খুলনার সিকদারের ন্যায় চলতো খুনী রেজাউল সিকদারের কর্মকান্ড

তার অত্যাচার, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সর্বদা অতিষ্ঠছিলো বরিশালের গৌরনদীবাসী। ছাত্রদলের হাতে খড়ি নিয়ে রাজনৈতিক জীবনে পা রাখেন আলোচিত সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল। আইনকে বৃদ্ধাঅঙ্গুলী দেখিয়ে তার সকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হালাল করে নিয়েছেন তার বড় ভাই সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা (মেজর)। খুলনার এরশাদ সিকদারের টর্চার সেলছিলো স্বর্ণকমল। আর খুনী রেজাউলের টর্চার সেলছিলো টরকী বন্দরের “সিকদার ভিলা”। চতুর্থ স্ত্রী হত্যার দায়ে খুনী রেজাউল সিকদার ঢাকায় গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন রেজাউল ও তার বাহিনীর হাতে নির্যাতিতরা। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও লিগ্যাল এইডের বরিশাল জেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা খুনী রেজাউলের টরকী বন্দরের সিকদার ভিলা, বরিশালের শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেনের বাসা ও নিহত হতভাগ্য কামরুন নাহার নাদিরার কাউনিয়ার বাসা পরিদর্শন করেছেন। এসময় নেতৃবৃন্দরা খুনী রেজাউলসহ নাদিরা হত্যার সাথে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেন।

বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল ১৯৯১ সালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মনোনয়ন নিয়ে সরকারী গৌরনদী কলেজের ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। সেই থেকেই সন্ত্রাসের জগতে পা রাখেন রেজাউল। জি.এস নির্বাচিত হওয়ার পর পরই লম্পট রেজাউল ভালুকশী গ্রামের জনৈক এক মাষ্টারের কন্যা ও কলেজ ছাত্রীকে গৌরনদীর জনৈক ফজলুল হক সরদারের বাড়িতে আটক রেখে ধর্ষণ করে। কয়েকদিন পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছাত্র সংসদের মধ্যে বসে ধর্ষণের স্বীকার হয় চেংগুটিয়া গ্রামের জনৈক আরেক এক কলেজ ছাত্রী। এর কয়েকদিন পর বার্থী হাইস্কুলের জনৈক এক শিক্ষকের কন্যাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বছরের পর বছর ভোগ করে লম্পট রেজাউল। তার অর্পকমের বিরুদ্ধে তখন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

রেজাউল সিকদারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় : গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের রামসিদ্ধি গ্রামের হাবিবুর রহমান হাবুল সিকদার ও নুরজাহান বেগমের ৫ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের মধ্যে রেজাউল হচ্ছে তৃতীয়। হাবুল সিকদারের বড়পুত্র মিজানুর রহমান লন্ডন প্রবাসী, মেঝপুত্র আনিসুর রহমান সিকদার সেনাবাহিনীর মেজর, সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল সন্ত্রাসী, আতিকুর রহমান জুয়েল ফরিদপুরের কাশিয়ানী উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার, ছোট পুত্র সোহেল রানা ছাত্র ও কন্যা চন্দনা বেগমকে ছয়গ্রাম এলাকায় বিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে সে বিধবা।  ১৯৭৫ সালে হাবুল সিকদার বার্থী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালে তিনি (হাবুল সিকদার) টরকী বন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শিশির কুন্ডের ছোট বোন লিনাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। লিনার সংসারে ১ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তান রয়েছে। সন্ত্রাসী রেজাউলের অব্যাহত হুমকির মুখে দীর্ঘদিন থেকে সন্তানদের নিয়ে তিনি (লিনা রহমান) বরিশাল শহরে বসবাস করে আসছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা : টরকী বন্দরের ব্যবসায়ী ও হাবুল সিকদারের খুনের প্রত্যক্ষদর্শী ফিরোজ মিয়া ও হেমায়েত হোসেন ওরফে হিমু কাজী জানান, ২০০৩ সালের ১ এপ্রিল হাবুল সিকদার লিনা রহমানের নামে বেশ কিছু সম্পত্তি ও টরকী বন্দরের কয়েকটি ভিটি (দোকান ঘর) লিখে দেন। এ কারনে হাবুল সিকদারের সাথে সন্ত্রাসী রেজাউলের ওইদিন দুপুরে বন্দরের ফিরোজ মিয়ার কাপরের দোকানে বসে বাকবিতন্ডার হয়।  একপর্যায়ে রেজাউল তার কোমরে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে পিতা হাবুল সিকদারকে উপর্যুপুরী কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। দীর্ঘ ৮ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ এপ্রিল ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে হাবুল সিকদার মারা যায়। সে সময় টরকী বন্দরের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে বন্দরের দোকানপাট বন্ধ রেখে পিতৃ হত্যাকারী খুনী রেজাউলের ফাঁসির দাবিতে হরতালের আহবান করা হয়েচিলো। ওইসময় খুনী রেজাউল ও তার ক্যাডারদের হুমকির মুখে ব্যবসায়ীরা হরতাল প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। তারা আরো জানান, নিহত হাবুল সিকদারের শেষ ইচ্ছে ছিলো তার মৃত্যুর পর যেন তার লাশ রামসিদ্ধি গ্রামের পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারনে নিহত হাবুল সিকদারকে ঢাকার বনানী (সামরিক) কবরস্তানে দাফন করা হয়েছিলো। আলোচিত এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত হাবুল সিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী লিনা রহমান বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা দায়ের পর ওই বছরের ২৯ এপ্রিল ঢাকার সিএমএম আদালতের প্রথম শ্রেনীর ম্যজিষ্ট্রেট মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ও গৌরনদী থানার তৎকালীন ওসি মান্নান সরকারের নেতৃত্বে বনানীর গোরস্তান থেকে ময়না তদন্তের জন্য হাবুল সিকদারের লাশ উত্তোলন করা হয়েছিলো। টরকী বন্দরের ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ জানান, সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদারের বড়ভাই সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় রহস্যজনক কারনে আলোচিত হাবুল সিকদারের হত্যা মামলাটি নিস্ফতি হয়ে যায়। পিতৃ হত্যার মামলা থেকে রেহাই পেয়ে রেজাউল আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

বিয়ে সমাচার : ব্যবসায়ী কে.এম জুয়েল জানান, ২০০৪ সালে রেজাউল গাজীপুর এলাকার শামচুন নাহার পাপরী নামের এক যুবতীকে বিয়ে করেন। সেখানে বাবু সিকদার নামের ৫ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ২০০৬ সালে রেজাউল গৌরনদীর পাশ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া গ্রামের খালেক হাওলাদারের প্রথম কন্যা সূর্বনা আক্তারকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ২০০৯ সালে সূর্বনার ছোট বোন (রেজাউলের শ্যালিকা) স্কুল ছাত্রী সুজিতা আক্তারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোড়পূর্বক রেজাউল তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে। ওইসময় এলাকাবাসি সন্ত্রাসী রেজাউল ও তার সহযোগীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে গ্রামবাসীর সাথে রেজাউল বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় গ্র“পের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছিলো। ওই ঘটনায় পুলিশ রেজাউলসহ তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাপ্পী সরদারকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেফতার করেছিলো। সর্বশেষ ঢাকায় বসবাসের সুবাধে রেজাউলের সাথে পরিচয় হয় বনানী ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি কলেজের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও বরিশালের কাউনিয়া এলাকার ধনার্ঢ্য ব্যক্তি মরহুম এডভোকেট রিয়াজ উদ্দিনের কন্যা কামরুন নাহার নাদিরার সাথে। পরিচয়ের সূত্রধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রেজাউল তার পূর্বের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে গত ছয়মাস পূর্বে নাদিরাকে চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তারা রায়েরবাজারের ৯১ হাতেমবাগের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। এরইমধ্যে নাদিরা দু’মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পরেন। বিয়ের পর থেকেই নাদিরার পিতার অঢেল সম্পত্তির ওপর রেজাউলের লোলুপ দৃষ্টি পরে। গত একমাস পূর্বে রেজাউল তার সহযোগীদের নিয়ে নাদিরার পিতার কাউনিয়া এলাকার একটি বিশাল পুকুর দখল করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে নাদিরার সাথে রেজাউলের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ ঘটনার জেরধরে গত রবিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা বাঁধে। একপর্যায়ে রেজাউল তাকে (নাদিরাকে) অমানুষিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের একপর্যায় নাদিরা জ্ঞানশূণ্য হয়ে পরে। পরবর্তীতে নাদিরাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে ঘাতক রেজাউল। নিহত নাদিরার লাশগুমের জন্য ওইদিন রাতে রেজাউল তার নিজস্ব প্রাইভেটকারযোগে গৌরনদীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শাহবাগ থানা পুলিশ ওইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে লাশবাহী প্রাইভেটকারসহ ঘাতক রেজাউল, চালক গৌরনদীর কটকস্থল গ্রামের আদার আলী আকনের পুত্র রবিউল আকনকে গ্রেফতার করে। গতকাল মঙ্গলবার রিমান্ডে রেজাউলের স্বীকারোক্তি মতে, ভাড়াটিয়া বাসা থেকে পুলিশ আঘাতের আলাতমসহ গত মাসে এক কলগার্লকে (তরুনিকে) নিয়ে থাইল্যান্ড গমনের দুটি পাসর্পোট উদ্ধার করেছে।

চাঁদাবাজির প্রতিবাদ : রেজাউলের চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদার হত্যার উদ্দেশ্যে টরকী বন্দর বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ও গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু আহম্মেদ হারুনের ওপর বোমা হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করেছিল। ওই ঘটনায় রেজাউলসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছিল। এছাড়া তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও বেপরোয়া চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী রেজাউল তার বাহিনীর ক্যাডারদের নিয়ে হামলা চালিয়ে আহত করেছিলো টরকী বনিক সমিতির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান শরীফ, গৌরনদী উপজেলা বিএনপিন সাধারন সম্পাদক ও বনিক সমিতির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন মিয়া, টরকী বন্দরের কিংডম কম্পিউটার সেন্টারের স্বত্তাধীকারি রুহুল আমিন হাওলাদার, ব্যবসায়ী তাপস সমাদ্দারসহ অসংখ্য ব্যাবসায়ীকে। তার রোষানল থেকে রেহাই পায়নি টরকী বন্দর ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনও। ২০০৯ সালের ২৭ জুন ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করে রেজাউল ও তার সহযোগী আলমগীর শিকদার দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করে সিসি লোনের জমাকৃত জমির দলিল ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ওইদিনই ম্যানেজার বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। সন্ত্রাসী রেজাউলের বাহিনীর ক্যাডার দস্যুতা মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামি সোহেল সরদারকে ২০০৯ সালে গৌরনদী থানার এস.আই সামসুদ্দিন টরকী বাসষ্ঠ্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে। এ অপরাধে থানার গেটে বসে দারোগা সামসুদ্দিনকে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলিকরে হত্যার হুমকি দিয়ে ক্যাডার সোহেলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী রেজাউল ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় পুলিশ রেজাউল বাহিনীর প্রধান রেজাউল সিকদার ও তার সহযোগী ক্যাডার বাপ্পী সরদার, সোলায়মান হাওলাদার, সোহেল, ইমন, আনিচ, মঈন, ইমরান, সোহেল সরদার, আল মাদানী, কসাই মিরাজ, রনি ও আনিচের নাম উল্লেখ করে গৌরনদী থানায় একটি সাধারন ডায়েরীও করেছিলেন।

টর্চার সেলের কাহিনী : স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠিতব্য গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রেজাউল প্রতিদ্বন্ধীতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। সে সময় তার টর্চার সেল “সিকদার ভিলায়” বিভিন্ন ইউনিয়নের নারীদের জন্য রেষ্ট হাউজ খুলে রাতভর রেজাউল ও তার ক্যাডাররা ওইসব নারীদের সম্ভ্রব্যহানি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টর্চার সেলের নির্যাতনের স্বীকার উপজেলার বাগিশেরপাড় গ্রামের দিনমজুর ছাদের আলী বেপারী, ডুমুরিয়া গ্রামের আতাউর রহমান হাওলাদার, বার্থী গ্রামের বাবুল চৌধুরীসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, সন্ত্রাসী রেজাউলের নির্বাচন না করায় তার ক্যাডারদের দিয়ে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় টর্চার সেল “সিকদার ভিলায়”। সেখানে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোড়পূর্বক উল্লেখিত তিনজনের সহয় সম্পত্তি নিজের নামে রেজিষ্টি করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী রেজাউল।  

বেপরোয়া চাঁদবাজি : ২০০৯ সালে পালরদী নদীর ডেজ্রিংয়ের সময় মালিকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে টরকী এলাকার পুকুর, ডোবা ও মাঠ জোড়পূর্বক ভরাট করে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজি করে উত্তোলন করে নিয়েছে সন্ত্রাসী রেজাউল ও তার ক্যাডাররা। সর্বশেষ অনুষ্টিতব্য পৌর নির্বাচনের দিন বিশৃংখলা সৃষ্টির লক্ষে সন্ত্রাসী রেজাউল টরকী ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে বসে নিজহাতে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ও গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানকে শারিরিক ভাবে নির্যাতন করে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে টরকী বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী, আওয়ামীলীগ ও বিএনপির স্থানীয় একাধিক র্শীর্ষ নেতারা জানান, সন্ত্রাসী রেজাউলের টরকী বন্দরের বাসাটিকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তার সকল অপকর্মকে সবাই মুখ বুঝে সহ্য করে যেতো। সন্ত্রাসী রেজাউল ও তার ক্যাডারদের ভয়ে কখনো কেহ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
 

চাঞ্চল্যকর তথ্য : বড় ভাই সেনাবাহিনীর মেজরের প্রভাব খাটিয়ে যে রেজাউলের উত্থান একটি পর্যায়ে বড় ভাইসহ অন্যান্য ভাইয়েরা রেজাউলের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বাঁধা দেয়ায় তাদেরকেও হত্যার হুমকি দেয় সন্ত্রাসী রেজাউল। যে কারনে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি রেজাউলের সহদর লন্ডন প্রবাসী মিজানুর রহমান, সেনা কমকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান সিকদার, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান জুয়েল সিকদার ও চাচা আলমগীর সিকদার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গৌরনদী থানায় পৃথক ভাবে চারটি জিডি করেছিলেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভাই রেজাউলের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারনেই তার ভাই মেজর থেকে আর পদন্নতি পায়নি।
 

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বক্তব্য : গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও লিগ্যাল এইডের বরিশাল জেলা শাখার সভানেত্রী বেগম রাবেয়া খাতুন, সম্পাদক নুর জাহান বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক মলিনা মন্ডল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পুস্প রানী চক্রবর্তী, লিগ্যাল এইডের জেলা শাখার সম্পাদিকা প্রতিমা সরকারের নেতৃত্বে একদল নারী নেত্রীরা খুনী রেজাউলের টরকী বন্দরের সিকদার ভিলা, বরিশালের শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেনের লিনা রহমানের বাসা ও নিহত হতভাগ্য কামরুন নাহার নাদিরার কাউনিয়ার বাসা পরিদর্শন করেছেন। এসময় নেতৃবৃন্দরা খুনী রেজাউলসহ নাদিরা হত্যার সাথে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেন। অপরদিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির গৌরনদী উপজেলার সভাপতি ও উন্নয়ন প্রচেষ্ঠার নির্বাহী পরিচালক এইচ.এম শাহজাহান কবীর বলেন, চতুর্থ স্ত্রীকে হত্যার ঘটনার মূলহোতা ঘাতক স্বামী রেজাউলের ফাঁসির দাবিতে আগামি ২/১ দিনের মধ্যেই আমরা কঠোর কর্মসূচী ঘোষনা করবো।

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া : সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদারের গ্রেফতারের খবর তার নিজ এলাকায় ছড়িয়ে পরলে গত ২৪ এপ্রিল রাতে রেজাউলের ফাঁসির দাবিতে টরকী বন্দরে মিছিল বের করা হয়। এছাড়াও গত ২৫ এপ্রিল এলাকায় ব্যাপক মিষ্টি বিতরন ও শোকরানা মিলাদ পরানো হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এলাকার অসংখ্য ব্যক্তিদের অভিমত, পিতৃ হত্যার ন্যায় চতুর্থ স্ত্রীকে হত্যার পর এবারোকি সন্ত্রাসী রেজাউল আইনের ফাঁক ফোঁকর ডেঙ্গিয়ে পার পেয়ে যাবেন ? এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে এলাকাবাসির মধ্যে।    

পুলিশের বক্তব্য : সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল ও তার ক্যাডারদের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে গৌরনদী থানার চৌকস অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম বলেন, রেজাউল কৃর্তক তার পিতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া রেজাউল ও তার বাহিনীর ক্যাডারদের বিরুদ্ধে থানায় ৬টি মামলা ও অসংখ্য জিডি রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি গৌরনদী থানায় যোগদান করার পর পরই গ্রেফতার আতংকে সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেছে।