান, তোর ভাবী মারা গেছে। অতঃপর সিটে লাশ বসানো অবস্থায় তারা বরিশালের উদ্দেশে মাওয়া ঘাট দিয়ে রওনা হন। সেখানে যেতে যেতে ড্রাইভার বুঝতে পারে ম্যাডামের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ নিয়ে সে বরিশাল যেতে অস্বীকৃতি জানায় ও ম্যাডামের ভাই সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মালিককে পরামর্শ দেয়। এরপর তারা ঢাকা ফিরে আসে। শফিক নাদিরার ভাই সুজনকে সড়ক ভবনের সামনে আসতে বলেন। পুরো ঘটনা শুনে সুজনের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। তিনি পুলিশ নিয়ে সড়ক ভবনের সামনে যান। পুলিশ শফিক ও ড্রাইভারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সুজন সমকালকে বলেছেন, শফিক তার বোনকে হত্যা করেছে।
স্ত্রী নাদিয়ার অসুস্থতার কথা, তার মৃত্যু এবং লাশ নিয়ে দাফনের জন্য বরিশালে নিয়ে যাওয়া একেবারে ছেলে ভোলানো গল্প বলে মনে করে নাদিয়ার পরিবার। তাদের প্রশ্ন, 'অজ্ঞান' স্ত্রীকে শুধু ড্রাইভার দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হলো কেন? কেন তাদের খবর দেওয়া হলো না? কেউ লাশ গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে যায় না। গোসল শেষে লাশ খাটিয়ায় করে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার রীতি। এক্ষেত্রে এসব কিছুই করা হয়নি। নাদিয়ার পরিবার থেকে সমকালকে জানানো হয়েছে, শনিবার থেকে বারবার চেষ্টা করেও শফিক ও নাদিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
শফিকের বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে আর নাদিয়ার গ্রামের বাড়ি বরিশালের কাউনিয়ায়। নাদিয়া শফিকের তৃতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী সুমনা। ২০০৩ সালে তাকে তালাক দেন শফিক। ২০০৫ সালে বিয়ে করেন বরিশালের মেয়ে সুজনাকে। এ ঘরে একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
২০১০ সালের অক্টোবর মাসে প্রেম করে নাদিয়াকে বিয়ে করেন শফিকুর। বিয়ের পরপরই নাদিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, এর আগে শফিক দুটি বিয়ে করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের দাম্পত্য কলহ তৈরি হয়। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছিলেন নাদিয়া-শফিক। শফিক পদ্মা অয়েল কোম্পানির বরিশাল বিভাগের পরিবেশক। নাদিয়ার বাবার নাম অ্যাডভোকেট সিরাজ উদ্দিন। তারা দুই ভাই এক বোন। তবে বাবা-মা ও বড় ভাই মারা গেছেন। এরপর তিনি ছোট ভাই শাহরিয়ারের কাছেই থাকতেন। পারিবারিক সূত্র আরও জানায়, নাদিয়া ও শফিক স্থায়ীভাবে বরিশাল থাকলেও ক্লাস করার জন্য প্রতি বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসতেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও তারা ঢাকায় এসে ভাই শাহরিয়ারের বাসাবোর বাসায় ওঠেন। ওই দিন তারা শফিকের রায়েরবাজারের বাসায় চলে যান।
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম সমকালকে জানান, পরিবারের কাছে খবর পেয়ে শফিক ও তার গাড়িচালক রবিউলকে সড়ক ভবনের কাছ থেকে আটক করা হয়। গাড়ির ভেতর থেকেই নাদিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। নাদিয়ার শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও এটি হত্যা-না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত করতে লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওসি আরও জানান, ঘটনাস্থল হাজারীবাগ থানাধীন হওয়ায় আটক শফিক ও চালক রবিউলকে রাত সোয়া ১২টার দিকে হাজারীবাগ থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাত সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাজারীবাগ থানায় কোনো মামলা হয়নি।
গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম গতকাল রাত ১টায় টেলিফোনে সমকালকে জানান, শফিকুর রহমানের নামে বিস্ফোরক আইনে চারটি মামলা রয়েছে। এলাকায় তিনি রেজাউল শিকদার নামে পরিচিত। শফিকুর তার বাবা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। তবে পরে ওই মামলা থেকে তিনি রেহাই পান।

ছবি কৃতজ্ঞতা: সমকাল ডট কম